দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

রুহুল আমিন,ডিমলা (নীলফামারী)

উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিপাতে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদীপাড়ের হাজারো মানুষ। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের সবকটি জলকপাট কয়েকদিন ধরে খুলে রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আজ (২৯ সেপ্টেম্বর) তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে রাত সাড়ে ১২টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ী, পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই, খগাখড়িবাড়ী, টেপাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানী ও ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম ও নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব এলাকায় প্রায় ২ হাজার ৫০০শত মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বেশ কিছু স্থানে তিস্তার বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানির নিচে ডুবে গেছে চর ও নিম্নাঞ্চলের আমন ধান, আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেত ও চলাচলের সড়ক। ভেসে গেছে মাছের পুকুর-খামার। অনেকে গবাদিপশু নিয়েও নিদারুন বিপাকে পড়েছেন। এছাড়াও টানা বৃষ্টিপাতে পানি বাড়ার ফলে উপজেলার সব নদ-নদীর পানির পাশাপাশি বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত আছে। এতে রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি, বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান, শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার দশমিক ২ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বেলা ১২টা থেকে সন্ধ্যা ১০টা পর্যন্ত পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ১০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। ৯টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ০০ সেন্টিমিটার যা বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপৎসীমা অতিক্রম করে।

বাইশ পুকুর এলাকার সবুজ মিয়া (৩০) বলেন, আজ রাত ১১টার পর তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের বাড়িতে পানি উঠেছে। হয়তোবা মধ্যরাতে আবারও পানি বাড়বে। এরকম পরিস্থিতিতে নদীপাড়ের বাসিন্দারা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত্রিযাপন করবে।

সোনাখুলি এলাকার হাবিব রহমান (৫০) বলেন, গ্রামটি তিস্তা ব্যারেজের ভাটিতে হওয়ায় পানি বাড়লেই বন্যায় আক্রান্ত হতে হয়। গতকাল সকালে গ্রামে তিস্তা নদীর পানি প্রবেশ করেছে। ঘরের ভেতরে এখন তিস্তার পানি।

ছোটখাতা এলাকার মাজেদুল ইসলাম (২৭) বলেন, বৃষ্টির কারণে বাঁধ ধ্বসে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে বাঁধ সংস্কার না করলে ভাঙ্গন আরো বড় আকারে রূপ নিতে পারে।

উপজেলার কিসামত চরের বাসিন্দা কৃষক আরিফুল জামান (৩৫) বলেন, আজ ভোর থেকে বাড়িঘরে নদীর পানি ঢুকতে শুরু করেছে। তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় চরের অনেক পরিবার তাদের মালপত্র সরিয়ে নিরাপদে নিয়ে যাচ্ছে।

১০ নং পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল লতিফ খান বলেন, ঝাড়সিংহেশ্বর ও পূর্ব ছাতনাই মৌজার ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৩শত পরিবার পানি বন্দি রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ৭নং খালিশা চাপানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার বলেন, বাইশ পুকুর এলাকায় প্রায় ৪ শতাধিক বাড়িঘরের পানি উঠেছে।নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। সেই সঙ্গে ফসলি জমিতে পানি ওঠায় নষ্ট হচ্ছে আগাম শীতকালীন শাকসবজি ও আবাদি বিভিন্ন ফসল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া শাখার উপ-প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদীন বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করেছে। সকাল থেকে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাত ১১টার দিকে তিস্তার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

ডিমলা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আব্দুস সবুর মিয়া বলেন, গত ৪৮ ঘণ্টায় ডিমলা উপজেলায় ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রংপুর বিভাগসহ দেশের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

ত্রাণ সহায়তার আশ্বাস দিয়ে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, তিস্তার বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। আমরা খোঁজখবর রাখছি। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক দেখভাল করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version