তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের রাজনগরে একটি সড়কের বেহালদশায় ভোগান্তিতে দুই ইউনিয়নের ২০ হাজার মানুষ। উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের দেওয়ান দীঘির পার হতে কামারচাক ইউনিয়নের তারাপাশা বাজার পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার সড়ক খানা খন্দের জন্য ভোগান্তিতে রয়েছেন কামারচাক ও টেংরা ইউনিয়নের মানুষ।

দীর্ঘদিন থেকে এই সড়কে মেরামত কাজ না হওয়ায় এমনটাই হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। এতে বড় সমস্যায় পড়েছেন এ দুটি ইউনিয়নের মুমূর্ষু রোগী ও গর্ভবতী নারীরা। মনু নদীর বালু মহালের ভারি যানবাহন চলার কারণেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে বলেই মনে করেন উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও স্থানীয়রা।

এদিকে, সড়কটি মেরামতের জন্য ১৫ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা থাকলেও তা এখনো পাস হয়নি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ সড়কে যাতায়াতকারি বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজনগর উপজেলার একটি জনবহুল ইউনিয়ন কামারচাক ইউপি। মৌলভীবাজার ও রাজনগরের সঙ্গে এ ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম টেংরা-তারাপাশা সড়ক। কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের দেওয়ানদিঘির পার হতে দক্ষিণ দিকে কামারচাক ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে রাজনগরের সীমানা পর্যন্ত প্রায় ১০ কি:মি: সড়ক রয়েছে। এরপর রয়েছে কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়ন। এ সড়ক দিয়েই কামারচাক ইউনিয়ন ছাড়াও টেংরা ইউনিয়নের একাংশের মানুষ যাতায়াত করেন। এছাড়াও কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার, কুলাউড়া উপজেলার হাজিপুর ইউনিয়নের মানুষের যোগাযোগের একটি মাধ্যম ওই রাস্তাটি। কামারচাকের তারাপাশা থেকে টেংরা পর্যন্ত এই ৫ কিলোমিটার সড়ক বর্তমানে ভেঙ্গে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় এক বছর ধরে সড়কটিতে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।

ভারি যানবাহন চলাচলে রাস্তায় ধস নেমেছে। কার্পেটিং উঠে এ বড়-বড় গর্তে হয়ে পড়েছে। গর্ভবতী নারী ও রোগীদের নিয়ে চলাচল করতে চরম রকমের বিপাকে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দরা।
জানা যায়, মনু নদীর বালু মহালের বালু পরিবহনে ভারি যানবাহনের কারণে সড়কটি দ্রুতই ভেঙ্গে যাচ্ছে। নিয়ম না মেনে ভারী ট্রাক চলাচল করায় এ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তারাপাশা বাজারের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সামছুল ইসলাম বলেন, তারাপাশা থেকে টেংরা পর্যন্ত যাতায়াতেই যতো ভয়। গাড়ি উল্টে যাওয়ার উপক্রম হয়। পুরো সড়কেই গর্তে ভরা। প্রতিদিনই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও সড়ক ভাঙ্গাচুড়ার অজুহাতে চালকরা ভাড়া বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচছ। এতে সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
তারাপাশা বাজারের সিএনজি অটোরিক্সা চালক মইনুল ইসলাম বলেন, আমাদেরকে প্রতিদিন এ সড়ক দিয়ে মৌলভীবাজার-রাজনগর যাত্রী নিয়ে দিনে কয়েকবার যেতে হয়। কিন্তু সড়ক এতই ভাঙ্গা যে এতে প্রতিদিনই গাড়ির যান্ত্রিক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু দেখার কেউ নেই।

শালন গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী হুমায়ুন খাঁন বলেন, আমাদের ভোগান্তির শেষের কোন অন্ত নেই। আমাদের জন্য রাস্তা নয়, এটা যেন একটি মরণ ফাঁদ। মাত্র ৫ কিলোমিটার রাস্তা পার হতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে। এছাড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা ভাড়া দিতে হয়।
কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান বলেন, ৫ কিলোমিটার এ সড়কের কারণে লোকজনের খুব সমস্যা হচ্ছে। বিশেষ করে রোগী ও গর্ভবর্তী নারীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে, মেরামতের জন্য উপজেলা প্রকৌশল অফিস একটি প্রকল্প তৈরি করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। পাস হয়ে গেলে কাজ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী।
রাজনগর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী নাহিদ আহমদ বলেন, টেংরা তারাপাশা সড়কের রাজনগরের সীমা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কের মেরামতের জন্য ১৫ কোটি টাকার প্রাক্কলিত বাজেট করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বাজেট পাস হলেই সড়ক মেরামত কাজের টেন্ডার করা হবে। বালু পরিবহনে ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে সড়কটি দ্রুতই ভেঙ্গে যায় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version