নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ডুয়েট) নকল টেস্ট রিপোর্ট তৈরির অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ারের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ক্যাশিয়ারের নাম মো. দেলোয়ার।
ডুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের যন্ত্রপাতির মান যাচাই পরীক্ষার রিপোর্ট তৈরিতে যেসব প্যাড ও সীল ব্যবহার করে, হুবহু নকল প্যাড ও সীল রাজধানীর নীলক্ষেত থেকে অর্ডার করে তৈরি করে আনেন ক্যাশিয়ার দেলোয়ার। দীর্ঘদিন ধরে ডুয়েটের নকল রিপোর্ট প্যাড ও সীল বানিয়ে নানা যন্ত্রপাতির ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট তৈরি করছেন দেলোয়ার।
বিষয়টি একপর্যায়ে ডুয়েট কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। পরে অভিযুক্ত দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় ডুয়েট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগের সাথে নীলক্ষেত থেকে নকল প্যাড ও সীল তৈরি করে কুরিয়ারের মাধ্যমে নেত্রকোনায় নিয়ে আসার প্রমাণসহ যুক্ত করে দেয় ডুয়েট কর্তৃপক্ষ।
অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার দেলোয়ারকে শেরপুর বদলি করেছে জনস্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ। তবে তার বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
অভিযোগ প্রাপ্তির নিশ্চিত করে নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দেলোয়ারকে শেরপুরে বদলি করা হয়েছে। এরআগে গত ৩০ এপ্রিল ডুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. হিমাংশু ভৌমিক দেলোয়ারের বিরুদ্ধে নকল প্যাড ও সীল তৈরির বিষয়ে অভিযোগ দেন।
অভিযোগে ডুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. হিমাংশু ভৌমিক জানান, ডুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগ ‘কনসালটেন্সি রিচার্স এন্ড টেস্টিং সার্ভিস (ঈজঞঝ)’ এর আওতায় বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ, বিভিন্ন ধরণের ইন্সপেকশন, বিভিন্ন ধরণের গাড়ির টাইপ এপ্রুভাল ও নানাবিধ যন্ত্রপাতি টেস্টিং সার্ভিস দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সাথে করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে নানা সাইজের পাম্প, পাইপ, ফিল্টার টিউবওয়েল এর নানাবিধ টেস্ট করে রিপোর্ট প্রদান করে আসছে।
সম্প্রতি অভিযোগ পাওয়া যায় যে- নীলক্ষেত থেকে ডুয়েট যন্ত্রকৌশল বিভাগের রিপোর্টের জন্য ব্যবহৃত প্যাড ও সীল দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে তৈরি করছেন নেত্রকোনা জেলা জনস্বাস্থ্যের ক্যাশিয়ার দেলোয়ার।
তিনি আরও জানান, অতি সম্প্রতি আবারও নীলক্ষেত থেকে আমাদের রিপোর্ট ব্যবহৃত ৫০০ পেজের পাঁচটি প্যাডের বই ও এম্বুস সীল নকল করে তৈরি করেছেন তিনি (দেলোয়ার)। যেগুলো দিয়ে ডুয়েট টেস্টের নক রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। এতে ডুয়েটের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট নকল করার মাধমে দেশীয় আইনের শাস্তিযোগ্য অপরাধ করছে। এ ঘটনা তদন্ত করে দোষীকে যথাযথ শাস্তির দাবি জানান তিনি।
নকল প্যাড ও সীল তৈরি করে নীলক্ষেত থেকে নেত্রকোনায় নিজের নাম ও মোবাইল নাম্বার দিয়ে কুরিয়ার করেন দেলোয়ার। কুরিয়ারের স্লিপ ও অভিযোগের সাথে সংযুক্ত করেন ড. হিমাংশু ভৌমিক।
এ বিষয়ে গণমাধ্যম কর্মী সাইফুল আরিফ জুয়েল বলেন, ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট তৈরি করে নিম্নমানের যন্ত্রপাতিকে টেস্টে উত্তীর্ণ দেখাতেই এসব নকল প্যাড ও সীল বানানোর উদ্দেশ্য। অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার জন্য অসৎ উদ্দেশে এসব বানানো। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
অভিযুক্ত ক্যাশিয়ার দেলোয়ার বলেন, নকল প্যাড ও সীল তৈরির বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। নেত্রকোনা থেকে বদলি হয়ে গত বুধবার (১৫মে) শেরপুর জেলাতে যোগদান করেছি। গত ৯মে বদলি হলেও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার কারণে যোগদান করতে দেরি হয়েছে। এ বদলি কোন অভিযোগের কারণে নয়। পাঁচ বছরের বেশি সময় নেত্রকোনায় ছিলাম। সঙ্গতকারণেই এটা নিয়মিত বদলি।
নেত্রকোনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মশিউর রহমান বলেন, দেলোয়ার এসব নকল প্যাড ও সীল অসৎ উদ্দেশ্যেই বানিয়ে এনেছিল। চেক করে দেখেছি এসব ব্যবহার করে সে কোন রিপোর্ট তৈরি করেনি। নীলক্ষেত থেকে প্যাড-সীল তৈরির পরপরই জেনে যায় ডুয়েট কর্তৃপক্ষ। দ্রুত তারা কুরিয়ারে নিয়ে আসার প্রমাণসহ আমার কাছে অভিযোগ পাঠায়। জেনে যাওয়ায় এসব আর ব্যবহার করতে পারেনি দেলোয়ার। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বদলি যদিও কোন শাস্তি নয়। তবে এ বিষয়ে দেলোয়ারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে বলে তিনি জানান।