দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজার ও সিলেটের প্রাচীন ঐতিহ্য বয়ে চলেছে পিঠা-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপুড়া পিঠা প্রায় বিলুপ্তের পথে। আগের মত এখন আর গ্রামীন এলাকার বাড়িতে বাড়িতে চুঙ্গাপুড়ার আয়োজন চোঁখে পড়ে না। শীতের রাতে খড়কুটো জ্বালিয়ে রাতভর চুঙ্গাপুড়ার দৃশ্য দেখা যায় না বললেই চলে।

এক সময় ছিলো বাজারে মাছের মেলাও বসতো। সেই মেলা থেকে মাছ কিনে কিংবা হাওর-নদী হতে বড় বড় রুই, কাতলা, চিতল, বোয়াল, পাবদা,কই, মাগুর মাছ ধরে নিয়ে এসে হাল্কা মসলা দিয়ে ভেজে(আঞ্চলিক ভাষায় মাছ বিরান) দিয়ে চুঙ্গাপুড়া পিঠা খাওয়া মৌলভীবাজার তথা সিলেট বিভাগ জুড়ে একটি অন্যতম ঐতিহ্য বহন করে। বাড়িতে মেহমান বা নতুন জামাইকে শেষ পাতে চুঙ্গাপুড়া পিঠা মাছ বিরান আর নারিকেলের পিঠা বা রিসা পরিবেশন না করলে লজ্জায় মাথা কাটা যেতো এমনটাই মনে করতেন। বর্তমানে সেই দিন আর নেই।

চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রধান উপকরণ ডলু বাঁশ ও বিন্নি ধানের চাল (বিরইন ধানের চাল) সরবরাহ এখন অনেক কমে গেছে। এখন আর আগের মত চাষাবাদ ও হয় না রিরুন চালের। মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথরিয়া পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, রাজনগরসহ বিভিন্ন উপজেলার টিলায় টিলায় ও চা-বাগানের টিলায়, কুলাউড়ার গাজীপুরের পাহাড় ও জুড়ী উপজেলার চুঙ্গাবাড়ীতে প্রচুর ঢলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়ী এক সময় ডলুবাঁশের জন্য প্রসিদ্ধ ছিল।

ডলুবাঁশে অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যু এবং পাহারখেকোদের কুদৃষ্টিতে বনাঞ্চল উজাড় করায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখন ও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায় তবে তা সংখ্যায় অপ্রতুল। বাঁশের উৎপাদন না থাকায় বাজারে ডলুবাঁশের দাম বেশ চড়া।

ব্যবসায়ীরা দুর দূরান্ত এলাকা থেকে ঢলুবাঁশ ক্রয় করে নিয়ে যান নিজ নিজ উপজেলার বাজার সমুহে বিক্রির আশায়। এসব বাঁশ পাহাড়ি এলাকায় উৎপাদনের সঠিক স্থান এখনি বাঁশটি সংরক্ষণের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। একমাত্র ডলুবাঁশেই চুঙ্গাপিঠা তৈরি করা যায়, কারন ডলুবাঁশে এক ধরনের তৈলাক্ত রাসায়নিক পদার্থ আছে, যা আগুনে বাঁশের চুঙ্গাকে আগুনে পোড়ানো থেকে বিরত রাখে। ডলুবাঁশে অত্যাধিক রস থাকায় আগুনের তাপে পিঠা তৈরিতে সংবেদনশীল কিন্তু বাঁশ একদম পুড়ে যাওয়া থেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকে।

ডলুবাঁশ দ্বারা চুঙ্গাপিঠা তৈরিতে ভিন্ন স্বাদের মুখোরোচক পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। কোথাও আবার ডলুবাঁশের চুঙ্গার ভেতরে বিন্নি চাল, দুধ, চিনি, নারিকেল ও চালের গুড়া দিয়ে পিঠা তৈরি করা হয়। পিঠা তৈরি হয়ে গেলে মোমবাতির মতো চুঙ্গা থেকে পিঠা আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গাপিঠা পোড়াতে আবার প্রচুর পরিমানে খেড় (নেরা) দরকার পড়ে।

খড়ও এখন সময়ের প্রয়োজনে দাম একটু বেশি। একটা সময় ছিলো শীতের মৌসুমে গ্রামীণ জনপদে প্রায়ই বাজারে মাছের মেলা বসত, বিশেষ করে সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব পৌষ সংক্রান্তির সময় এ বাঁশগুলো কমলগঞ্জ উপজেলার ভানুগাছ, মুন্সীবাজারসহ বিভিন্ন হাটবাজারে দেখা গেছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ী এলাকায় প্রচুর ডলুবাঁশ পাওয়া যেতো। তন্মধ্যে চুঙ্গাবাড়িও এক সময় প্রসিদ্ধ ছিলো ডলুবাঁশের জন্যে।

অনেক আগেই বনদস্যু ও ভুমিদস্যু এবং পাহাড়খেকোদের কারনে বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে ঢলুবাঁশ। তবে জেলার কিছু কিছু টিলায় এখনও ঢলুবাঁশ পাওয়া যায়। পিঠা তৈরী করার জন্য কমলগঞ্জের মুন্সীবাজারে ডলুবাঁশ নিতে আসা পরিমল দেবনাথ, নিবাস চন্দ ও আব্দুল বাছিত খান বলেন, ‘আসলে সব সময় তো এই জিনিসগুলো পাওয়া যায় না। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এগুলো খুব কম পরিমান বাজারে উঠেছে।

আজ থেকে ১০-১৫ বছর আগে প্রচুর দেখা যেতো। এখন কালের পরিবর্তনে হারিয়ে বসেছে। বাজার আসার সময় পরিবারের সদস্যরা বললো পিঠা তৈরি করার জন্য এই ডলুবাঁশ পেলে নিয়ে যেতে, তাই কয়েকটা বাজারগুলো ঘুরে দেখলাম পাইনি এখন এই উপজেলার মুন্সীবাজারে স্বল্প পরিমান নিয়ে এসেছে এখন বিক্রেতা আমি সেখান থেকে নিয়ে যাচ্ছি বাসায়।

’ কমলগঞ্জ উপজেলার লেখক-গবেষক আহমদ সিরাজ জানান, ‘আগে কম-বেশি সবার বাড়িতে ডলু বাঁশ ছিল। এখন সেই বাঁশ আগের মতো নেই। এই বাঁশ এখন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। একসময় এই ডলুবাঁশ দিয়ে চুঙ্গাপুড়ার ধুম লেগেই থাকতো।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version