এ,এম স্বপন জাহান
মধ্যনগর উপজেলা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বেশীরভাগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারেনা শিক্ষার্থীরা। শহীদ মিনারের বিকল্প হিসেবে কোন কোন বিদ্যালয়ে বাঁশ,ইট,কাঁদা মাটি ও কলাগাছ দিয়েই কোন রকম দিবস গুলো পালন করে যাচ্ছে।যদিও সরকারি আদেশ অনুযায়ী প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকার কথা।দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় উদ্যোগ শহীদ মিনার স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।গত ২০২১ সালের মে মাসের ৯ তারিখে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি জানিয়ে সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে একইসাথে সব স্কুলে শহীদ মিনার স্থাপনের নকশা মাঠপর্যায়ের শিক্ষা অফিসগুলোতে পাঠানো হয়েছে।কিন্তু নির্দেশনার পরেও এই উপজেলার ৮৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয় ছাড়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার।
১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের গড়াকাটা গ্রামে গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।সেই থেকে আজ অবদি পর্যন্ত বিদ্যালয় টি তে নেই শহীদ মিনার।শুধু এই বিদ্যালয় নয়,একই ওয়ার্ডের দুলাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চান্দালীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই শহীদ মিনার।
এতে বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে না ভাষার সঠিক তাৎপর্য, জানাতে পারছে না ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।
ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর দিনে এদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়।
তবে এই উপজেলার বেশীরভাগ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইমরান হোসেন জানায়, স্কুলে শহীদ মিনার নেই, তাই ফুল দিতে পারি না।আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রিফাত জানায়, ২১ ফেব্রুয়ারির দিন আমাদের বড় ভাইয়েরা বাঁশ, ইট, কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে। আমরা ওখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই।
গড়াকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা সঠিক ভাবে এই দিনটি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেনা।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি শহীদ মিনার আবেদন করেন।
এ বিষয়ে ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরা বলেন, ভাষার জন্য যারা শহীদ হয়ে ছিলেন, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষা পেয়েছি, যাদের জন্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারি সেই শহীদের জন্য আমরা গর্ব করি। দুঃখের বিষয় আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। শহীদ মিনার তৈরির দাবি জানাই।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, ১৯৭৪ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হলেও গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। গত ৫ বছর ধরে আমাদের স্কুলে ক্ষুদ্র মেরামতের বাজেট আসেনা।এমনকি ২৮৪ জন ছাত্র ছাত্রীর বিপরীতে শিক্ষক সংকটও রয়েছে এই বিদ্যালয়ে।অথচ অন্যান্য স্কুলের চেয়ে আমাদের স্কুলের পড়ালেখার মান উন্নত।
দুলাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক উজ্জল মিয়া বলেন,১৯৮২ সনে দুলাশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে অদ্যবদি পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার গড়ে উঠেনি। যার ফলে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন দিবসে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারছেনা।বিকল্প হিসেবে বাঁশ, খোঁটা, কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে দিনটি পালন করছে বলে জানা যায়।তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য ভাষার সঠিক তাৎপর্য বুঝার জন্য শহীদ মিনার নির্মাণের জোর দাবি জানায়।
লায়েছ ভূইয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক মোহাম্মদ রিপন মিয়া বলেন,
১৯৫২ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবিতে যারা শহীদ হয়েছিলেন তাদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে শহীদ মিনারের প্রয়োজন। বর্তমান প্রজন্ম ২১ ফেব্রুয়ারি কেনো পালন করে সেসব বিষয়ে জানতে পারবে। শহীদ মিনার আমাদের জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করে।আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জানার আগ্রহের জন্য শহীদ মিনার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
মধ্যনগর উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা, ধর্মপাশা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মানবেন্দ্র দাস বলেন,বেশিরভাগ স্কুলেই এখনো শহীদ মিনার তৈরি করা হয়নি। তবে কিছু কিছু স্কুলে আগামীতে বিদ্যালয়ের কোন মেরামত অথবা এলাকাবাসীর টাকা দিয়ে শহীদ মিনার করা হবে।ইতোমধ্যে দুই একটা স্কুলে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।