মো: আরিফুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি:
নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার পারইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ন আহ্বায়ক জাহিদুর রহমানকে (৪৫) তাঁর কার্যালয়ে ঢুকে কুপিয়ে জখম করেছে সন্ত্রাসীরা।

রোববার (১২ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে পারইল ইউপি কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। জাহিদুর রহমান বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

জানা যায়, এ নিয়ে গত দুই মাসে নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলায় বিএনপির চার নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটলো। গত ২৬ সেপ্টেম্বর নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় মালিপুকুর বাজার এলাকায় বিএনপি কর্মী ও স্কুল শিক্ষক আবুল হোসেন ও একই দিন রাণীনগর উপজেলার কালিগ্রাম এলাকায় উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেনকে কুপিয়ে জখম করে।

এরপর গত ২৪ অক্টোবর রাণীনগর বরগাছা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু রায়হানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা ঘটে। পরপর ঘটে যাওয়া এসব ঘটনায় স্থানীয়দের আশঙ্কা রাণীনগর ও আত্রাইয়ে আবারও সন্ত্রাসীদের উত্থান ঘটতে যাচ্ছে।

নওগাঁর রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৬ নির্বাচনী আসন। ২০০৩ থেকে ২০০৫ সালে এই এলাকায় বাংলাভাই, জেএমবি ও সর্বহারা জঙ্গী সংগঠনের উত্থান ঘটে। তখন জঙ্গীরা একই কায়দায় মানুষকে কুপিয়ে হত্যা ও জখম করতো।

পারইল ইউনিয়ন পরিষদের সচিব তরিকুল ইসলাম বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে চেয়ারম্যান সাহেব পরিষদে আসেন। এরপর আমি কিছু কাগজপত্র সই করাতে চেয়ারম্যান সাহেবের রুমে যাই। সেখানে আরেকজন স্থানীয় লোক তাঁর বাবার মৃত্যু সনদ নিতে চেয়ারম্যানের কাছে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর একজন লোক মাস্ক পরে চেয়ারম্যানের রুমের ভেতরে ঢুকে মৃত্যু সনদ নিতে আসা ওই লোকককে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনার কাজ হয়নি।’ ওই লোক বলে, ‘না কাজ হয়নি।’ তখন মাস্ক পরে থাকা ওই লোক বলে যে, ‘তাহলে আপনি একটু পরে আসেন। চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমার কিছু পারসোনাল কথা আছে।’ তার কথামতো মৃত্যু সনদ নিতে আসা লোকটা বের হয়ে যায়। তারপরে হেলমেট ও মাস্ক পরিধানরত আরও ছয়-সাতজন লোক ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে। তাঁরা আমাকে চাকু ধরলে, আমি ভয়ে রুম দৌড়িয়ে চিৎকার করতে করতে বের হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর লোকগুলা বের হয়ে মোটরসাইকেলে চড়ে চলে যাই। চেয়ারম্যানের রুমে গিয়ে দেখি, চেয়ারম্যানের পুরো শরীর রক্তাক্ত। সঙ্গে সঙ্গে লোকজনের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে আদমদিঘী উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।”

তিনি আরও বলেন, দুর্বৃত্তরা চেয়ারম্যানের মুখমন্ডল ছাড়া পুরো শরীরে কুপাইছে। তাঁর পিঠে, বুকে, পেটে একাধিক জায়গায় জখম রয়েছে। তাঁর ডান হাতের কবজিতে এমনভাবে কুপানো হইছে যে, কবজিতে শুধু চামড়া লেগে হাতটা ঝুলে আছে। তিনি বাঁচবে কিনা আল্লাই জানে।

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু ওবায়েদ বলেন, খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে জাহিদুরকে এলোপাতাড়ীভাবে কুপিয়ে জখম করেছে। এ সময় অস্ত্রধারীরা মুখম-লে হেলমেট ও মাস্ক পরে থাকায় তাঁদেরকে কেউ চিনতে পারেনি। তাঁর পিঠে ও ডান হাতের কবজিতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, চলমান আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে অংশগ্রহণ না করে সেজন্য আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বিএনপি নেতাকর্মীদের টার্গেট করে হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনও এখানে নীরব ভুমিকা পালন করছে। পরপর চারটি ঘটনা ঘটলো কিন্তু এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এ ধরণের ঘটনা ঘটতে থাকলে রাণীনগর ও আত্রাই আবারও সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নওগাঁর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রাশিদুল হক বলেন, সর্বশেষ ইউপি চেয়ারম্যানকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনাসহ সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সব ঘটনাকেই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। তবে আপাতত মনে হচ্ছে, এগুলো ব্যক্তিগত রেশারেশি কারণে ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো সংঘবদ্ধ চক্র কোনো নির্দিষ্ট স্বার্থ হাসিলের জন্য এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলছে বলে তার মনে হয় না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version