ফুটবলে মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের শুরু আর সর্বশেষ লড়াইয়ের কত অমিল। আশির দশকে যে দ্বীপরাষ্ট্রকে টানা তিন ম্যাচে ১৮ গোলের বন্যায় ভাসিয়েছিল লাল-সবুজের দলটি, তারাই কিনা একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শেষ ছয় ম্যাচে জিতেছে মাত্র একটিতে! ছোট্ট এই পরিসংখ্যানটি হয়তো অনেকের কাছে বিস্ময়কর মনে হচ্ছে; কিন্তু এটাই বাংলাদেশের ফুটবলের সত্যিকার চিত্র। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই মালদ্বীপকে হারিয়ে সর্বশেষ এবং একমাত্র ট্রফি জিতেছিল বাংলাদেশ। অথচ ২০১১ সাল থেকে একই মঞ্চে বাংলাদেশের জন্য বড় ধাঁধা মালদ্বীপ।
বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তেভেরা স্টেডিয়ামে আজ সেই মালদ্বীপের বিপক্ষে অগ্নিপরীক্ষায় নামছে বাংলাদেশ দল। বৃহস্পতিবার লেবাননের কাছে হারের পরই মালদ্বীপ ম্যাচটি হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার দলের জন্য হয়ে ওঠে অঘোষিত ‘ফাইনাল’। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় শুরু হবে ম্যাচটি।
দু’বছর আগের আর এবারের সাফে মুখোমুখি হওয়ার আগে বৈপরীত্যের মিল আছে দু’দলের মধ্যে। ২০২১ সালে ঘরের মাঠে সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ ম্যাচের আগে মালদ্বীপ হেরেছিল নেপালের কাছে। আর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। এবার প্রথম ম্যাচের ফলটা ভিন্ন। লেবাননের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ২-০ গোলে আর ভুটানের বিপক্ষে ফ্রান্সিস্কো মরেইরার দল জিতেছে একই ব্যবধানে। সাফের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর বাংলাদেশের সেমিফাইনালে খেলার রেকর্ড খুব সুখকর নয়। ১৯৯৫ সালে সার্ক গোল্ড কাপ নামে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায় প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে ১-০ গোলে হারলেও শেষ চারে খেলেছিল লাল-সবুজের জার্সিধারীরা। এখন পর্যন্ত সেটিই ছিল প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ার পর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। ২৮ বছর আগের সেই স্মৃতিটা বেঙ্গালুরু ফিরিয়ে আনাটা কঠিন হলেও বিশ্বাস হারাচ্ছেন না আনিসুর রহমান জিকো-বিশ্বনাথ ঘোষরা। সেই বিশ্বাসটা অবশ্য লেবানন ম্যাচ থেকেই পেয়েছেন তাঁরা। ৬০ মিনিটে ফয়সাল আহমেদ ফাহিমের অবিশ্বাস্য মিস, ৮০ মিনিটে তারিক কাজি এবং অতিরিক্ত সময়ে ঈসা ফয়সালের ভুল ছাড়া র্যাঙ্কিং ৯৩ ধাপ ওপরে থাকা লেবাননের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে তপু বর্মণ-রাকিবরা ছিলেন দুর্দান্ত।
শনিবার কর্নাটক স্টেট ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে সেই ভুলগুলো নিয়েই বেশি কাজ করেছেন কোচ ক্যাবরেরা। লেবানন ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে মালদ্বীপের বিপক্ষে জ্বলে ওঠার আশায় সবাই। রক্ষণাত্মক নয়, শুরু থেকে অলআউট ফুটবল খেলার কৌশলে দল সাজাতে পারেন ক্যাবরেরা। কোন কৌশলে খেলবেন, সেটা না বললেও ৩ পয়েন্টের কথা বলেছেন বাংলাদেশ কোচ, ‘আমরা প্রস্তুত। আমাদের জন্য ম্যাচটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খেলে লেবাননের বিপক্ষে পয়েন্ট না পাওয়ায় হতাশ। এখন আমাদের জয়ের বিকল্প কিছু নেই। আগামীকালের ম্যাচটি কঠিন। কারণ, প্রতিপক্ষ মালদ্বীপও শক্তিশালী দল। আমরা কিছু অর্জন করতে চাই।’ কিন্তু সাফে শেষ তিনবারের দেখাতে দ্বীপরাষ্ট্রের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। অতীত নিয়ে পড়ে থাকতে চান না ক্যাবরেরা, ‘অতীতে কী হয়েছে তা নিয়ে পড়ে থাকেত চাই না। আমরা বর্তমানকেই ফোকাস করছি। লেবানন ম্যাচ থেকে ইতিবাচক অনেক কিছুই খুঁজে পেয়েছি আমরা। এটাও জানি, মালদ্বীপ সাফের অন্যতম শক্তিশালী দল। ছেলেদের ওপর আমার বিশ্বাস আছে। আমি মনে করি, মালদ্বীপ ম্যাচটি ফিফটি-ফিফটি। দলের সবাই এই ম্যাচ সম্পর্কে জানে। কতটা লড়াই করতে হবে তা জানে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়েছে। সবার টার্গেট জয়।’
মালদ্বীপের বিপক্ষে সর্বশেষ জয়টি এসেছিল ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর কলম্বোয় চার জাতি টুর্নামেন্টে। ওই ম্যাচে তপু বর্মণের গোলেই জিতেছিল বাংলাদেশ। দুই বছর পর ভিন্ন মঞ্চে সেই মালদ্বীপ। এবার তো অনেক বড় চাপ। অতীতে চাপের মুখে ভেঙে পড়ার যে নজির আছে, তাতে সাক্ষী ছিলেন তপু। মালদ্বীপের বিপক্ষে তাই মাস্ট উইন ম্যাচে চাপকে জয় করার প্রত্যয় বসুন্ধরা কিংসের এ ডিফেন্ডারের, ‘আমরা সবাই ম্যাচিউরড। সবাই অনেক দিন ধরে জাতীয় দলে খেলছি। আমাদের কিন্তু ধারণা আছে। বিগত অনেক ম্যাচ খেলেছি, যেখানে মাস্ট উইন ম্যাচে আমরা হেরে গেছি। এবার আমাদের জন্য ভিন্ন পরিস্থিতি। আমরা মনে করছি, এই ম্যাচটি আমাদের জন্য ফাইনাল। কারণ, এটা যদি আমরা জিততে না পারি, তাহলে একেবারেই সাফ থেকে আমরা আউট হয়ে যাব। তাই সব প্লেয়ারের জন্য অনেক বড় দায়িত্ব।’
সবুজ গালিচায় সেই দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হবে, তা টিম মিটিংয়ে, অনুশীলনে শিষ্যদের বলেছেন কোচ ক্যাবরেরা। লেবানন ম্যাচের পুনরাবৃত্তি যেন মালদ্বীপের বিপক্ষে না হয়, সেই আলোচনাই চলছে ফুটবলাঙ্গনে।