রুহুল আমিন,ডিমলা(নীলফামারী)

নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ছিটলমহল বিনিময়ের ”৮ম বর্ষপূর্তি”। সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নানান অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে ডিমলা উপজেলার বিলুপ্ত ৪টি ছিটমহলের নব্য বাংলাদেশীরা। নিজেদের মধ্যে মতবিনিময়, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা শেষে রাত ১২টা ১মিনিটে মোমবাতি প্রজ্জালন করা হয়।

৩১শে জুলাই সোমবার রাতে উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ছিটমহল কমিউনিটি সেন্টারে বিলুপ্ত ছিটমহল বাসির আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম শাহীন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রেজিনা বেগম, ইউপি সদস্য আব্দুল কুদ্দুস, মো. নুর ইসলাম, মো. নুরুল ইসলাম, মো. ওমর ফারুক, মো. লিখন সরকার ও মো. শামসুল হক প্রমুখ।

বিলুপ্ত ছিটমহল উন্নয়ন কমিটির নেতা মো. জয়নাল আবেদীনের সভাপতিত্বে এ সময় উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ডাঃ মো. রফিকুল ইসলাম, যুগ্ন আহ্বায়ক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় কমিটি মো. মিজানুর রহমান, উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদুল ইসলামসহ বিলুপ্ত ছিটমহলের কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন এ সময়।

মঙ্গলবার রাত ১২টা বাজার সাথে সাথে জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে নব্য বাংলাদেশীরা। পরে একটি আনন্দ মিছিল বিলুপ্ত ছিটমহলের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ করে এতে অংশ নেন সর্বস্তরের সর্বসাধারণ।

উল্লেখ্য ২০১৫ সালের ৩১শে জুলাই দিবাগত মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় হয়। বিগত সময় থেকে তারা সেই দিনটিকে ”মুক্তি দিবস” হিসেবে উদযাপন করছেন। সুদীর্ঘ ৬৮ বছর ছিটমহল নামক ভূখণ্ডে অবরুদ্ধ জীবন থেকে ছিটমহলবাসিদের মুক্তি মিলে আজকের এই দিনে।

১৬২ সাবেক ছিটমহলের মধ্যে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সাবেক ছিটমহল ৫১টি, জমির পরিমাণ ৭ হাজার ১১০ একর। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের সাবেক ছিটমহল ১১১টি, জমির পরিমাণ ১৭ হাজার ১৬০ একর।

১১১টি সাবেক ছিটমহলের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯টি, কুড়িগ্রামে ১২টি, নীলফামারীতে ৪টি ও পঞ্চগড়ে ৩৬টি রয়েছে। ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের ছিটমহলের মালিক হয় ভারত এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের ছিটমহলের মালিক হয় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ছিটমহলে বসবাসকারি ৩৭ হাজার ৫৩৫ জন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অর্জন করে।

সাবেক ছিটমহলবাসি ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানা গেছে, ছিটমহল বিনিময়ের পর থেকেই বঞ্চিত মানুষগুলোকে মূলধারায় যুক্ত করতে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করে। গত ৭ বছরে সরকার সাবেক ছিটমহলগুলোয় যোগাযোগ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্মীয় উপাসনালয়, সামাজিক নিরাপত্তা ও নাগরিকদের সব মৌলিক অধিকার পূরণ করেছে।

নীলফামারী জেলায় ৪টি বিলপ্ত ছিটমহলের মধ্যে খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে ২৮ নং বড়খানকিবাড়ি ছিটমহল, গয়াবাড়ি ইউনিয়নে ২৯ নং বড়খানকি খারিজা গিদালদহর ছিটমহল ও ৩০ নং বড়খানকি খারিজা গীদালদহে এবং টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নে ৩১ নং জিগাবাড়ি ছিটমহল। এই চারটি ছিটমহলই নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় অবস্থিত।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version