যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সামরিক শক্তি ও কৌশলের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়া অতীতে হিটলার ও নেপোলিয়নকে পরাজিত করেছে এবং দেশটির সামরিক অবকাঠামো অত্যন্ত শক্তিশালী। পাশাপাশি, তিনি দাবি করেছেন যে পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান এবং এ বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই তার সঙ্গে বৈঠক করবেন।সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, ট্রাম্প এবং পুতিনের মধ্যে বৈঠকের প্রস্তুতি চলছে।
ইতোমধ্যে, সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই বৈঠক আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বৈঠকের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, (এই বৈঠকের জন্য) কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এটা খুব শিগগিরই হতে পারে।
বৈঠকটি এ মাসেই হবে কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে ট্রাম্প বলেন, খুব শিগগিরই হবে। দেখা যাক, কী হয়।’ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে তিনি আরও বলেন, পুতিন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।
তবে ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার বিষয়টি ইউক্রেন এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। ইউরোপীয় নেতাদের আশঙ্কা, ট্রাম্প ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হতে পারেন, যার ফলে ইউক্রেনের কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার হাতে চলে যেতে পারে এবং পুতিনের দাবিগুলো পূরণ হতে পারে।
রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ এবং দেশটিকে ‘নিরপেক্ষ’ রাখা। পুতিন স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করতে হবে এবং ইতোমধ্যে যে ২০ শতাংশ ভূখণ্ড রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে এসেছে, সেটির ওপর ইউক্রেনের দাবি ছাড়তে হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা আকার-ইঙ্গিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, উভয় দাবিতেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের সমর্থন থাকতে পারে। এর মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানিয়েছেন, প্রয়োজনে ব্রিটিশ সেনা মোতায়েনের জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। অন্যদিকে, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতারাও প্যারিসে জরুরি বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সৌদি আরবে রুশ-মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক, ইউরোপের নেতাদের তৎপরতা এবং ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা আন্তর্জাতিক রাজনীতির নতুন মোড় নিতে পারে। তবে আসল প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এই বৈঠকগুলো কি ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের ইঙ্গিত দিচ্ছে, নাকি ইউরোপ ও বিশ্ববাসীকে আরও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে?