কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেছেন, “আমাদের জাতিসত্তা আলাদা হতে পারে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশকে ভালবাসি ও বাংলাদেশের জন্য কাজ করি। ক্ষুদ্র শব্দটা অবশ্যই পরিতাজ্য। আমরা জাতি গোষ্ঠী শব্দটা ব্যবহার করতে চাই এবং ব্যবহার করে বলতে চাই সবার সমান অধিকার আছে। দীর্ঘদিন হাজং সম্প্রদায়ের পরিচয়টাই গুরুত্বপূর্ণ। খালি যে বাঙ্গালি, হিন্দু, মুসলমান পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ তা না বরং হাজং হিসেবে জাতি গোষ্ঠীর পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ।”
শনিবার (৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সেলের আয়োজনে এবং নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে দুর্গাপুর উপজেলার কুল্লাগড়া ইউনিয়নে আড়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী ‘চরমাগা’ উদযাপন উপলক্ষে ‘মহিষাসুর বধ’ পালা মঞ্চায়ণের সময় প্রধান অতিথি হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, “হাজং হিসেবে জাতি গোষ্ঠীর পরিচয়টা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ইতিহাসে জানি ১৯৪৬-১৯৪৯ সাল পর্যন্ত হাজংরা কমরেড মণিসিংহের নেতৃত্বে টঙ্ক আন্দোলনে শরীক হয়ে অনেকে শহীদ হয়েছেন। বড় একটা বিপ্লব ও দ্রোহের বীজ আমরা এখানে দেখতে পেয়েছিলাম। যেটি বিস্ফোরন ঘটেছে। আমরা সেই জাতি গোষ্ঠীর মাঝে এসে তাদেরকে আবারও বলছি আপনাদের (হাজং সম্প্রদায়ের) ঐতিহ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের বহুত্ববাদী সংস্কৃতি ও বাংলাদেশে বহুত্ববাদী শহরে জন্য।”
তিনি আরও বলেন, একস্বর নয় বহুত্ববাদী দেশ বাংলাদেশে। সেই বহুত্ববাদী বাংলাদেশে সংস্কৃতি মানুষের পরিচয়টা স্পষ্ট করে। পরিচয়টা আমাদের একস্বর পরিচয় না দিয়ে বহুস্বর পরিচয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা। আশা করি আজকে হাজং জনগোষ্ঠীর মাঝে বহুদিন পর ‘মহিষাসুর বধ’ পালা হলো তা নতুন প্রজন্ম দেখে উৎসাহিত হবে। একসাথে একজন মুসলমান ভাই হিন্দু, বৌদ্ধ বা খ্রীস্টান ভাইয়ের পাশে একই সাথে পরিচয় নিয়ে সকলের নিজস্বতা ও সক্রিয়তা বিরাজ করবে বহুত্ববাদী বাংলাদেশে।”
এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উপ-পরিচালক এস এম শামীম আকতার, দুর্গাপুর উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির পরিচালক গীতিকার সুজন হাজং, কুল্লাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল, বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী অনিমেষ হাজং, চিত্রশিল্পী রুপক হাজংসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী চরমাগা উৎসব নিয়ে বিরিশিরি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমির শিল্পীগণ বিভিন্ন নৃত্য পরিবেশনা শেষে বগাউড়া গ্রামের হাজং সাংস্কৃতিক দল ঐতিহাসিক ‘‘মহিষাসুর বধ’’ ও ‘‘কালী যুদ্ধ’’ পালা নান্দনিক অভিনয়ের মাধ্যমে মঞ্চস্থ করা হয়।