আরিফ শেখ, রংপুর প্রতিনিধিঃ
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার শ্যামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারের বিরুদ্ধে ক্লাস চলাকালে বিদ্যালয় ছেড়ে পার্শ্ববর্তী এলাহির বাজারে আড্ডা দিয়ে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে ।
রবিবার (১০ মার্চ) শ্যামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাঙ্গনে গিয়ে এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে । বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাহির বাজারে প্রতিবেদকরা প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারের খোশগল্পে মেতে থাকার ফুটেজ সংগ্রহ করেন সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিট থেকেই । এরও ২ ঘণ্টা পরে প্রতিবেদকের একটি দল দুপুর ১.৪৫ মিনিটে শ্যামগঞ্জ সপ্রাবি তে গেলে সহকারী শিক্ষকরা জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে ১১.৩০ মিনিটে বিদ্যালয় ত্যাগ করেছেন । এর পর থেকে তিনি আর বিদ্যালয়ে ফেরত আসেননি ।
বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতায় উপস্থিতির ঘরে স্বাক্ষর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা পার্শ্ববর্তী এলাহির বাজারে আড্ডা দেওয়ার বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারের মুঠোফোনে একাধিবার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোনটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন দেখায় ।
স্থানীয়রা জানান, শিক্ষকরা স্কুলে এসে আড্ডা দিয়ে চলে যান। শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। মানসম্মত লেখাপড়া না হওয়ায় স্কুলটিতে কেউ ভর্তি হতেও চান না। যারা ভর্তি হয়েছে , তারাও নিয়মিত স্কুলে আসেনা । চতুর্থ শ্রেণীর ক্লাসে আজকে (১০ মার্চ) এসেছে মাত্র ৪ জন ।
প্রধান শিক্ষকের বাড়ি বিদ্যালয়ের পাশেই হওয়ায় তিনি বাড়িতে ও বাজারেই থাকেন সব সময় । কোন কোন দিন তার পরিবর্তে অন্যরাও স্বাক্ষর করে দেন । ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ছবি অবজ্ঞা করার দায়ে এই প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার জটিলতার সৃষ্টি করেছিল, পরে টিও ও এটিও’র দ্রুত নির্দেশনায় সে যাত্রায় বিষয়টি সমাধান করা হয়েছিল । স্কুলের জমি দাতা সদস্য হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করেন না । স্কুলের বরাদ্দ গুলোতেও ঘাপলা করেন ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জনপ্রতিনিধি জানান, আজ সারাদিন শ্যামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার কে বাজারে বিভিন্ন দোকানের বেঞ্চে ও হোটেলে বসে আড্ডা দিতে দেখেছি । রাজনীতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান নিয়েও হোটেলে বক্তব্য দিতে শুনলাম ।
হাজিরা খাতায় উপস্থিতির ঘরে স্বাক্ষর দিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা পার্শ্ববর্তী এলাহির বাজারে আড্ডা দেওয়ার বিষয়ে দুপুর ২ টার দিকে ওই বিদ্যালয়ের দায়িত্বে থাকা এটিও আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমারকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দিয়েও যোগাযোগ করতে পারিনি । তিনি কোন ছুটিও নেন নাই ।
প্রতিষ্ঠান চলাকালে তিনি কেন বাইরে আড্ডা দিচ্ছেন, সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । আপনাদের মাধ্যমে ভিডিও ফুটেজে দেখতে পেরেছি , তিনি দুপুর ২ টার সময়েও হোটেলে বসে গল্প করছেন । টিও স্যার কে বিষয়টি জানানো হয়েছে । তিনি শো’কজ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ।
উল্লেখিত বিষয়ে টিও আঞ্জুমান আরা জানান, বিষয়টি জেনে আমিও একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে তাকে পাইনি। সরকারি চাকুরিজীবীদের অফিস ডিউটি পালনের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্হা গ্রহণ করা হচ্ছে ।
ইউএনও রুবেল রানা জানান, বিষয়টি জানলাম। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।