বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪

মাদারীপুরে একটি বাঁশের সাঁকোই ভরসা ২১ গ্রামের মানুষের

নাজমুল হাসান,মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ

মাদারীপুর সদর উপজেলার ২১ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ একটি বাঁশের সাঁকো। সেই সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়তই আড়িয়াল খাঁর শাখা নদী পাড়ি দিতে হয় এলাকাবাসীর। সাঁকোটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। দীর্ঘ দুই দশক থেকে এভাবেই ভোগান্তি নিয়ে পথ পাড়ি দিচ্ছেন এলাকার শতশত মানুষ।

ঝাউদি ইউনিয়নের হোগলপাতিয়া, বাংলাবাজার, মাদ্রা বাজার ও তালতলা গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া আড়িয়াল খাঁর শাখা নদীর ওপর একমাত্র সাঁকোই ২১ গ্রামের মানুষের ভরসা। সাঁকোটি দিয়ে হেঁটে কোনো রকম পারাপার সম্ভব হলেও কোনো যানবাহন কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে পার হওয়া যায় না।

জানা যায়, জেলার সদর ও উপজেলার হোগলপাতিয়া, চর হোগলপাতিয়া, বাংলাবাজার, চর ব্রামন্দী, তালতলা, মাদ্রা, উত্তর বোতলা, পশ্চিম মাদ্রা, কালাইমারা, টুমচর, সস্তাল, বাজার চর, বালাকান্দি, ব্রিজ বাজারসহ ওই এলাকার একুশটি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরসহ জেলার অন্যান্য স্থানের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের তৈরি সাঁকোটি। বর্ষা আসলে নৌকা দিয়ে এ পথ পার হতে হয়। শহরে যেতে হলে তিনটি সাঁকো পাড়ি দিতে হয় এলাকাবাসীর।

স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়ে ওই খালের ওপর দুইশত মিটার বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। এরপর থেকেই স্থানীয় জনতা প্রতিবছরই এই সাঁকো মেরামত করে পারাপারের ব্যবস্থা করেন। খালের দুই পাড়ে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিকে স্থানীয়দের আক্ষেপ বাঁশের সাঁকোটি পার হতে বৃদ্ধ ও শিশুরা প্রায় পড়ে গিয়ে আহত হন।

এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শতশত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই সাঁকোটির কারণে এলাকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য, কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণ ও রোগীর জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে পড়তে হয় বড় ধরনের বিপদে। এতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকার বাসিন্দাদের। সাঁকো না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই খালের ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের হাজারো মানুষের জীবনযাত্রা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচন শেষ হলে তা আর বাস্তবায়ন করেন না। এখন পর্যন্ত সেতু হয়নি, তাই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে এ বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ঝাউদি ইউনিয়নের চর হোগলপাতিয়া ও বাংলাবাজার গ্রামে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এ সাঁকো। গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করছে। এ সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন ১২১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জ মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয়, মাদ্রা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, তালতলা আলিয়া মাদ্রাসাসহ এসব প্রতিষ্ঠানে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতে হয়।

স্থানীয় জসিম ফকির বলেন, একটি সেতুর অভাবে আমাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে খুব কষ্ট হয়। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা দিয়ে কৃষি পণ্য নিতে দ্বিগুণ খরচ হয়। এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হই। তিনি আরও বলেন, এখানে সেতুর জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেননি তাই সেতু নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর জানায়, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে ভয় করে। তারপরও যেতে হয়। প্রধানমন্ত্রী আমাদের পড়ালেখার কথা চিন্তা করে এখান যেন একটি সেতু করে দেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আতিয়ার রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে সকলেই ব্রিজ করে দেওয়ার কথা বলেন। এমনকি আমাদের স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি নির্বাচনের আগে এসে আমাদেরকে ব্রিজ করে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছিলেন। তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ব্রিজ হলো না।

ঝাউদি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আবুল হাওলাদার বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু নির্মাণের সুপারিশ করা হবে।

মাদারীপুর উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনোয়ার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, একশ মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই খালের ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন হলে সেতু নিমার্ণের কাজ শুরু হবে।

অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।

প্রিয় পাঠক অনলাইন নিউজ পোর্টাল দ্যামেইলবিডি.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন themailbdnews@gmail.com ঠিকানায়।

সর্বশেষ

Exit mobile version