জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী শিশু (৯) পৈশাচিকভাবে হত্যার পর নদীতে ফেলে দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সোমবার (৬ মে) সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর আয়োজনে বারইপাড়া-কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে অনুষ্ঠিত এ মানববন্ধনে শতশত নারী-পুরুষ অংশগ্রহণ করেন।

এসময় ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই শিশু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ফাঁসি চাই এমন শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে হত্যার শিকার শিশুটির সেই স্কুল চত্তর। তার সহপাঠীরা বিচারের দাবিতে প্লেকার্ড হাতে নিয়ে এ মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।

মানববন্ধনে হত্যার বিচার চাইতে এসে কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটির বাবা বলেন, আমার বলার ভাষা নেই। দুঃখে বুক ফেটে যাচ্ছে। যার যায় সেই বোঝে। নৃশংসভাবে আমার শিশুকে হত্যা করা হয়েছে৷ যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি চাই। আমি আর কিছু বলতে পারছি না।

মানববন্ধন চলাকালে বক্তৃতা করেন বারইপাড়া-কাঞ্চনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরিৎ বরণ সাহা, স্কুলের সভাপতি মো. শওকত হোসেন, জামিলা খানম প্রমূখ।

স্কুলের সভাপতি শওকত হোসেন বলেন, জঘন্যতম এ হত্যাকান্ডের পর এখানকার কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। ভয়ে অনেকে স্কুলে আসতে চাচ্ছে না। না জানি আমার সন্তানের কি হয়, এমন অজানা আতংকে রয়েছেন অনেক অভিভাবক। শিশু হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করা না হলে খুনীরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে।

জামিলা খানম বলেন, শিশুর খুনীরা নরপশু। এরা যেন আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে পার না পায়। এদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃংখলা বাহিনীর প্রতি আহবান জানান। ঘটনার ৫দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও খুনের সঙ্গে জড়িতরা গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

নিহত শিশুর চাচা জানান, গত বুধবার (১ মে) সকাল ৯টার দিকে স্থানীয় সুপার ব্রিক্স ইটভাটায় কর্মরত পিতাকে খাবার দিয়ে বাড়িতে আসার পথিমধ্যে নিখোঁজ হয় সে। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে না পাওয়ায় বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ইসলামপুর এলাকায় নদীতে শিশুর লাশ ভাসতে দেখে পুলিশকে খবর দেয় স্থানীয় লোকজন। শিশুটির গোপন অঙ্গ ক্ষতসহ শরীর এসিড দিয়ে পুড়িয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা শিশুটিকে পৈশাচিকভাবে হত্যার পর নদীতে ফেলে পালিয়ে যায়।

ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান ডা. শরীফ হাসান ফেরদৌস জানান, ওই শিশুর মরদেহে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ধর্ষণের পরই তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে নড়াইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) তারেক আল মেহেদী জানান, শিশু সুফিয়া হত্যাকাণ্ডটি মর্মস্পর্শী ঘটনা। পুলিশ গুরুত্বের সঙ্গে ঘটনাটি তদন্ত করছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর ঘটনার রহস্য পুরোপুরি জানা যাবে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version