লিমন সরকার (ঠাকুরগাঁও) জেলা প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে বোনকে পৈতৃক জমির ন্যায্য ভাগ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সৎ ভাইদের বিরুদ্ধে। বোন আরজিনা বেগম গ্রামের গণ্যমান্য ব্যাক্তিদেরসহ ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পাননি।
উপজেলার খনগাঁও ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের আমিন উদ্দীন মাস্টার ১৯৯১ সালে মারা যান। এরপর তাঁর নামে রেকর্ড থাকা সম্পত্তি তাঁর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর ছেলে মমতাজ আলী, আবু বক্কর সিদ্দিক, আলতাফুর রহমান, মকবুল হোসেন, আনছারুল ইসলাম ও মফিজুল ইসলাম ভোগদখল করছেন। কিন্তু আমিন উদ্দীন মাস্টারের প্রথম স্ত্রী লতিফা খাতুনের মেয়ে আরজিনা বেগমকে তার সৎ ভাইয়েরা বাবার জমির ন্যায্য অংশ থেকে বঞ্চিত করে রেখেছেন দীর্ঘদিন ধরে। সৎ ভাইয়েরা তার ভাগের প্রাপ্য জমির হিসেব বুঝে দেওয়ার নাম করে ২২ বছর পার করেছেন। জমিজমা নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদেরকে জানিয়ে কোন সমাধান পাননি তিনি।
আরজিনার অভিযোগ, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানোর ফলে উল্টো সৎ ভাইয়েরা রাগান্বিত হয়ে আরও বেশি খারাপ ব্যবহার করছেন তার সঙ্গে। জমির দখল না দেওয়ার জন্য হুমকি প্রদান করেছেন। এছাড়াও তার সৎ ভাইয়েরা তাকে ওই বাড়ির মেয়ে না বলে দাবি করে সব ধরনের উত্তরাধিকারমূলক অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত করাসহ জীবননাশের হুমকি প্রদান করে আসছেন।
এতে উপায়ন্তুর না পেয়ে আরজিনা বাদি হয়ে খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতে তার সৎ ভাইদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। ইউপি চেয়ারম্যান সহিদ হোসেন বিবাদী পক্ষকে নোটিস দেন। কিন্তু বারবার নোটিস পেয়েও আরজিনার সৎ ভাইয়েরা ইউনিয়ন পরিষদে হাজরি হননি। বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান গ্রাম্য আদালতে আদেশে উল্লেখ করেছেন। আদেশে বলা হয়, ‘বিবাদীদের বারবার সমন দেওয়া সত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত রয়েছেন। বাদি আরজিনার আর্জি ও মোখিক জবানবন্দিতে জানা যায়, অভিযোগটির সত্যতা রয়েছে। বিবাদিরা মিমাংসায় অনীহা প্রকাশ করায় বাদিকে সুষ্ঠু বিচারের জন্য উর্ধ্বতন আইন কর্তৃপক্ষের নিকট আশ্রয় নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।’
আরজিনা বেগম বলেন, ‘আমিন উদ্দীন মাস্টারের সন্তান হিসেবে আমার জমির ন্যায্য হিস্যা চাই। যা কালক্ষেপণ করে সৎ ভাইয়েরা যোগসাজশ করে খাচ্ছে। আমি ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতের গিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। উল্টো সৎ ভাইয়েরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে আসছেন। আমি এখন অসহায়।’
এ ব্যাপারে মমতাজ আলী ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর ভুল নম্বরে ফোন দিয়েছেন বলে লাইন কেটে দেন। তবে অপর ভাই আলতাফুর রহমান ও আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আরজিনা আমাদের বৈমাত্রেয় বোন। সে সম্পত্তি পাবে। কিন্তু সে তো আমাদের বাড়িতে আসে না। ওই সম্পত্তি বের করে দিতে পারি এক শর্তে, তা হলো বের করে দেওয়ার পর ওই জমি আমাদের কাছে বিক্রি করতে হবে। এর আগে অন্য দুই বোন তাদের ভাগে জমি আমাদের কাছে বিক্রি করেছেন। তা না হলে সে সেখানে খুশি অভিযোগ দিতে পারে।’
খনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদ হোসেন বলেন, ‘আরজিনা আমিন উদ্দীন মাস্টারের সন্তান। তিনি পিতার সম্পদ পাবেন ।আমিন উদ্দীন মাষ্টারের ছেলেদের অসহযোগিতার কারণে বিষয়টি সুরহা করা সম্ভব হয়নি।’

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version