দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

স্বীকৃতি বিশ্বাস, যশোরঃ

অষ্টমী পূজা হলো দুর্গা পূজার একটি গুরুত্ব পূর্ণ অংশ। অষ্টমীর দিনে অনেক মানুষ পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে দেবী দুর্গাকে নিজের মনের ইচ্ছা জানায়। এই দিন চামুন্ডা রূপে যেমন দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় তেমনি কুমারী রূপেও পূজা করা হয়। একই দিনে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা।মহাষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং সকাল ৯টায় শুরু হবে কুমারী পূজা। এদিন কুমারী রূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করবেন পুণ্যার্থীরা।

তন্ত্রশাস্ত্রমতে, কুমারী পূজা হলো ষোলো বছরের অনধিক অরজঃস্বলা কুমারী মেয়েকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা। বিশেষত দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অঙ্গরূপে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়।কুমারী পূজার উদ্ভব হয় বানাসুর বধ করার মধ্য দিয়ে। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, বানাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন।

সে সকল দেবগণের আবেদনে সাড়া দিযে় দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে বানাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।বৃহদ্ধর্মপুরাণ মতে, দেবী অম্বিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে আবির্ভূতা হয়ে বেলগাছে দেবীর বোধন করতে নির্দেশ দেন। তৈত্তিরীয় আরণ্যকে দেবীকে কুমারী নামে অভিহিত করা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের কন্যাকুমারী মন্দিরে আরাধ্যা দেবী কুমারী রূপেই পূজিতা হন। যেহেতু কুমারী পূজা তান্ত্রিক মতবাদের প্রতিফলন তাই ভারতের সব শক্তিপীঠেই কুমারী পূজা হয়ে থাকে।

কুমারী পূজায় বিভিন্ন বয়সের কন্যাকে বিভিন্ন নামে পূজা করা হয়। এক বছরের কন্যা সন্ধ্যা, দুই বছরে সরস্বতী, তিন বছরে ত্রিধামূর্তি, চার বছরে কালিকা, পাঁচ বছরে সুভগা, ছ’বছরে উমা, সাত বছরে মালিনী, আট বছরে কুঞ্জিকা, ন’বছরে কালসন্দর্ভা, দশ বছরে অপরাজিতা, এগারো বছরে রুদ্রাণী, বারো বছরে ভৈরবী, তেরো বছরে মহালক্ষ্মী, চোদ্দ বছরে পঠিনায়িকা, পনেরো বছরে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে অম্বিকা নামে অভিহিতা হয়। তন্ত্র মতে, কন্যা ঋতুমতী না হওয়া পর্যন্ত তারা দেবীরূপে পূজিত হতে পারে। আরও বলা হয় যে, একটি কুমারী কন্যাকে খাওয়ানোর অর্থ বিশ্বভুবনকে খাওয়ানো।

সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমী তিথিতে ষোলো বছরের কম বয়স্কা কোনো কুমারী বালিকাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করার রীতি আছে।
১৯০১ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ অক্টোবর, স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে প্রথম কুমারী পূজার সূচনা করেন।
কুমারী পূজার দার্শনিক তত্ত্ব হলো- নারীতে পরমার্থ দর্শন ও পরমার্থ অর্জন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যে ত্রিশক্তির বলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি, স্থিতি ও লয় ক্রিয়া সাধিত হচ্ছে, সেই ত্রিবিধ শক্তিই বীজাকারে কুমারীতে নিহিত।

কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার সাধনা করা হয়। পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে বর্ণিত আছে, এ ভাবনায় ভাবিত হওয়ার মাধ্যমে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিজের স্ত্রীকে ষোড়শী জ্ঞানে পূজা করেছিলেন।অন্যদিকে হিন্দু শাস্ত্রে নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধার আসনে বসাতে এবং দেবীর কুমারী রূপের আরাধনা করতেই এই পুজোর বিধান দেওয়া হয়েছে। মনের অন্তরের পশুত্বকে সংযত রেখে নারীকে সম্মান জানানোই কুমারী পুজোর প্রধান ও মূল লক্ষ্য।

দুর্গাপূজার একটি বিশেষ অধ্যায় হল সন্ধিপূজা । দুর্গাপূজার অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিক্ষণে ৪৮ মিনিট এই পূজা হয়ে থাকে। অষ্টমী তিথির শেষ ২৪ মিনিট ও নবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিট নিয়ে মোট ৪৮ মিনিটের মধ্যে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার সকাল ৬টার আগে অষ্টমী পূজা শেষ এবং ৮টার মধ্যে সন্ধি পূজা শেষ হবে।

অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সন্ধিপুজোর আয়োজন করা হয়। এই সময়ে মা দুর্গা চামুণ্ডা রূপে পূজিত হন। কারণ, এই সেই বিশেষ ক্ষণ যখন দেবী চামুণ্ডা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই অসুরকে নিধন করেছিলেন । চণ্ড ও মুণ্ড ছিলেন অসুরের দুই বন্ধু। মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধ চলার সময়, চণ্ড ও মুণ্ড ষুদ্ধের চুক্তি ভেঙে পেছন দিক থেকে দেবীকে আক্রমণ করেছিলেন। তাতেই দেবী রেগে গিয়ে চণ্ড ও মুণ্ডের মুণ্ড কেটে নেন। সন্ধিপুজোর মাহেন্দ্রক্ষণেই দেবী দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন।দুষ্টের দমন ও অশুভ শক্তির বিনাশকাল বলে সন্ধিপুজোর এই সময়টাকে অত্যন্ত শুভক্ষণ বলে মনে করা হয়। এর সঙ্গে বিভিন্ন নিয়ম জড়িয়ে রয়েছে।

বিশেষ করে দেবীর পায়ে ১০৮টি লাল পদ্ম উৎসর্গ করা হয়। এর পাশাপাশি ১০৮টি প্রদীপও উৎসর্গ করতে হয়। কৃত্তিবাসের রামায়ণ অনুযায়ী, রাবণকে বধ করতে আশ্বিন মাসেই রামচন্দ্র অকালবোধন করেছিলেন। সেখানেও সন্ধিপুজোয় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করা হয়েছিল। তাতে উল্লেখ আছে, শিবভক্ত রাবণকে সুরক্ষা দিতেন পার্বতী। তাই ব্রহ্মা রামকে শিবের স্ত্রী পার্বতীকে পুজো করে তাকে তুষ্ট করতে পরামর্শ দেন। তাতে রাবণ-বধ সহজসাধ্য হবে। ব্রহ্মার পরামর্শে রাম শরৎকালে পার্বতীর দুর্গতিনাশিনী রূপের মহাপুজোর আয়োজন করেন।

১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে মহানবমী পুজোর পরিকল্পনা করেন রাম। হনুমান তাকে ১০৮টি পদ্ম এনে দেন। তার থেকে একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন মহামায়া । একটি পদ্ম না পেয়ে রাম নিজের একটি চোখ উপড়ে দুর্গাকে নিবেদন করতে গেলে, দেবী পার্বতী আবির্ভূত হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন।

এই পূজা সম্পন্ন হয় তান্ত্রিক মতে। এই পূজায় দেবীকে আসন, স্বাগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয়, বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ, দীপ, নৈবেদ্য, পুনরাচমনীয়, । এছাড়াও পুংদেবতার তৈল, পৈতা, উত্তরীয় (চাদর), মালা, তাম্বূল (পান); স্ত্রীদেবতার শাঁখা, সিন্দুর, আয়না, চিরুনি, কাজল, আলতা এই ষোলটি উপাচার নিবেদন করা হয়। এই সময় বলিকৃত পশুর স্মাংস-রুধি (মাংস ও রক্ত) এবং কারণ (মদ) দেবীর উদ্দেশ্যে প্রদান করা হয়।

যেহেতু অষ্টমী ও নবমী তিথির সংযোগ স্থলে এই পূজা হয়, তাই এই পূজার নাম সন্ধিপূজা অর্থ্যাৎ সন্ধি-কালীন পূজা। আর দুর্গাপূজার সমাপ্তি লগ্ন শুরু হয়ে যায় সন্ধিপুজোর সময় থেকেই। কারণ, এই সময়টা যে অষ্টমীর বিদায় ও নবমীর আগমনপর্ব।

এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী কৈলাসে ফিরবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version