রাসেলবধ পর্ব
            নির্মলেন্দু গুণ

[ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র, বীর মুক্তিযোদ্ধা
শেখ কামালকে হত্যা করার মধ্য দিয়ে
সেনাবাহিনীর কতিপয় বিশ্বাসঘাতক এবং ভাড়াটে
সৈনিকের নেতৃত্বে যে নারকীয় অভিযান শুরু
হয়েছিলো—— সেই অভিযান সমাপ্ত হয়েছিলো
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠপুত্র দশ বছরের শেখ রাসেলকে
নির্মমভাবে হত্যা করার মধ্য দিয়ে। ]
বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর প্রিয় পত্নী বেগম ফজিলাতু নেসা
মুজিবের ভাগ্য ভালো—— রাসেল—হত্যার নির্মম—
নিষ্ঠুর দৃশ্যটি তাঁদের প্রত্যক্ষ করতে হয়নি।
কালরাত্রির ঐ ভাড়াটে খুনিরা তাঁদের দু্#৩৯;জনেরই
চোখের আলো নিভিয়ে দিয়েছিলো রাসেলকে
হত্যা করার কিছুসময় আগেই। রাসেল ওয়াজ দি
লাস্ট ফিশ।
বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব হয়তো এই বিশ্বাস নিয়েই
তাঁদের শেষ—নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন যে,
তাদের রাসেল হয়তোবা বেঁচে যাবে। বেঁচে থাকবে।
জামাল—কামালকে হত্যা করার পর তারা কিশোর
রাসেলকেও হত্যা করবে——?
না, এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে না বাঙালি।
যদি তারা সবাই সত্যিই বাঙালি হয়ে থাকে।

প্রাণ বাঁচাতে একটা টেবিলের নীচে আত্মগোপন
করেছিলো রাসেল।
আকারে ছোটো ছিলো বলে তার পক্ষে নিজেকে
লুকানো কিছুটা সহজ ছিলো।
কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হলো না।
উন্মত্ত ক্রোধের মৃত্যুশর থেকে বেঁচে যাওয়া ছোট্ট
রাসেলকে খুনিরা সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খু্ধসঢ়;ঁজে
টেবিলের তল থেকে বের করে আনলো।
রাসেল তো বঙ্গবন্ধু ছিলো না যে মৃত্যুর ভয় জয়
করে গুলির সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়ে খুনিদের
ভর্ৎসনা করে বলবে—— ্য়ঁড়ঃ;কী চাস তোরা?্য়ঁড়ঃ;
ছোট্ট হলেও রাসেল তো ততক্ষণে জেনেই গেছিল
———— ওরা কী চায়!

তাই, কোনো প্রশ্ন করার আগেই রাসেল বললো——
্য়ঁড়ঃ;তোমরা আমাকে মেরো না। আমি মার কাছে
যাবো। আমাকে আমার মার কাছে যেতে দাও।্য়ঁড়ঃ;
বুকে বন্দুকের নল চেপে ধরা সৈনিকটি হো—হো
করে হেসে উঠেছিলো রাসেলের কথা শুনে।
সৈনিকটি বললো, ্য়ঁড়ঃ;চল, আমি তোকে তোর
মার কাছে পেঁৗছে দিচ্ছি। কাম অন উইথ মি।্য়ঁড়ঃ;
তাঁকে বিশ্বাস করেছিলো রাসেল,
অবিশ্বাস করার কোনো উপায় নেই জেনেও।
ঐ ইমানি সৈনিকটিও কথা রেখেছিলো।
তবে জীবিত মায়ের পাশে নয়, সে রাসেলকে
নিয়ে গেলো তার নিহত মায়ের শয্যাপাশে।
কিন্তু মা বলে চিৎকার করে ওঠার আগেই
সৈনিকটি ব্রাশফায়ার করে হত্যা করলো
রাসেলকে।
রাসেল লুটিয়ে পড়লো তার প্রিয় মায়ের
বুলেটবিদীর্ণ দেহের ওপর।
রাসেলের বুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া হৃদপিন্ড,
তার মাথা থেকে ছিটকে বেরিয়া আসা মগজ——
রক্ত—মাংস, হাড় ও মজ্জা দিয়ে পৃথিবীর নৃসংশতম
আলপনাটি অঁাকা হলো রক্তের উপরে ভাসমান
তার মায়ের পাশের হলুদ দেয়ালটিতে।
অভিযানের শেষদৃশ্যটি এমন সুচারুভাবে
সম্পন্ন করার জন্য একজন লার্নেড অফিসার ঐ
ইমানি সৈনিকটির কাঁধ চাপড়ে দিয়ে বললো——
্য়ঁড়ঃ;ওয়েলডান, ওয়েলডান, মাই বয়্য়ঁড়ঃ;।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version