নিজস্ব প্রতিবেদক: শিক্ষা এমন একটি অদৃশ্য শক্তি যা কেউ চাইলেও কেড়ে নিতে পারে না। আর এই অদৃশ্য শক্তির প্রাাথমিক পর্ব হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হলে মানুষের মানবীয় গুণাবলির উৎকর্ষ সাধিত হয়, তার শিক্ষার ভিত্তি হয় মজবুত। তবে এই শক্তি কীভাবে প্রয়োগ করলে তা মানুষের জীবনকে বদলে দিতে পারে তা নিয়ে ভাববার মানুষ খুবই কম। তবে কেউনা কেউতো ভাবেই। আর আমাদের দেশে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন নিয়ে ভাববার দায়িত্বে থাকেন একজন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
একজন শিক্ষা কর্মকর্তার যোগ্য নেতৃত্বের বদৌলতে যেমন প্রাথমিক শিক্ষার ইতিবাচক পরিবর্তন সাধিত হয় আবার তার দুর্বল নেতৃত্বের কারণে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা স্তিমিতও হয়ে পড়ে। তবে অনেক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আছেন যারা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে রুটিন কাজের পাশাপাশি বিভিন্নমুখী উদ্যোগী কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। যে উদ্যাগগুলো মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। তেমনি একজন উদ্যোগী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হলেন নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার শামসুজ্জামান।
উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি নিরলসভাবে কাজ করছেন আড়াই বছর ধরে। যোগদানের তিন মাসের মধ্যেই তার কিছু উদ্ভাবনী উদ্যোগ সেখানকার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো সকল বিদ্যালয়ের লোকেশন বোর্ড বা দিক নির্দেশক সাইনবোর্ড স্থাপন। যার ফলে বিদ্যালয়গুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন, মনিটরিং কার্যক্রম সহজতর হয়েছে। সকল শিক্ষকগণের একই ড্রেস। মা-অভিভাবক সমাবেশ। বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্বারা চক্ষু পরীক্ষা, ওষুধ প্রদান ও বিনামূল্যে চশমা প্রদান। ছাত্র ছাত্রাদের পাশাপাশি শিক্ষকগণের শপথ করানো। এসব উদ্ভাবনী উদ্যোগে ফলও এসেছে আশানুরূপ। উল্লেখযোগ্য সফলতাগুলোর মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে সময়মত শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ঝড়ে পড়ার হার হ্রাস, শিক্ষার্থীদের সংখ্যাবৃদ্ধি, সমাপনী পরীক্ষায় পাশের হার বৃদ্ধি, শতভাগ পাশকৃত বিদ্যালয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি। যেখানেই তিনি কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্বপালন করেছেন তার উদ্ভাবনী কার্যকরী উদ্যোগগুলো প্রাথমিক শিক্ষার প্রভূত উন্নতি সাধিত করেছে।
শিশুদের পড়ার দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে দুর্বল শিশু সনাক্ত করা। পাশাপাশি শিশুর দুর্বলতা দূর করতে শিক্ষা অফিস কর্তৃক নিয়মিত ফলোআপ-পরিচালনায় পরিচালিত হয়েছে শিক্ষকভিত্তিক দুর্বল শিক্ষার্থী বণ্টন এবং পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে নিবিড় তত্ত্বাবধান কার্যক্রম। যার ফলে শিশুর পড়াদক্ষতা এবং ফলাফলে অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুণগত এ পরিবর্তন সাধন ইতোমধ্যে সব মহলের নজর কেড়েছেন। এ উপজেলা প্রাথমিক অফিসার হিসেবে যোগদানের পর থেকেই এলাকার সুধীজন, অভিভাবক, শিক্ষক ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে গ্রহণ করেন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এর অংশ হিসেবে শিক্ষকদের মাসিক সভায় নিয়মিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তাদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করে তুলেছেন। তাছাড়া তিনি শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতেও দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি উপজেলায় বিভিন্ন সাব-ক্লাস্টারে আয়োজিত পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়ন ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্সে শিক্ষকদের পারদর্শিতা ও সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত মনিটরিং শুরু করেন।
এছাড়া তিনি আকস্মিক স্কুল পরিদর্শন করে ছাত্র-শিক্ষক উপস্থিতির হার পর্যবেক্ষণ ও আধুনিক শিক্ষা উপকরণ ব্যবহার করে যুগপযোগী পাঠদানের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলায় যোগদানের পর থেকে শিক্ষা অফিসারের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রাইমারি বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধকল্পে বিভিন্ন ইউনিয়নে উঠান বৈঠকের কার্যক্রম শুরু করেন। ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মাঝে আইসিটির দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য তিনি করেছেন কর্মশালার ব্যবস্থা। তিনি উপজেলায় যোগদানের পর থেকে নিয়মিত উপস্থিত নিশ্চিত করতে, ক্ষুদ্র মেরামত,স্লিপের কাজ শতভাগ বাস্তবায়ন করতে ও নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে ১২ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যাবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন। ওই শিক্ষকরা সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষা কর্মকর্তাকে হয়রানীর উদ্দেশ্য বানোয়াট ভিত্তিহীন অভিযোগ করছেন।
শিক্ষা অফিসার আবুল বাসার শামসুজ্জামান সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে প্রতি মাসে একদিন আয়োজন করেছেন মিট দ্য শিক্ষা অফিসার প্রোগ্রাম ও মা সমাবেশ। এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। এ আয়োজনে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা গ্রহণ ও সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
এছাড়াও ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের পঠন ও লিখন দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সুন্দর হাতের লেখার জন্য বিভিন্ন বিদ্যালয়ে তিনি দেয়ালিকা উদ্বোধন করেন এবং একাধিক স্কুলে বৃক্ষরোপণ করেন। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শন করে কোথায় কি সমস্যা আছে তা অবগত হয়ে সমাধানের চেষ্টা করেন এই শিক্ষা অফিসার।