ঢাকা, ৮ শ্রাবণ (২৩ জুলাই):

চাকুরিতে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমরা কথা দিয়েছিলাম মঙ্গলবার কোটা সংস্কার বিষয়ক প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সে অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারি করা হল। তাদের এখন পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়ে পড়াশোনা করা উচিত।

আজ ঢাকার গুলশানে নিজের সরকারি আবাসিক অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোটার প্রজ্ঞাপনের বিষয়বস্তু তুলে ধরে আনিসুল হক বলেন, কোটা সংস্কার বিষয়ক সুপ্রীম কোর্টের রায় সরকার  প্রতিপালন করেছে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী এক সদস্যবিশিষ্ট বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটি কাজ করা শুরু করেছে। সহিংসতায় আহত সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের চিকিৎসার ব্যাপারেও সরকার দেখভাল করবে। এছাড়া কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়ে থাকলে সরকার সেগুলো সুনজরে দেখবে।

মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা-সহ সকল ছাত্র-ছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার তৈরি করবে। সাধারণ শিক্ষার্থী যারা কোটা নিয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে হতাহত হয়েছে তাদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে যে আশ্বাস দিয়েছেন সরকার সেপথেই আছে। তাই তাদের আন্দোলনের আর কোনো যুক্তি নেই।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬০% নারী কোটা থাকবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, সরকার সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের রায় প্রতিপালন করেছে। এই রায়ের দাঁড়ি, কমা ও সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। তিনি বলেন, কোটার বিষয়ে অতীতে কখনো কোনো আইন ছিল না। কারণ এটা সরকারের নীতিগত বিষয় যা পরিপত্র বা প্রজ্ঞাপন দ্বারাই বলা হতো।

বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তার আর কোনো অবনতি হবে না উল্লেখ করে আইনমন্ত্রী বলেন, যদি কোনো অপশক্তি এই পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করে তাহলে সরকার তাদের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

সরকার ভবিষ্যতে প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় সুপ্রীম কোর্ট কর্তৃক নির্ধারিত ওইসব কোটা, বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও জানান তিনি।

প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, কারফিউ দেওয়ার ফলে জনগণের মনে যথেষ্ট স্বস্তি ফিরে এসেছে। যখন জনগণের মনে সম্পূর্ণ স্বস্তি ফিরে আসবে, তখনই কারফিউ প্রত্যাহার করা হবে।

সাধারণ ছুটি আরো বৃদ্ধি করা হবে কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে তিনি কোনো নির্দেশনা পাননি। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পেলে বিকেলে জানিয়ে দিবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরে এর সঠিক সংখ্যা ধার্য করা যাবে। তার আগে একটি এসেসমেন্ট করা হচ্ছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে কিছু আছে তথ্য, কিছু আছে অপতথ্য, কিছু আছে গুজব। এসব তথ্য বিভ্রাটকে ব্যবহার করেই জনমনে সার্বক্ষণিক আবেগ-উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়েছে বা সেটাকে ব্যবহার করে নাশকতা করা হয়েছে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশকে বিশ্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করেছে। সরকার পুনরায় ইন্টারনেট চালু করার চেষ্টা করছে; অপতথ্য ছড়ানো প্রতিরোধে কাজ করছে।

এ সময়  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী এবং আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার উপস্থিত ছিলেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version