মোঃ বাবুল হোসেন, জয়পুরহাট সংবাদদাতাঃ
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সমিরন নেছা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নামেই মডেল। কোমলমতি শিশুদের জন্য নেই শিক্ষার পরিবেশ। নেই অবকাঠামোগত সুবিধা। ফলে বৈরি পরিবেশে চলছে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেনি পর্যন্ত কোমলমতি শিশুদের পাঠদান কার্যক্রম।
পাঁচবিবির দমদমা গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের মরহুম তফিজ উদ্দিন মন্ডলের স্ত্রী বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী সমিরন নেছার দান করা ২ একর ৩ শতক জমিতে ১৯৬০ সালে বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়টি সরকারি করণ হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এলাকায় আলোক বর্তিকা হিসাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলছে। এখান থেকে হাতে খড়ি নেয়ার পর শত শত ছেলে মেয়ে দেশ বিদেশে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে । শুরুতে তৈরি সেই বিদ্যালয়ের আধাপাকা টিন শেডের ঘর গুলো আজ জীর্নশীর্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। সরকারি ভাবে ৬ কক্ষ বিশিষ্ট একটি দ্বিতল ও ২ কক্ষের একতলা একটি পাকা ভবন থাকলেও মূল ঘর গুলির অবস্থা পরিত্যক্ত প্রায়। কয়েক যুগ আগে তৈরি এসব ঘর গুলোতে নেই পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ের পিছনের অবস্থা আরও শোচনীয়। পিছনের পরিত্যক্ত ঘর গুলোতে রাতে বসে নেশার আড্ডা। আর এসব স্থানে ত্যাগ করা মল মুত্রের দূর্গন্ধের কারনে ক্লাশে আসা শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের টেকা দায় হয়ে পড়ে । বিদ্যালয়ের পূর্ব ও উত্তর পাশে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের নর্দমা । সামান্য বৃষ্টিতে নর্দমার উপচে পড়া নোংরা পানিতে বিদ্যালয়ের মাঠ ভরে যায়। এতে করে শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ অভিভাবকগন পড়েন বিপাকে । এই প্রতিষ্ঠানের পশ্চিম সীমানা ঘেঁষে রয়েছে উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ও দক্ষিণ সীমানায় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির অফিস। বিদ্যালয়টির সামনের কিছু অংশে সীমানা প্রাচীর ও গেট থাকলেও বেশির ভাগ অংশ খোলা। ফলে মাঠের মাঝ দিয়ে অবাধে চলাচল করে লোকজন । বিঘিœত হয় শিক্ষার পরিবেশ। বর্তমানে একজন দক্ষ প্রধান শিক্ষক ও ১২ জন অভিজ্ঞ শিক্ষক মন্ডলী দ্বারা পরিচালিত বিদ্যালয়টিতে মোট ছাত্র সংখ্যা ৫শ ৭ জন। এরমধ্যে বালক ২৫৮ জন এবং বালিকা ২৪৯জন।
পরীক্ষার ফলাফলে প্রায় প্রতি বছর উপজেলার শীর্ষে অবস্থান করা বিদ্যালয়টিতে নেই শিক্ষার সঠিক পরিবেশ। বিদ্যালয়টিতে কিছু দিন আগে একটি পাকা শৌচাগার নির্মান করা হলেও শিশুদের সাথে আসা অভিভাবকদের নেই কোন বসার জায়গা । ফলে রৌদ্র বৃষ্টিতে বিপাকে পড়তে হয় তাদেরকে । অনেক সময় স্কুলের বারন্দায় তাদের বসার কারনে কক্ষে পাঠদানে বিঘœ সৃষ্টি হয়। বেশ কিছুদিন আগে পৌরসভার পক্ষ থেকে অভিভাবকদের জন্য একটা বসার জায়গা নির্মানাধীন হলেও তা কবে শেষ হবে তারও নেই নিশ্চয়তা ।
বিদ্যালয়ে সন্তানকে নিতে আসা মঞ্জুর রশিদ নামের এক অভিভাবক বলেন, পাঁচবিবি পৌর শহরের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টিতে আজ শিক্ষার কোন পরিবেশ নেই। দীর্ঘদিনেও বিদ্যালয়টিতে বাউন্ডারী ওয়াল পর্যন্ত দেওয়া নেই। বিদ্যালয়ের মাঠ দিয়ে অবাধে মানুষজন যাতায়াত করে।
অপর অভিভাক কাজল বলেন, অভিভাকদের বসার কোন জায়গা নেই। স্কুল ছুটির সময় বাচ্ছাদের নিতে এসে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আবার সামান্য বৃষ্টিতেই স্কুল মাঠে পানি জমে থাকার কারণে ছেলে মেয়েরা খেলাধুলা করতে পারে না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ মুক্তা বানু বলেন, কয়েক মাস হলো এই স্কুলের প্রধান হিসাবে যোগদান করেছি। এখানে আসার পর বেশ কিছু সমস্যা চিহিৃত করে সেসব সমাধানের জন্য কাজ করছি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি মডেল বিদ্যালয় হলেও মডেলের ম পর্যন্ত নেই। এই অবস্থায় আমি সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করি। বর্তমানে বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত স্কুলটির উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে সীমানা প্রাচীরসহ মাঠ ভরাটের কাজ চলতি অর্থ বছরে হবে বলেও তিনি জানান ।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার আজিজুল ইসলাম বলেন, এ বিদ্যালয়ে সরকারী ভাবে একটি দ্বিতল ভবন নির্মানের কাজ অচিরেই শুরু হবে। এছাড়া অন্যান্য সমস্যা গুলো পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে।
তারিখ- ২২/০৯/২০২৩ইং