প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংশ্লিষ্ট দেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহের লক্ষ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর এবার ব্রিটেন, ইতালি ও সৌদি আরবে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর দূতাবাসের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও দিক-নির্দেশনা দিতে দেশটিতে যাচ্ছেন ইসির ৪৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
জানা গেছে, ব্রিটেনে দুটি দলে যাচ্ছেন ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এনআইডি মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সিস্টেম ম্যানেজার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন, বান্দরবানের জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম সাহাদাত হোসেন ও সিনিয়র সহকারী প্রধান মো. রাজিব আহসান। তারা ১৭ থেকে ২৩ অক্টোবর দেশটিতে অবস্থান করবেন।
একই দেশে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অবস্থান করবে ১০ থেকে ২৪ অক্টোবর। এনআইডি অনুবিভাগের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ সোহাগের নেতৃত্বে ওই দলে রয়েছেন এনআইডির উপ-পরিচালক এ এস এম ইকবাল হাসান, সহকারী পরিচালক ফৌজিয়া সিদ্দিক, সহকারী প্রোগ্রামার মো. আখতারুজ্জামান, মো. কামরুল হাসান, মো. সোহেল সিকদার, তানজিমা হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. মাসুদুর রহমান, জাহিদুল ইসলাম ও মেশিন অপারেটর মো. রুকন উদ্দিন শিকদার।
ইতালিতেও দুটি দলে যাচ্ছেন ১৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথের নেতৃত্ব চার সদস্যের দলটি ১৮ থেকে ২৪ অক্টোবর দেশটিতে অবস্থান করবেন। এই দলে অন্য কর্মকর্তারা হলেন স্মার্টকার্ড (আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস-আইডিইএ) দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. নুরুজ্জামান খান, খুলনার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর ও উপ-সচিব মো. মাজহারুল ইসলাম।
অন্যদিকে এনআইডি অনুবিভাগের সিস্টেম অ্যানালিস্টের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের দলটি ইতালিতে ১১ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবস্থান করবে। এতে অন্যদের মধ্যে রয়েছে, এনআইডি অুনবিভাগের সহকারী পরিচালক ফারজানা রহমান, উপ-পরিচালক আরাফাত আরা, প্রোগ্রামার শিফাত জাহান, সহকারী প্রোগ্রামার মো. শাহাবুদ্দিন, জাহানারা আক্তার, মো. সাইফুল ইসলাম, অফিস সহকারী ফাতেমা আক্তার, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মমিনুল ইসলাম, মাহবুবুর রহমান ও তৌহিদুল ইসলাম।
এ ছাড়া সৌদি আরবে যাচ্ছে ১৫ সদস্যের দুটি পৃথক দল। নির্বাচন কমিশনার মা. আহসান হাবিব খানে নেতৃত্বে একটি দলে রয়েছেন এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল মমিন সরকার, রংপুরের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম ও স্মার্টকার্ড দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক শোয়েব আল হাসান। তারা ২২ থেকে ২৮ অক্টোবর দেশটিতে অবস্থান করবেন।
স্মার্টকার্ড দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মো. মামুনুর রশিদের নেতৃত্বে অপর দলটিতে রয়েছেন এনআইডি অনুবিভাগের উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান, মো. তকদির আহমেদ, সহকারী প্রোগ্রামার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, মো. সুজন হোসাইন, মো. ইমাম রায়হান, মেহেদী হাসান, জ্যেষ্ঠ কম্পিউটার অপারেটর আবির হাসান, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোহাম্মদ জাহিদ আকন, রাসেল পাইক ও ইমাম হাসান। ১৫ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ইতালিতে অবস্থান করবেন।
স্মার্টকার্ড দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প থেকে তিন দেশে ওই ৪৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিমান ভাড়া, থাকা-খাওয়াসহ সব ব্যয় বহন করা হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১১ সালে হাতে নেওয়া স্মার্টকার্ড প্রকল্পটির মেয়াদ শেষে সরকারি তহবিল থেকে নেওয়া এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প চলমান। প্রকল্পটি প্রথম হাতে নেওয়ার সময়কার ৯ কোটি ভোটারকে উন্নত মানের এনআইডি দেওয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। অথচ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই নয় কোটি ভোটারের স্মার্টকার্ড বিতরণ সম্পন্ন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ১৮ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিদেশে প্রথম এনআইডি কার্যক্রম শুরু করে ইসি। এ পর্যন্ত এনআইডি পাওয়ার জন্য দেশটি থেকে সাত হাজারের মতো আবেদন পড়েছে। অনেকে এরইমধ্যে এনআইডিও পেয়ে গেছেন। অনেক আবেদন তদন্তাধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা পেয়ে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৯ সালে প্রবাসে এনআইডি সরবরাহের উদ্যোগটি হাতে নেয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনলাইনের ভোটার করে নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করে ইসি।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রবাসীদের মাঝে এ কার্যক্রম শুরু করা হয়। তার আগে একই বছর ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি এবং স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার অংশ হিসেবে অনলাইনে আবেদন নেওয়ার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। এরপর সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপে থাকা বাংলাদেশিদের জন্যও এ সুযোগ চালু করা হয়।
আরও পড়ুন: প্রবাসে এনআইডি: পাসপোর্ট-জন্ম নিবন্ধনের তথ্যে মিল থাকতে হবে
সে সময় অনলাইনে আবেদন নিয়ে সেই আবেদন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপজেলা থেকে যাচাই করে সত্যতা পেলে সংশ্লিষ্ট দেশে দূতাবাস থেকে এনআইডি সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল। এরপর করোনা মহামারির কারণে থমকে যায় দূতাবাসের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই কার্যক্রমকে ফের উজ্জীবিত করেন। এক্ষেত্রে আগের আবেদনগুলো পাশ কাটিয়ে নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেন তারা। ভবিষ্যতে ৪০টি দেশে এনআইডি সেবা নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
প্রবাসীদের আবেদন করতে যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হবে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-অনলাইন জন্মসনদ, বৈধ বাংলাদেশি পাসপোর্টের কপি, এসএসসি অথবা সমমানের শিক্ষা সনদ, আবেদনকারীর পিতা বা মাতা বা ভাই বা বোন অথবা একজন রক্তের সম্পর্কীয় নিকট আত্মীয়ের (বাংলাদেশে বসবাসকারী) এনআইডি নম্বর প্রভৃতি। এ ছাড়া পাসপোর্ট ও জন্ম সনদের তথ্যের মধ্যে মিল থাকতে হবে।