‘Fight for A Fossil Free Future’ অর্থাৎ “জীবাশ্ম জ্বালানি মুক্ত ভবিষ্যতের জন্য লড়াই’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে আজ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ শনিবার কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলার ২টি ইউনিয়ন যথাক্রমে দামপাড়া ও সিংপুর ইউনিয়নের বড়কান্দা প্রতিরক্ষা বাঁধের সামনে এবং সিংপুর ইউনিয়নের টেংগুরিয়া গ্রামে বেসরকারী সংস্থা ‘পিপলস্ ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন-পপি’ পরিচালিত কমিউনিটি ভিত্তিক জলবায়ু সহসশীলতা ও নারীর ক্ষমতায়ণ কর্মসূচি-ক্রিয়া প্রকল্পের উদ্যোগে এবং সুইডেন এ্যাম্বেসি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গ্লোবাল ডে অফ ক্লাইমেট এ্যাকশান ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে দুটি পৃথক পৃথক প্রতিবাদী মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য যে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর ও মার্চ মাসে বিভিন্ন রকমের কর্মসূচীর মধ্যেদিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মানববন্ধনে নিকলী উপজেলা ক্লাইমেট এ্যাকশান গ্রুপ ও ইউথ গ্রুপ ও নারীদলের সদস্যগণসহ এলাকার বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণ অংশগ্রহণ করেন। হাওড়ের জীববৈচিত্র রক্ষা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাওড়বাসীর দুর্দশা তুলে ধরে ভুক্তভোগী অংশগ্রহনকারীগন বক্তব্য রাখেন। মানববন্ধনের মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন পপি-ক্রিয়া প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী জনাব এস এম রেজাউল হক মামুন, তিনি বলেন আমরাও ন্যায্যতা নিশ্চিত করে জীবাশ্ম জালানী বন্ধ ও নবায়নযোগ্য জালানী ব্যবহারের কথা বলছি। যেহেতু আমাদের গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরনের মাত্রা কম এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভুমিকা নেই, তাই আমরা দেশের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানের ক্ষতি না করে নবায়নযোগ্য জালানী গ্রহনের পক্ষে। অপরদিকে ধনী দেশ ও যারা শিল্প বিল্পবের পর থেকে ঐতিহাসিকভাবে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরনে ও জলবায়ু পরিবর্তনে বেশী প্রভাব রাখছে তাদের অতিসত্ত¡র নবায়নযোগ্য জালানী গ্রহনের দাবী জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, কপ-২৬ সম্মেলনের প্যারিস চুক্তির ধারা-৬ [আন্তর্জাতিক সহযোগীতার নামে একটি দেশের কার্বন উদগীরন হ্রাস কার্যক্রমের ফলাফল অন্য দেশে স্থানান্তর অনুমোদনের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দায়িত্ব এড়িয়ে তা অন্যের উপর স্থানাস্থরের ব্যবস্থা করছে। ধনী দেশগুলো আর্থিক সহায়তা দিয়ে দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বিশাল বনভূমি সংরক্ষনের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে তা নিজেদের কার্বন অর্জন হিসেবে দেখিয়ে তারা কার্বন অপসারন করেছে বলে দাবী করবে যা ন্যায্যতা ও ঐতিহাসিক দায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাছাড়া ধনী দেশগুলো ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থাকে উড়িয়ে দিয়ে জলবায়ু পরিবর্তনকে পুজি করে ঋণ ও ব্যবসা ভিত্তিক ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করছে যা জলবায়ু পরিবর্তনের ন্যায্যতা ভিত্তিক সমাধানের পরিপন্থি। তথাপি ধনী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পুরণ করছে না। জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবেলা করার জন্য যে গ্রীন ক্লাইমেট ফান্ড গঠন করা হয়েছে সেখান থেকে ফান্ড পাওয়া বেশ দুস্কর ও সময়সাপেক্ষ। এজন্য আমাদের দাবী ধনী দেশগুলো ন্যাযতা ও ঐতিহাসিক দায়কে আমলে নিয়ে দায়িত্ব নেবে, পাশাপাশি অতিসত্তর নবায়নযোগ্য জালানী গ্রহনের মাধ্যমে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরন কমাবে এবং গরীব বা যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয় যেমন বাংলাদেশ তারা তাদের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ না করে নবায়নযোগ্য জালানী গ্রহন করবে এবং নবায়নযোগ্য জালানীতে ও জালানী নীতিতে নারীদের অবস্থান সুদৃঢ় করবে।

জীবাশ্ম জালানী থেকে নবায়নযোগ্য জালানী গ্রহনের ক্ষেত্রে ন্যাযতা ও ঐতিহাসিক দায়কে আমলে আনার দাবী জানাচ্ছি। মূল প্রবন্ধ পাঠ শেষে দামপাড়া ইউনিয়ন ক্লাইমেট এ্যাকশান গ্রুপের সাধারন সম্পাদক মোঃ মোবারক হোসেন রতন এবং ইউথ গ্রুপের সভাপতি জনাব ইসমাইল হোসেন বক্তব্য রাখেন। বক্তারা প্রকৃতি রক্ষায় জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভরতা কমিয়ে জৈব জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে ফলে প্রকৃতি রক্ষা পাবে। পেট্রল, ডিজেল কিংবা প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার কমানোর ক্ষেত্রে এই ইথানল যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে। সদস্যদেশগুলো আখ উৎপাদন বাড়িয়ে সেই পরিবর্তনে সহায়ক হতে পারবে। ভারত বা বাংলাদেশের মতো দেশের অর্থনীতির জন্য এই জোটবদ্ধতা আরও জরুরি; কারণ, শক্তি পেতে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা এসব দেশে দিন। দিন বেড়ে চলেছে। ইথানল ছাড়াও ভারতে জৈব জ্বালানির আরও কয়েকটি ব্যবস্থার ওপর সরকার জোর দিয়েছে- যেমন গোবর গ্যাস বা কম্পোষ্ট জ্বালানি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দূষণ মোকাবিলার পাশাপাশি কৃষকদের রোজগারও বাড়বে বলে সরকার মনে করে। ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি (আইইএ) অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে ‘জিরো এমিশন’ লক্ষ্যে পৌঁছাতে গেলে জৈব জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার ২০৩০ সালের মধ্যে তিন গুণ বাড়াতে হবে। কাজেই সেই লক্ষ্য পূরণে এ পদক্ষেপ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল জৈব জীবাশ্মের সবচেয়ে বেশি উৎপাদনকারী দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উন্নত বিশ ১০০ বিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রতি বাস্তবায়নে এই প্রথম সদিচ্ছা প্রকাশ করেছে বলেও বক্তারা মানববন্ধনে উল্লেখ করেন। উন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরন থেকে বিরত থাকার আহবান জানান এবং প্রাকৃতিক সম্পদের সঠিক ব্যাবহার, অযথা প্রাকৃতিক নম্পদ বিশেষ করে জ্বালানী হিসেবে কাঠের ব্যাবহার কমাতে এবং পরিবেশ রক্ষায় রেশী করে গাছ লাগানোর আহবান জানান এবং নিজেরা প্রত্যেকেই গাছ লাগানোর অঙ্গিকার করেন। মানববন্ধনে সার্বিক সহায়তা করেন প্রকল্প কর্মী জনাব সেলিনা আক্তার, জনাব মোঃ তরিকুল ইসলাম এবং প্রজেক্ট অফিসার জনাব মোঃ শাহীন হায়দার।

 

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version