দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

আরিফুল ইসলাম রনক, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:

নওগাঁর আস্তান মোল্লা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তাঁর বিরুদ্ধে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগে বাণিজ্য, গায়েবী খাতে লাখ লাখ টাকা আতস্মসাৎ, পদত্যাগ করার পরেও কলেজের দাপ্তরিক নথিপত্র কুক্ষিগত করে রাখা, কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতির অনুমতি ছাড়াই একক স্বাক্ষরে বিধি বহির্ভূতভাবে এডহক (আহ্বায়ক) কমিটি গঠনের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সোমবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে আস্তান মোল্লা ডিগ্রি কলেজ শিক্ষক মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীনা আখতার।

সে সময় অন্যদের মধ্যে আস্তান মোল্লা ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক নিতাই চন্দ্র বসাক, সঞ্জিবন কুমার অধিকারী ও মীর আবু হায়াৎ মো. মোস্তফা কামাল, জ্যেষ্ঠ প্রভাষক দিলরূবা লাকী, আনিছার রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত বক্তব্যে শাহীনা আখতার বলেন, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর মাহবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের হয়রানির অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি শিক্ষক-কর্মচারীরাও একাত্মতা ঘোষণা করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হওয়া আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা বরাবর স্বেচ্ছায় অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেন মাহবুবুল ইসলাম। এর পর থেকে তিনি কলেজে আসা বন্ধ করেন। পরবর্তীতে গত ২ অক্টোবর শিক্ষক-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আলোচনার ভিত্তিতে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক সোহেল রানা ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক শাহীনা আখতারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, মাহবুবুল ইসলাম ২০১৬ সালে আস্তান মোল্লা ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুবুল হক কমলের নিকট আত্মীয়। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে গত আট বছরে ১২ জন অনার্স শিক্ষক, দুইজন ল্যাব সহকারী ও একজন নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগ দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করতেন না।

তার সময়ে কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ১২ জন শিক্ষক, দুইজন ল্যাব সহকারী ও একজন নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগ দেওয়া হয়। এসব শিক্ষক-কর্মচারীদের নিয়োগ দেওয়ার সময় অনুদানের কথা বলে অধ্যক্ষ মাহবুবুল ইসলাম লাখ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করেন। এছাড়া ক্রয় কমিটির স্বাক্ষর, কোটেশন ও রেজ্যুলেশন ছাড়াই মাহবুবুল ইসলাম একক স্বাক্ষরে কলেজের উন্নয়নের নামে গায়েবী খাতে গত ৮ বছরে ২৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শাহীনা আখতার। অভিযোগ পাওয়ার পর মাহবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত আবেদন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।

শাহীনা আখতার বলেন, অধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করার পরেও মাহবুবুল ইসলাম কলেজের নথিপত্র কুক্ষিগত করে রেখেছেন। অধ্যক্ষ কক্ষের একটি আলমারিতে ছাত্র-ছাত্রীদের সনদপত্র, শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের কাগজ, রেজ্যুলেশন খাতা, শিক্ষক-কর্মচারী হাজিরা খাতাসহ গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সংরক্ষিত আছে।

কলেজ থেকে এইসব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সরিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১০ অক্টোবর গুন্ডাবাহিনী নিয়ে কলেজে প্রবেশ করে অধ্যক্ষ কক্ষের তালা ভাঙার চেষ্টা করেন। সন্ত্রাসী হামলার বিষয় তাৎক্ষণিকভাবে কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানানো হয়।

জেলা প্রশাসক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বারবার মৌখিকভাবে আলমারীর চাবি চাওয়ার পরও তিনি আলমারীর চাবি প্রদান করেননি। একপর্যায়ে প্রশাসনের চাপের মুখে গত বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কলেজে এসে আলমারি খুলে কাগজপত্র বের করে দেন। কিন্তু চাবি হস্তান্তর করেননি। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকায় আলমারিতে থাকা সনদপত্র, নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্র উইপোকা খেয়ে ফেলায় শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

তিনি আরও বলেন, জেলা প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন অনুসারে জেলা প্রশাসক এ কলেজের সভাপতি। সেই মোতাবেক সভাপতিন অনুমোদন নিয়ে এডহক কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু তিনি সভাপতি অনুমোদন ছাড়াই একক স্বাক্ষরে বিধি বহির্ভূতভাবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় থেকে এডহক কমিটি পাশ করে এনেছেন। কারণ হাজিরা খাতা অনুযায়ী তিনি গত ২১ আগস্ট থেকে কলেজে অনুপস্থিত। সুতরাং তার সাক্ষরে কোনো কিছু গঠিত হওয়া মানে অবৈধ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মসহ যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। গত ২১ আগস্ট কিছু বহিরাগত শিক্ষার্থী আমাকে হেনস্থা করে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দিয়েছে, জোর করে পদত্যাগ করানো শিক্ষকদের পদত্যাগ গ্রহণযোগ্য হবে না। আমি এখনও ওই কলেজের অধ্যক্ষ। গত ৩০ আগস্ট জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আমার প্রস্তাবিত এডহক কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছে। শারিরীক ও মানসিক কারণে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বর্তমানে আমি ছুটিতে আছি। শিঘ্রই আমি কলেজে পুনরায় যোগদান করব।’

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার পর কিছু সময়ের জন্য জেলা প্রশাসক ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। কিন্তু জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় একটা কমিটি গঠন করে দেওয়ায় এখন ওই কমিটিই ওই কলেজের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।

ওই কমিটি নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের অভিযোগ থাকলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আবেদন করতে হবে। এখানে প্রশাসনের করার কিছু নেই। আর মাহবুবুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে সেটা তদন্ত করবে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়। তদন্ত সাপেক্ষে কোনো নির্দেশনা পেলে সে অনুযায়ী প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।’

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version