ডা.এম.এ.মান্নান নাগরপুর(টাঙ্গাইল)সংবাদদাতা:
বৈষম্য মুক্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল গঠন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটিতে হোমিওপ্যাথদের অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষক-স্টাফদের শতভাগ বেতন এবং চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরী নিশ্চয়তার দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকার সামনে বৈষম্য বিরোধী হোমিও আন্দোলন বাংলাদেশ কর্তৃক অত্র সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মুন্সী মোজাম্মেল হক (প্রিন্সিপাল (অবঃ) এ-র সভাপতিত্বে ও সমন্বয়ক (সার্বিক) ডা.মুহাম্মদ লোকমান এর পরিচালনায় ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ মানবন্ধনে বৈষম্য বিরোধী হোমিও আন্দোলন এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দের মধ্যে- ডা.মোঃ হেলান উদ্দিন, মো.শাহরিয়ার ইরফানসহ ডা.মামুন হাসির ভূইয়া, ডা. জিয়াউল হক, ডা. মো. মিজানুর রহমান, ডা. গোলাম মেহেদী নরসিংদী, ডা.অলি উল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। অতিথি হিসেবে গনাধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম সোহাগ, গন অধিকার পরিষদের নেতা মোঃ তারেক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের ৬৪ জেলা থেকে আগত হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। বক্তারা এসময় বলেন-বৈষম্য মুক্ত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল গঠন, স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটিতে হোমিওপ্যাথদের অন্তর্ভুক্তি, শিক্ষক-স্টাফদের শতভাগ বেতন এবং চিকিৎসকদের উচ্চ শিক্ষা ও চাকুরীর নিশ্চয়তার দাবী জানান। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে এক জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এ মহান চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থাও দিনে দিনে বাড়ছে।কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে স্বার্থান্বেষী চক্রের দৌরাত্ম্য আর বিভিন্ন একপেশী সিদ্ধান্তের কারণে এ চিকিৎসা সেবায় সংকট সৃষ্টি হয়। সরকার পরিবর্তনের পরও অবস্থার উন্নতি হয়নি।
স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা খাতে উল্লেখযোগ্য বৈষম্য সমূহঃ এলোপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রাপ্ত সরকারী সুযোগ সুবিধাঃ- সরকারী মেডিকেল কলেজ ৩৭ টি, আসন ৫৩৮০ টি, বেসরকারী মেডিকেল কলেজ ৫৪ টি, আসন ৬৩৪৮ টি এবং আর্মি মেডিকেল কলেজ একটি, আসন ৩৭৫ টি, সবগুলোর সাথে সংযুক্ত হাসপাতাল, সদর, স্পেশালাইজড, উপজেলা, ইউনিয়ন ও কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক। সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসক ও সহযোগী কোর্সধারীরা চাকুরীরত।
আয়ুর্বেদ ও ইউনানীঃ- সরকারী মেডিকেল ডিগ্রী কলেজ ১ টি, আসন ৫০ টি। হামদর্দ বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারী ডিপ্লোমা পর্যায়ের কলেজ ও বেসরকারী ডিপ্লোমা কলেজ রয়েছে। সরকারী পর্যায়ে (আংশিক) নিয়োগ মেডিকেল অফিসার ১+১ মোট ২ জন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সরকারী হাসপাতাল।
ডিপ্লোমাদের সৃষ্ট পদ ৯০-৯০ মোট ১৮০ টি, নিয়োগ হয়নি একটিও। হোমিওপ্যাথিকঃ- সরকারী ও বেসরকারী ডিগ্রী কলেজ ১ টি করে মোট ২ টি, আসন সংখ্যা ১৫০ টি। কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সরকারী পর্যায়ে (আংশিক) নিয়োগ মেডিকেল অফিসার ১ জন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারী হাসপাতাল।
ডিএইচএমএস ডাক্তার সহকারী মেডিকেল অফিসার সুপারিশকৃত পদ ৯০ টি, নিয়োগ হয়নি একটিও। অনুমোদিত ডিপ্লোমা কলেজের সংখ্যা ৬৭টি। হোমিও চিকিৎসা শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে প্রধান সমস্যা ও সমাধানে করণীয়ঃ- ১) পতিত স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগীমুক্ত ডিগ্রী ও ডিপ্লোমাধারী নিরপেক্ষ ডাক্তারদের সমন্বয়ে নীতিমালার আলোকে অবিলম্বে ‘হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শিক্ষা কাউন্সিল গঠন করতে হবে।নিবন্ধিত চিকিৎসক ক্যাটাগরিতে অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও মহিলাদের মনোনয়ন করায় নিবন্ধিত চিকিৎসকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
তাদের পৃথক ক্যাটাগরী আছে বিধায় তাদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিবন্ধিত চিকিৎসকদের মনোনয়ন নিশ্চিত করা এবং জাতীয় স্বাস্থ্য সংস্কার কমিটিতে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করা। উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিতকরণঃ- ডিএইচএমএস ডাক্তারদের পূর্বের মত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে ২ বছর একাডেমিক ও ১ বছর ইন্টার্ণশীপ করে বিএইচ এম এস ডিগ্রী প্রাপ্তির ব্যবস্থা পূনঃ প্রবর্তন করা এবং বিএইচএমএস ডাক্তারদের ২) শিক্ষা গবেষণা চিকিৎসা ৩) স্মারক নম্বরঃ জনস্বাস্থ্য-১/ইউআ-৬/২০০২ (অংশ-১)/১৭৪ তাং: ১৪/০৬/২০১২ এর আলোকে সৃষ্ট ৯০ টি পদে ডিএইচএমএস ডাক্তারদের সহকারী মেডিকেল অফিসার পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা।
হোমিও সরকারী ডাক্তারদের ক্যাডারভুক্ত করতঃ বিএইচ এম এস ডাক্তারদের প্রতিটি স্বাস্থ্য সেবা ইউনিটে মেডিকেল অফিসার নিয়োগসহ প্রস্তাবিত জনবল অনুমোদন ও নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।
এই প্রকল্পটির রিসার্চ সেন্টার সংযোজন করে প্রতিটি বিভাগে ১ টি করে সরকারী ডিগ্রী সংযুক্ত ডিপ্লোমা মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করতে হবে। ৫) বেসরকারী অনুমোদনপ্রাপ্ত কলেজ হাসপাতালগুলো সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অন্তর্ভুক্তকরণঃ- শুধুমাত্র শিক্ষক, চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ স্টাফদের বেতন ভাতা ও হাসপাতালের ব্যয় সরকারী খাত থেকে বেতন স্কেল ২০১৫ এর আলোকে শতভাগ প্রদান করতে হবে।
৬) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে সকল সিটিকর্পোরেশন, পৌরসভার ওয়ার্ডসমূহে হোমিও চিকিৎসা কেন্দ্র চালু (ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটিতে আংশিক চালু আছে), শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সকল সরকারী ও বেসরকারী শিল্প কারখানায় হোমিও চিকিৎসা ইউনিট চালু, সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সেবা খাতে দেশে বেসরকারীভাবে প্রতিষ্ঠিত হোমিও দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র গুলোতে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান করা।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জেলা ও উপজেলা মডেল মসজিদ কমপ্লেক্সে, ইসলামিক মিশনকেন্দ্রে, হজ্ব মেডিকেল টীমে হোমিও চিকিৎসক অন্তর্ভুক্ত করাসহ হোমিও ইউনিট চালু করতে প্রস্তাবিত জনবল অনুমোদন দেয়া।