নিজস্ব প্রতিবেদক: নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলাধীন পাইকুরা ইউনিয়নের বড়লা গ্রামের শিংরাইল বিল থেকে অবৈধভাবে ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলনে চলছে মহোৎসব। স্থানীয় রেনু মিয়ার নেতৃত্বে বাণিজ্যিকভাবে এই বালু উত্তোলন করে ও তা বিক্রিও করা হচ্ছে। প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে তার রমরমা ব্যবসা। এই অবৈধ কার্যক্রমের ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি সরকারও হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব। অথচ অভিযোগ দায়েরের পরও প্রশাসনের তেমন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, শিংরাইল বিল থেকে পাইপ লাগিয়ে ড্রেজারের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এমনভাবে এই বালু সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যেন কেউ বুঝতে না পারে এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করা হচ্ছে। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে স্থানটি কেবল বাড়ি ভিটা তৈরির জন্য রাখা হয়েছে। বাস্তবতা হলো, এখানে সংরক্ষিত বালু বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একই গ্রামের তোয়াজ মিয়া (৭৫) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে রেনু মিয়া পাইকুরা-টু-পেমই সড়কের একটুকরো জায়গা বিনামূল্যে ব্যবহারের অনুমতি নেন। সেই জায়গাটি এখন বালু সংরক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিংরাইল বিল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে এখানে সংরক্ষণ করা হয় এবং সেখান থেকে ট্রাক্টরে করে বিক্রির জন্য বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার ফলে নবনির্মিত পাইকুরা-টু-পেমই সড়কে প্রতিদিন ট্রাক্টরের আসা-যাওয়ার সড়কটি হচ্ছে ক্ষতি। স্থানীয়রা এ বিষয়ে প্রতিবাদ করে সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ দায়ের করলেও এখনো পর্যন্ত সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানায় এলাকাবাসী।
গ্রামবাসীরা এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, পরিবেশ রক্ষায় এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। বালু উত্তোলনের ফলে শিংরাইল বিল ও এর আশপাশের পরিবেশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। ফসলি জমির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে রেনু মিয়া বালু উত্তোলনে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং কোন প্রকার দলিল পত্রাদি উপস্থাপন করতে পারেন নি।
কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি (এসিল্যান্ড) জানান, প্রশাসন এ বিষয়ে অবগত রয়েছে। অনুমতি ব্যাতিত কেউ জমির টপ সয়েল (জমির উপরের অংশের মাঠি) উত্তোলন করতে পারে না। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অপরাধ প্রমানিত হলে দোষীদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে নিয়মিত মামলা এবং শাস্তির পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এলাকাবাসীরা চান, অবিলম্বে এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে পরিবেশ রক্ষা করা হোক। শিংরাইল বিলে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের যে ক্ষতি হচ্ছে। প্রশাসনের নিরবতার কারণে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে পরিবেশগত ক্ষতি অবশ্যম্ভাবী। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তৎপরতা ও কার্যকর পদক্ষেপ আশা করছেন এলাকাবাসী।