দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধা।।

গাইবান্ধার একমাত্র কৃষিভিত্তিক ভারি শিল্প-কারখানা রংপুর চিনিকল। লোকসান কমাতে আধুনিকায়নের মাধ্যমে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার কথা বলে চিনিকলটি বন্ধ করা হয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন যে ছয়টি চিনিকলে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম রাষ্ট্রায়াত্ব এ চিনিকলটি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বন্ধ করে দেওয়া রংপুর চিনিকল পুনরায় চালু হচ্ছে। এরকম একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তবর্তীকালীন সরকার, এ খবরে গাইবান্ধাজুড়ে খুশির জোয়ার বইছে। চিনিকল ঘিরে এ জনপদের মানুষ নতুন করে সুদিনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এটি ফের চালু হলে গাইবান্ধা জেলায় ৫০ হাজার লোকের দুয়ার খুলে যাবে একইসাথে ভাগ্য পরিবর্তন করবে রংপুর চিনিকল দিয়ে। এতে মানুষের জীবনমান উন্নয়নের অগ্রগতি বাড়বে ।

গত ১৫ ডিসেম্বর শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে মাড়াই স্থগিতকৃত ছয়টি চিনিকলের মাড়াই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সরকারি সিদ্ধান্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে আখচাষীসহ সর্বস্তরের মানুষের মাঝে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, গত ১৫ ডিসেম্বর একটি চিঠি বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আফরোজা বেগম পারুল সই করা স্মারকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন-এর অধীন মাড়াই স্থগিতকৃত চিনিকলগুলো পুনরায় মাড়াই কার্যক্রম চালুকরণ বিষয়টি জানা যায়। এরপর থেকে এলাকায় আনন্দের জোয়ার।

রংপুর চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী, আখচাষীসহ এলাকার লোকজন অভিযোগ, ২০২০-২১ বার্ষিক আখ মাড়াই মৌসুমের শুরুতে বিপুল পরিমাণ আখ জমিতে রেখে চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষ মূহুর্তে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় বিক্ষুব্ধ আখচাষী ও শ্রমিক-কর্মচারীরা ব্যাপক আন্দোলন করেন। তৎকালীন সরকার প্রতারণার মাধ্যমে এবং শ্রমিক আন্দোলন বা চাষীদের করুণ আকুতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করে বলে অভিযোগ করেন শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষী নেতারা।

তারা বলেন, তখন আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারী ও চাষীদের উদ্দেশ্যে দেশের প্রায় সকল জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, আধুনিকায়ণের মাধ্যমে খুব দ্রুতই আবার চালু করা হবে এই চিনিকলসহ সব ক’টি চিনিকল। কিন্তু প্রায় এক হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা এবং ৫০ হাজার চাষী ছাড়াও বিভিন্নভাবে সম্পৃক্ত লক্ষাধিক মানুষের জীবিকা অর্জনের মাধ্যম এই রংপুর চিনিকলটি চালু করা হয়নি গত পাঁচ বছরেও।

বরং এ চিনিকলের স্থায়ী চাকুরীজীবীদের একাংশ, গাড়ি, যন্ত্রাংশ ও নানা প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয়েছে চলমান অন্য চিনিকলে। কাজ হারানো ‘কাজ নাই, মজুরী নাই’ (কানামনা) চুক্তিভিত্তিক অর্ধসহস্রাধিক শ্রমিক এখন পেটের দায়ে ভ্যান-রিক্সা চালনাসহ বিভিন্ন কাজ করে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে চালু রাখা পাশ্ববর্তী চিনিকলের চাইতে অধিক মাড়াই ক্ষমতাসম্পন্ন ও অধিক পরিমাণ আখ উৎপাদিত হলেও রহস্যজনক কারণে এ কলটি বন্ধ করায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ছিলেন এলাকার হাজার হাজার আখচাষীসহ সাধারণ মানুষ। গত চার বছর বন্ধ থাকায় ৩৫ একর আয়তনের কারখানার চত্বর ভরে গেছে জঙ্গলে।

এই দৃশ্য দেখলে মানুষের সরব উপস্থিতির অভাব নিশ্চিত হওয়া যায় খুব সহজে। খোলা আকাশের নীচে অযত্নে-অবহেলায় পড়ে থাকা আখ পরিবহণের যানবাহনগুলোও ধ্বংসের পথে। কারখানার ভেতরের দৃশ্যটাও একই রকম। কোটি কোটি টাকা মুল্যের যন্ত্রপাতিতে এখন মরিচার রাজত্ব। থমকে আছে জীবিকার চাকাগুলো। আখচাষী আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিত্যদিনের সমাবেশের চিরচেনা দৃশ্য আর নেই। হাজারো মানুষের একসময়ের জীবন-জীবিকার কেন্দ্রস্থলের প্রবেশপথ ও মিলে আখ সরবরাহের জন্য শত শত সারিবদ্ধ গাড়ির বিশাল প্রাঙ্গণটি এখন গো-চারণভূমি। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৫৪ সালে তৎকালীন রংপুর জেলার গাইবান্ধা মহুকুমার গোবিন্দগঞ্জ থানার মহিমাগঞ্জে শুরু হয় রংপুর চিনিকলের নির্মাণ কাজ। ২৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন বছর পর শেষ হয় মিলটির নির্মাণ কাজ।

১৯৫৭-৫৮ মৌসুম থেকেই আখ মাড়াইয়ের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন শুরু হয় মিলটিতে। পশ্চিম জার্মানী‘র বাকাউ-উলফ নামের একটি কোম্পানী থেকে আনা মেশিনে ৩৫ একর জায়গাজুড়ে গড়ে ওঠে মিলের কারখানা ও কার্যালয়। ১৯৭২ সালে রংপুর চিনিকলসহ সকল চিনিকলকে রাষ্ট্রায়াত্ব প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করেন। এ চিনিকলের কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। পুকুরসহ রেলওয়ে সাইডিংয়ের জায়গা ৮ একর, সাড়ে ১৪ একর জায়গায় গড়ে ওঠে ৫০টি ইক্ষু ক্রয়কেন্দ্র এবং ৮টি সাবজোন। এছাড়াও মিলের নিজস্ব খামারের জমির পরিমাণ ১ হাজার ৮৩২ একর। ১৯৫৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬৩ বছরে ২২ হাজার ৯৮৫ দিনের মধ্যে ৫ হাজার ৭৩৯ দিন ঘোরে মিলের চাকা। এ সময়কালে ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে উৎপাদন করা হয় ৪ লাখ ২৭ হাজার মেট্রিক টন চিনি।

রংপুর চিনিকলের ছিল নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা। এখানকার পাওয়ার হাউজে উৎপাদিত বিদ্যুৎ রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হতো। চিনিকলের আখ পরিবহণের জন্য ছিলো নিজস্ব রেলপথ। সেই রেলপথে নিজস্ব রেলের ইঞ্জিন ও মালবাহী বগি দিয়ে পরিবহণ করা হতো আখ, চিনি, চিটাগুড় ও জ্বালানীসহ নানা দ্রব্য। রংপুর চিনিকলকে ঘিরে জাঁকজমক ছিলো মহিমাগঞ্জ রেলস্টেশন। বাণিজ্যকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে মহিমাগঞ্জ।

শিক্ষার প্রসারেও অন্যতম ভূমিকা রাখে রংপুর চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয়। সবকিছু মিলিয়ে চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী, আখচাষীসহ অসংখ্য মানুষের আয়-রোজগারের পথ সৃষ্টি করেছিল রংপুর চিনিকল। রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ইনচার্জ) মাসুমা আকতার জাহান জানান, চিনিকলটি চালু হলে অবশ্যই লাভজনক অবস্থায় উন্নীত হবে। কারণ এখানকার মাটি ও পরিবেশ আখচাষের জন্য খুবই উপযোগী। রংপুর চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান সুজা জানান, চিনিকলটি বন্ধ করে দেওয়ায় এই জনপদে অন্ধকার নেমে আসে। অসাধু সিন্ডিকেটের ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে চিনিকলটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে চালু করার সিদ্ধান্ত খুই বাস্তবসম্মত। মিলস গেট সাবজোনের আখচাষী ফেরদৌস আলম অভিযোগ করে বলেন, বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত বর্তমান সরকারের ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত। এটিকে আমরা স্বাগত জানাই।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version