দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে বড় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচন বর্জন করায় ফাঁকা মাঠে নৌকার জয় নিশ্চিতই ছিল। আওয়ামী লীগের ডাকে ভোটাররা কেন্দ্রে যাবেন, নাকি বিএনপির আহ্বানে ভোট থেকে বিরত থাকবেন– ফলের চেয়ে এ নিয়েই আগ্রহ ছিল বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, ভোটার উপস্থিতিতে সফল হয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহীতে ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ। সিলেটে ভোটের হার ৪৬ দশমিক ৭১ শতাংশ।

রাজশাহীতে ৩০ ওয়ার্ডের অনেক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় সংঘাতের শঙ্কা ছিল। সিলেটের ৪২ ওয়ার্ডে প্রায় সব দলের নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় সেখানেও ছিল একই শঙ্কা। তবে গতকাল বুধবার ভোট গ্রহণের সময় দুই সিটির কয়েক জায়গায় কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া ছাড়া বড় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে দুই সিটিতে।

ভোটার উপস্থিতি ৫০ শতাংশের কিছু বেশি হলেও ইভিএমে ভোট গ্রহণে ধীরগতির কারণে ভোটারের দীর্ঘ লাইন ছিল। দুই সিটিতে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর ভোট দিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা বলেছেন, ভোটাররা ইভিএমে অভ্যস্ত না থাকায় বাড়তি সময় লেগেছে এবং ভোগান্তি হয়েছে। বৃষ্টি আর গরমও ভুগিয়েছে তাঁদের। সিলেট সিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া বর্ধিত এলাকায় ভোটার উপস্থিতি অন্য যে কোনো স্থানের চেয়ে বেশি ছিল। ভোগান্তি হলেও নারীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন ধরে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেন।

তুলনামূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে সিলেটে। সেখানে ক্ষমতাসীন দলের অনোয়ারুজ্জামান নৌকা প্রতীকে ১৯০ কেন্দ্রে ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তাঁর বাকি সাত প্রতিদ্বন্দ্বী মিলে প্রায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬৫২ ভোট পেয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট পেয়েছেন। বাকি ছয় মেয়র প্রার্থী পেয়েছেন ৫৫ হাজার ৭৯০ ভোট। ২৯ হাজার ৬৮৮ ভোট পেয়ে চমক দেখিয়েছেন সাইকেলে করে ভোটের প্রচার চালানো বাস প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহজাহান মিয়া। তিনি পেশায় গৃহশিক্ষক। বরিশালে দলীয় প্রার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে নির্বাচন বর্জন করা ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান হাতপাখা প্রতীকে ১২ হাজার ৭৯৪ ভোট পেয়েছেন। ভোটের মাঠে পরিচিতি না থাকা বাকি প্রার্থীরাও আড়াই থেকে ৫ হাজার ভোট পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়া বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের সমর্থকরা আওয়ামী লীগ বাদে বাকি প্রার্থীদের ভোট দিয়েছেন।

রাজশাহীতে কাউন্সিলর পদে বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী কম হওয়ায় সেখানে দল দুটির সমর্থকরা ভোট দিয়েছেন কম। ১৫৫ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯০ ভোট পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকা জাতীয় পার্টি এবং জাকের পার্টির প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই আসতে পারেননি। নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া চরমোনাইর পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের মো. মুরশিদ আলম হাতপাখা প্রতীকে ১৩ হাজার ৪৮৩ ভোট পেয়েছেন। তিনি নিজের ভোটও দেননি।

রাজশাহীর রাজনীতিতে উপস্থিতি না থাকলেও জাকের পার্টির মো. লতিফ আনোয়ার গোলাপ ফুল প্রতীকে ১১ হাজার ৭১৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীকে ১০ হাজার ২৭২ ভোট পেয়ে চার প্রার্থীর প্রতিযোগিতায় চতুর্থ হয়েছেন জাতীয় পার্টির মো. সাইফুল ইসলাম স্বপন। এই দুই প্রার্থীই সব কেন্দ্রে এজেন্ট দিতে পারেননি।

রাজশাহীর কোথাও ভোটার বেশি, কোথাও কম সকাল ৮টায় নগরীর বিবি হিন্দু একাডেমি কেন্দ্রে অনেক ভোটার উপস্থিত হন। ইভিএম প্রস্তুত করতে পাঁচ মিনিট দেরিতে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। সকাল ১০টায় আটরশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে কয়েকশ ভোটার অপেক্ষা করছেন। ভোটারজটের কারণ জানতে চাইলে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে ভোট শুরুর ২০ মিনিট পর্যন্ত স্যাটেলাইট টাউন হাই স্কুল কেন্দ্রে একজনও ভোট দেননি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের সঙ্গে কয়েকজন নেতাকর্মী আসেন ভোট দিতে। প্রথম দেড় ঘণ্টায় ওই কেন্দ্রে ভোট পড়ে মাত্র ৭০টি। সেখানে ভোটার ১ হাজার ৮০০। প্রথম ঘণ্টায় বরেন্দ্র কলেজ কেন্দ্রে ভোট পড়ে ৭ শতাংশ।
সকাল ৯টার পর স্ত্রী শাহীন আকতার রেণী, দুই মেয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা ও মাইশা সামিহা জামান শ্রেয়াকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রে যান নৌকার প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন। ভোটের পরিবেশ নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য বলেন, নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। তারা প্রার্থী দিলে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে পারত। উন্নয়নের পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁরা বিএনপি-জামায়াতের ভোটার হলেও নৌকায় ভোট দেবেন বলে আশা করছি।

নির্বাচন থেকে সরে যেতে চাইলেও দলীয় সিদ্ধান্তে শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকা জাতীয় পার্টির প্রার্থী বলেন, ফল যা-ই হোক; মেনে নেব। কেন্দ্রে এজেন্ট না থাকার বিষয়ে লাঙ্গলের প্রার্থী স্বপন বলেন, ৬০-৬৫ কেন্দ্রে এজেন্ট দিয়েছিলাম। ঢুকতে দেয়নি।

নগরীর মুসলিম হাই স্কুলে ভোট দিয়ে জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ বলেন, শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। অভিযোগ নেই। ইভিএমের ধীরগতির কারণে কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট গ্রহণে দেরি হচ্ছে। আমরা ভালোবাসা বিলাতে এসেছি। তাই এজেন্ট দিইনি।
কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, কোথাও গোলযোগ হয়নি। নির্বাচন-পরবর্তী সংঘাত ঠেকাতে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে।

৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিনের সমর্থকদের সঙ্গে আরেক প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম বাবুর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। দুই প্রার্থীরই নির্বাচনী ক্যাম্পের চেয়ার ভাঙচুর করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ইভিএম নিয়ে ভোটারদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন সহজ, কেউ বলছেন জটিল। আঙুলের ছাপ না মেলায় অনেকে ভোগান্তিতে পড়েন। নগরীর ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধরমপুর সমশের আলী মোল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে চারবারের চেষ্টায়ও ভোট দিতে পারেননি আবুল কালাম আজাদ। তবে ইভিএমে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন সাহেরা পারভীন। তিনি বলেন, প্রথমবার ইভিএমে ভোট দিলাম, খুবই ভালো লাগছে। এটি সহজও।

সিলেটে ভুগিয়েছে ইভিএম
সিলেটে সংঘাত-সহিংসতা না হলেও ভুগিয়েছে ইভিএম। নতুন ১৫টি ওয়ার্ডের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি ছিল লক্ষণী। তাদের কেন্দ্রমুখী করেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সিলেটে ১৯০ কেন্দ্রের ১ হাজার ৩৬৭টি বুথে ভোট গ্রহণ করা হয়। ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের শাহাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৮টায় লাইনে দাঁড়ানোর পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভোট দেন রুমেনা। তিনি জানান, তাঁর সামনের সারিতে মাত্র ১৫-১৬ জন ভোটার ছিলেন। অথচ ভোট দিতে তাঁকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে আড়াই ঘণ্টা। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণ গোবিন্দ বিদ্যালয় কেন্দ্রে রজব আলী ও বাচ্চু মিয়া সকালে ভোটের শুরুতে লাইনে দাঁড়ালেও ভোট দেন ১১টার দিকে।

সকাল ৮টায় সিলেটের শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে দেখা যায় নারী ভোটারের দীর্ঘ লাইন। তেমুখি এলাকার রশিদিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মইনুন নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের শেখপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়. ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষ্ণ গোবিন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রসহ অনেক কেন্দ্রেই নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। রাজশাহীর মতো সিলেটেও নৌকা বাদে অন্য মেয়র প্রার্থীদের এজেন্ট ছিল না সব কেন্দ্রে।

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সকালে পাঠানটুলা শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ভোট দেন। সুবিদবাজার এলাকার আনন্দ নিকেতন কেন্দ্রে সকালে ভোট দেন জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল। ভোট দেননি ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version