তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৩টি চা বাগানের জনগোষ্ঠীরা বর্তমানে ১০০ শতাংশ নলকূপের পানি পান করছে, যা পূর্বে ৯১ শতাংশ ছিল। বুধবার সকালে ব্র্যাক লানিং সেন্টারে ওয়াশ এসডিজি ডব্লিউএআই প্রকল্পের এন্ডলাইন স্ট্যাডির ফলাফল উপস্থাপনা এবং পরবর্তী পরিকল্পনা গ্রহন শীর্ষক কর্মশালায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরেন সিমাভী’র এমইএল অফিসার শামসুর রহমান।

সিমাভী’র আয়োজনে ও আইডিয়া’র সহযোগিতায় আয়োজিত কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নারী ভাইস-চেয়ারম্যান মিতালী দত্ত, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক শাহেদা আকতার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, আইডিয়া’র নির্বাহী পরিচালক নজমুল হক, সিমাভী’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর অলক কুমার মজুমদার, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাব সভাপতি বিশ্বজ্যোতি চৌধুরী বুলেট, উপজেলা প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক বিকুল চক্রবর্তী, রাজঘাট ইউপি চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী, সাতগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান দেবাশীষ দেব রাখু, আইডিয়ার প্রকল্প ব্যবস্থাপক পঙ্কজ ঘোষ দস্তিদার প্রমূখ।

এছাড়াও বিভিন্ন পঞ্চায়েত, ইউনিয়ন সচিব, গণমাধ্যমকর্মী ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নারী ও পুরুষ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। কর্মশালা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইডিয়ার (লজিস্টিক) ম্যানেজার সুষমা ভট্টাচার্য্য।

প্রকল্পটি চা বাগান ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাও, রাজঘাট ও কালিঘাট ইউনিয়নের আশেপাশের সকল দুর্গম এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, এবং স্বাস্থ্য অভ্যাস নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে।

প্রকল্পটির উপস্থাপনকৃত জরিপের তথ্য অনুযায়ী শ্রীমঙ্গল উপজেলার তিনটি চা বাগানে নলকূপ থেকে বর্তমানে পানি পান করছে ১০০ শতাংশ, যা পূর্বে ছিল ৯১ শতাংশ। নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় পানি পাচ্ছে ৪৩ শতাংশ। নিরাপদে পানির ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে ১৯ শতাংশ, যা পূর্বে ছিল ৪ শতাংশ। পানিতে ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ ২৩ শতাংশ কমেছে, যা পূর্বে ২৭ শতাংশ ছিল। চা বাগানে বর্তমানে ৪৮ শতাংশ পাকা টয়লেট রয়েছে। এখন ৩২ শতাংশ প্রতিবন্ধি ব্যক্তিরা নিরাপদে টয়লেট ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে ১০ শতাংশ পরিবার তাদের স্যানিটেশন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত ভাবে ব্যবস্থা করছে। পরিবার মৌলিক স্ব্যস্থবিধি মেনে চলছে ৯২ শতাংশ, যা পূর্বে ছিল জিরো দশমিক ৩০ শতাংশ। পূর্বে ৯৩ শতাংশ পরিবারের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু তা এখন ২ শতাংশ। তাছাড়া, পানি, স্যানিটেশনের জন্য নিজের খরচে নির্মান অথবা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে পরিবার কাজ করছে ৭৯ শতাংশ।

এছাড়াও প্রকল্পটি জানায়, স্থানীয় পর্যায়ে ওয়াশ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহনে নারী এবং মেয়েদের অংশগ্রহন বেড়েছে। চা বাগানে নারী ওয়াশ উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে এবং ক্ষুদ্র ঋন প্রদান করেছে। স্থানীয় ওয়াশ বাজেটের পরিমান এবং ব্যয়কৃত ওয়াশ বাজেট বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে ওয়াশ বিষয়ক সিদ্ধান্ত গ্রহনে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহন বেড়েছে। ১১টি ওয়াশ সম্পর্কিত সেবা বা পণ্যের জন্য পরিবার অথবা কোন উদ্যোক্তা লোন নিতে পারছেন যেখানে পূর্বে ১ টি পন্যের জন্য লোন নেয়া যেত।

প্রকল্পটির জরিপে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৭নং রাজঘাট, ৮নং কালীঘাট ও ৯নং সাঁতগাও ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার নির্দিষ্ট সংখ্যক বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাগান পঞ্চায়েত, লেবার ইউনিয়ন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ, চা বাগান কর্তৃপক্ষ,স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান।

উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ড সরকারের আর্থিক ও সিমাভী’র কারিগরি সহায়তায় ২০২১ সাল থেকে বাংলাদেশ ওয়াশ এসডিজি প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে। মূলত প্রকল্পটি বাংলাদেশের সাতক্ষীরা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও মৌলভিবাজার জেলার ৭টি পৌরসভা এবং ২০টি ইউনিয়ন ও ৩টি চা বাগানে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা (ডরপ, উত্তরণ, স্লোব বাংলাদেশ, হোপ ফর দ্যা পুরেষ্ট, প্র্যাকটিক্যাল একশন, ওয়াটারএইড বাংলাদেশ ও আইডিয়া) কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version