নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া কলেজে শিক্ষার পরিবেশ ক্রমেই শোচনীয় হয়ে উঠছে। গত মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো কলেজ প্রাঙ্গণ কার্যত ছাত্রছাত্রী শূণ্য। সেখানে অধ্যক্ষসহ মাত্র চার-পাঁচ জন শিক্ষক এবং দুই-তিন জন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, কেন্দুয়া কলেজে মোট শিক্ষক ও কর্মচারী সংখ্যা ৬১ জন। এর সাথে মাস্টার রোলে থাকা আরও ১৮ জন কর্মরত আছেন। তবে গোপন সূত্রে জানা যায়, এই ১৮ জন মাস্টার রোলে থাকা কর্মীর মধ্যে অনেকেই নিয়মিত কলেজে আসেন না। কিন্তু তারা নিয়মিত বেতন গ্রহণ করছেন। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই ১৮ জন কর্মীর কি আদৌ কলেজে প্রয়োজন রয়েছে?
সদ্য প্রয়াত প্রিন্সিপাল জনাব জাহাঙ্গীর আলমের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে। তিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রফেসর আব্দুল মালেকের কাছে। যদিও জাহাঙ্গীর আলমের হাতে আরও অনেক বিকল্প ছিলো। তবুও তিনি কয়েকজন সিনিয়রকে টপকিয়ে জুনিয়র আব্দুল মালেককে দায়িত্ব দেন। মাউসির নিয়ম অনুযায়ী, অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সম্ভাব্য পাঁচজন প্রার্থীর তালিকা এক মাস আগে পাঠানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তিনি শেষ কর্মদিবসে তালিকাটি পাঠান। যা নিয়মের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, কলেজের শিক্ষকদের মধ্যে দুটি পক্ষ বিদ্যমান, যারা যার পছন্দের অধ্যক্ষ নিয়োগের পক্ষে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। মাউসি নিয়ম অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতেই অধ্যক্ষ নিয়োগ দেবে।
নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকার কারণে কলেজের কর্মকান্ডও চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। অনেকেই নিয়মনীতি মানছেন না। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক স্বীকার করেন যে নিয়মিত অধ্যক্ষ না থাকার ফলে কিছুটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবে তিনি আশাবাদী যে, নতুন অধ্যক্ষ দায়িত্ব নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক তৌহিদ ভূঁইয়া জানান, বছরের শুরুতে এমন পরিস্থিতি প্রায়ই দেখা যায়। অনার্স ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রদের পরীক্ষা চলছে, অন্যদের রয়েছে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা। ফলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি কম। শিক্ষকরাও উপস্থিত হলেও ছাত্রসংখ্যা কম থাকায় সঠিকভাবে পাঠদান করা সম্ভব হয়নি তাই তারা চলে গেছেন।
এ প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মালেক জানান, প্রাইভেট কোচিং সেন্টার গুলো এজন্য অনেকাংশে দায়ী। আর এমনিতেও গত ৩১ ডিসেম্বরের পর থেকেই কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি কমতে শুরু করেছে। শিক্ষকদের অনেকেই আসলেও ছাত্রছাত্রী না থাকায় তারা ফিরে যাচ্ছেন।