কে. এম. সাখাওয়াত হোসেন: নেত্রকোনার মদন উপজেলায় চারটি ইউনিয়নের ভূমি কর্মকর্তাগণ একযোগে গেলেন ভ্রমনে। কর্মস্থলে দেখা দেয় চারটি ইউনিয়নের দায়িত্বরত ভূমি কর্মকর্তার অভাব। এদিকে প্রতিদিনের মতো নামজারিসহ ভূমি সেবা নিতে আসা লোকজন কোষাগারে যে রাজস্ব জমা দেন তা থেকে বঞ্চিত রাষ্ট্র।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের চারজন হলেন- জাহাঙ্গীপুর ভূমি অফিসের রূপক চন্দ্র সরকার, তিয়শ্রী ভূমি অফিসের আশরাফুজ্জামান টিপু এবং মদন ভূমি অফিস ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হাসিমপুর ভূমি অফিসের মান্নু রায়হান রোমান। তারা সকলে ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-সহকারি ভূমি কর্মকর্তা (সহকারি তহসিলদার) পদে পদবীধারী ব্যক্তি। এ চার ইউনিয়নে দায়িত্বরত তিনজন উপসহকারি ভূমি কর্মকর্তাগণ একই সাথে ইউনিয়ন সহকারি ভূমি কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন অর্থাৎ উভয় পদের দায়িত্ব পালন করছেন।
জানা যায়, ওই চার ইউনিয়নের তিনজন সহকারি তহসিলদারসহ জেলায় অন্যান্য উপজেলায় কর্মরত সোহেল, খুররম ও নজরুল এই তিনজন সহকারি তহসিলদার তারা সকলে বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) বরিশাল ও পটুয়াখালী ভ্রমনে বের হন। ফলে দেখা দেয় এক উপজেলার চার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির শূণ্যতা।
একযোগে একসাথে চার ভূমি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তার ছুটি দেওয়ার নিয়ম না থাকলেও মদনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) তিনি তাদের ছুটিও মঞ্জুর করেন। সাথে শুক্রবার ও শনিবার আরও দুদিন সরকারি ছুটি। শনিবার দিনগত বা রবিবার রাত পৌনে ২টার দিকে তাদের সকলের অবস্থান ছিল ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রবিবার (২৪ নভেম্বর) দুপুর পর্যন্ত মদনের চার ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তাবৃন্দ তারা কেউ অফিসে আসেন নাই। একইদিন এসময় মদন ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার কেশব লাল দেব অফিসে আসেননি এবং প্রায় সময় তিনি সময় মতো অফিসে উপস্থিত হন না।
আরও জানা যায়, মদনের সহকারি তহসিলদার ওই তিনজনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
দলিল সম্পদনের সময় বিআরএস রেকর্ডের প্রকৃত মালিক বিশ্বেশ্বর বৈশ্যের ছেলে বিধু ভুষন বৈশ্য। ২১৬৩ নম্বর বি.আর.এস দাগের জমি রেকর্ডের মালিক দলিল না দিয়ে তার পিতা বিশ্বেশ্বর বৈশ্য কর্তৃক দলিল সম্পাদিত হয়। বিধু ভুষন বৈশ্য কর্তৃক দলিল সম্পাদিত না হওয়ায় রেকর্ড থেকে গ্রহিতা মো. আব্দুল হক গংদের নামে দলিল সম্পাদন সঠিক হয়নি এবং জমির মালিকানার কোন পরিবর্তন ঘটেনি। এক্ষেত্রে বি.আর.এস ২১৬৩ নম্বর দাগের ভূমির নামজারি মঞ্জুর প্রশ্নবিদ্ধ এবং খুবই সূক্ষ্মভাবে জালিয়াতি পুর্বক জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি তহসিলদার রূপক চন্দ্র সরকার কর্তৃক প্রস্তাব দাখিল পর গত ১৭ সেপ্টেম্বর শুনানির জন্য নোটিশ ইস্যু করা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তারিখ শুনানির দিন ধার্য থাকলেও ১৮ সেপ্টেম্বর ডিসিআর বাবদ অর্থও জমা প্রদান করা হয়। এই নিয়ে ‘দ্যা মেইল বিডি ডটকমে’ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
মদনের কাপাশাটিয়া মাদরাসা থেকে ৮০ হাজার টাকা এনে আত্মসাৎ অভিযোগে মদন ইউপির সহকারি তহসিলদার মান্নু রায়হানের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পর তিনি সেই টাকা ফেরত দিয়েছেন।
তিয়শ্রী ভূমি অফিসের আশরাফুজ্জামান টিপু এরআগে বারহাট্টার বাউসী ভূমি অফিসের কর্মরত ছিলেন। সেখানে অনিয়মের কারণে এক হিজরার আর্থিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস টিপুকে তিয়শ্রীতে বদলি করেন এবং এখানকার স্থানীয় সাংবাদিক ও জনসাধারণ অনেকে জানান তিনি যথাসময়ে অফিসে আসেন না। এতে করে সেবা গ্রহীতারা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীপুর ভূমি অফিসের রূপক চন্দ্র সরকারকে মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি। মদন ইউপি’র সহকারি তহসিলদার মান্নু রায়হান জানান তিনি অফিসে আছেন। আপনাকে (মান্নু) দিনের বেলায় মোক্তারপাড়ায় দেখা গিয়েছে এবং তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মোবাইল ট্র্যাকিং করলে আপনার অবস্থান ধরা পড়বে প্রতিবেদকের এমনসব প্রশ্নে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তিয়শ্রী ভূমি অফিসের আশরাফুজ্জামান টিপু জোরালোভাবে বলেন অফিসেই আছি। পরে স্থানীয় সাংবাদিক ও সেবাগ্রহিতাদের রেফারেন্স দিলে তিনি (টিপু) প্রতিবেদককে বলেন, ফিল্ডে তদন্তে আছি। সার্ভেয়ারকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মদনে ভারপ্রাপ্ত ইউএনও’র দায়িত্বে থাকা এসিল্যান্ড মো. রেজোয়ান ইফতেকার বলেন, তহসিলদারগণ বৃহস্পতিবার কোন অনুষ্ঠানে যাবে বলে ছুটি নিয়েছেন। কোথায় যাবে তা আমি জানি না এবং আমাকে বলে নাই।
তারা বরিশাল ও পটুয়াখালীতে অবস্থান করেছে এবং একদিনে একই সাথে চারটি ইউপি ভূমি অফিসের দায়িত্বশীল পদ খালি হলে জনভোগান্তি ও রাষ্ট্র রাজস্ব হারিয়েছে প্রতিবেদকের এমন সব প্রশ্নে এসিল্যান্ড বলেন, আইনের ভিত্তিতে ছুটি দিয়েছি, নৈতিকতার প্রশ্নে এক সাথে চার ইউপি’র ভূমি অফিসের তহসিলদারদের ছুটি দেওয়া সঠিক হয়নি। পরে তহসিলদারগণ আজ (রবিবার) কর্মস্থলে আসেননি প্রতিবেদকের এই প্রশ্নে তিনি বলেন, আজকেও নাই! আমিতো রাজস্ব মিটিংয়ে ছিলাম। এখন আমি গাড়িতে। খোঁজ দিয়ে নিয়ে বিষয়টি দেখছি।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সুকময় সরকার বলেন, বৈধভাবে ছুটি চাইলে তার দেখভাল ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। কর্তৃপক্ষ যদি লজিক্যাল মনে করলে ছুটি দিবে। তবে কারো যদি ভোগান্তি হয় এবং সে যদি অভিযোগ দেয় তাহলে সেই ভোগান্তির দিকে অবশ্যই সর্বোচ্চ দৃষ্টি দিতে হবে। আমরা কোন ভোগান্তি চাই না।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাসকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।