দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

মনিরুজ্জামান খান গাইবান্ধা: হাত-পায়ে লোহার শিকলে বন্দি এক যুগ পার করছেন ২২ বছর বয়সী যুবক কাজিম।

জন্মের দশ বছর পরেই মানসিক ভারসাম্য হারান তিনি। দীর্ঘদিন শিকলে বাঁধা জীবন কাটালেও অভাবের সংসারে কোনো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেনি তার অবলম্বন একমাত্র বিধবা নানি আমিনা বেওয়া।

মানুষকে মারধর, বাড়িঘর ভাঙচুর, মহিলাদের আক্রমণ ও ঢিল ছোঁড়ার হাত থেকে বাঁচতে বাধ্য হয়ে কাজিমের হাত-পায়ে দেওয়া হয় লোহার শিকল। নাতিকে সুস্থ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে সরকার, সমাজের বিত্তবান ও সরকারি-বেসরকারি দানশীল সংগঠনের কাছে আর্থিল সাহায্যের আবেদন জানান নানি আমিনা বেওয়া।

সরেজমিনে, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের পশ্চিম কচুয়া গ্রামের (হিন্দুপাড়া) গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, হাত-পায়ে শিকল পরিহিত কাজিম বাড়ির পাশেই রাস্তায় গাছের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় বসে আছে। পাশেই প্লাস্টিকের বস্তা কেটে সেলাই করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ঘুমানোর স্থান। আছে মশারি, নেই শোবার চৌকি বা খাট। মাটিতেই বিছানা পাতানো রয়েছে।

এ সময় প্রতিবেদককে তিনি জানান, কাজিম ছোটকাল থেকেই নানার বাড়িতেই মানুষ হয়েছে। ১০-১২ বছর বয়সেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান।

নানা ছিলেন একজন প্রতিবন্ধী। তিনি ভিক্ষা করেই সংসার চালাতেন। কিন্তু গেল কয়েক বছর আগে মারা যান তিনি। কাজিম অসুস্থ হওয়ার পরপরই এলাকাবাসীর কাছে হাত পেতে যা পাওয়া গেছে তাই নিয়ে তাকে (কাজিমকে) বিভিন্ন হাসপাতাল ও কবিরাজের কাছে চিকিৎসা করা হলেও তিনি সুস্থ হননি। চিকিৎসকরা ঢাকায় চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন কিন্তু পরিবারে টাকার অভাবে তা সম্ভব হয়নি।

এ সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওর বাবার বাড়ি গোবিন্দগঞ্জের পুনতাইর (ফকিরপাড়া গ্রামে)। আমার জামাইয়ের সংসারও ভালো নয়। তাই ছোট থেকেই আমার কাছে মানুষ হয়েছে। অসুখের শুরুতে মানুষের কাছে হাত পেতে কাজিমকে সুস্থ করতে বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও নিয়ে যাই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কাজিম মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছেন বলে জানান চিকিৎসকরা। তারা ভালো চিকিৎসা করতে বলছিলেন কিন্তু অর্থের অভাবে তা করা হয়নি। আমার স্বামী ভিক্ষা করে সংসার চালাতো। তিনি কয়েক বছর আগে মারা যাওয়ার পর আমাদের অবস্থা খুব খারাপ। এ সময় আবেগ আপ্লুত হয়ে বলেন, আমি এখন অন্যের বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে কোনো রকমে তার মুখে দুই বেলা খাবার তুলে দিচ্ছি। অনেক সময় আমাদের খাবারই জুটে না, চিকিৎসার টাকা পাই কই!

তিনি আরও বলেন, ঝড়, বাতাসের মধ্যেও প্লাস্টিকের বস্তায় ঘেরা এখানেই থাকে কাজিম। ঘরে নিয়ে গেলে আমাকে মারধর করে, ভাঙচুর করে। ভয় লাগে দা, বটি, দিয়ে যদি কিছু করে। আলাদা ঘরও নাই, তাই এখানেই থাকে।

প্রতিবেশীরা জানান, অন্তত এক যুগ ধরে শিকলে বন্দি কাজিম। তার একমাত্র ভরসা বৃদ্ধা নানি। নানি অন্যের বাড়িতে কাজ করে যা পান তাই দিয়ে কোনো রকমে নাতির মুখে খাবার তুলে দিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কাজিমের উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি। অতি দরিদ্র পরিবারের বৃদ্ধা নানির পক্ষেও উন্নত চিকিৎসা করা সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসা পেলে কাজিম হয়ত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। এজন্য দেশের হৃদয়বান ব্যক্তি ও দানশীল প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আর্থিক সাহায্যের আবেদন জানান প্রতিবেশিরাও।

প্রতিবেশী আব্দুল হাকিম বলেন, ১২ বছর থেকে রাস্তার ধারের এই গাছটির সঙ্গে লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় জীবন পার করছে এই যুবক কাজিম। দেখে আমাদেরও অনেক খারাপ লাগে। ডাক্তার বলেছে চিকিৎসা করলে ছেলেটি ভালো হবে।

এ ব্যাপারে কচুয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী জানান, অর্থাভাবে কাজিমের চিকিৎসা হচ্ছে না বিষয়টি জেনেছি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পাশাপাশি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্যারের সঙ্গে কথা বলে তাকে যথাসম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইছাহাক আলী বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। আমি নিজেও ওকে দেখতে যাব। আমিনা বেওয়ার ভাতার ব্যবস্থা করাসহ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটা সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version