চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিয়ের প্রতি সামগ্রিক অনীহা। ঘটা করে বিয়েতে আর আগ্রহী হচ্ছেন না অনেকেই। সংসার পেতে সন্তান পালনেও একই রকম অনীহা দেখা গিয়েছে।
স্থলে, জলে, অন্তরীক্ষে যতই শক্তি বৃদ্ধি হোক, দিন দিন নড়বড়ে হচ্ছে চিনের অন্দরমহল। ২০২০ সালের করোনা অতিমারি বিশ্বের অন্যতম জনবহুল এই দেশটিকে বিবিধ সমস্যার সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
অতিমারিতে দীর্ঘ লকডাউন চিনে বেকারত্ব কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারের কঠোর নীতি জনগণকে করে তুলেছে বীতশ্রদ্ধ। এই পরিস্থিতিতে চীনা সমাজে নতুন প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
চীনের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বিয়ের প্রতি সামগ্রিক অনীহা তৈরি হয়েছে। কেউ আর সে ভাবে ঘটা করে বিয়ে করতে চাইছেন না। সন্তান পালনেও আগ্রহ হারিয়েছেন চীনা যুগলেরা।
২০২১ সালের পরিসংখ্যান বলছে, সে বছর চীনে ৭৬ লক্ষ ৩০ হাজার যুগল বিয়ের জন্য সরকারি খাতায় নাম নথিভুক্ত করিয়েছিলেন। ২০২২ সালে এক বছরের মধ্যে সেই সংখ্যা তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে কমেছে।
২০২২ সালে চীনে বিয়ে করেছেন ৬৮ লক্ষ ৩০ হাজার যুগল। পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে যা ১০.৫ শতাংশ কম। ১৯৮৬ সালের পর থেকে চীনে কোনও বছর এত কম বিয়ে নথিভুক্ত হয়নি। সম্প্রতি এই পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে এনেছে বেজিং।
চীনে বিয়ের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০১৩ সালে। সে বছর ১ কোটি ৩০ লক্ষ যুগল বিয়ে করেছিলেন। তার পর থেকেই বিয়ের নথিভুক্তি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে।
শুধু বিয়ে নয়, চীনে ক্রমাগত কমছে জন্মহারও। ২০২২ সালে প্রতি ১০০০ জনে জন্মহার ছিল মাত্র ৬.৭৭ জন। ১৯৪৯ সালে চীনে কমিউনিস্ট পার্টির সূচনালগ্ন থেকে এমন পরিসংখ্যান কখনও দেখা যায়নি।
জন্মহার কমে যাওয়ার প্রভাব পড়ছে চীনের জনসংখ্যাতেও। ২০২২ সালে দেশটির জনসংখ্যা নজিরবিহীন ভাবে কমে গিয়েছে। ১৪০ী কোটি জনসংখ্যা নিয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ নেমে গিয়েছে চীন। তারা এখন বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ (ভারতের পরে)।
বিয়েতে অনীহা, জন্মহারে ঘাটতি এবং সার্বিক ভাবে দেশের জনসংখ্যা হ্রাসের এই পরিসংখ্যান প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের এই অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলির সমাধানের উপায় খুঁজছেন তিনি।
বিয়ের প্রবণতা কমে আসা, বার্ধক্য বৃদ্ধি এবং জনসংখ্যায় ঘাটতি চীনকে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে দাঁড় করাতে পারে। এর ফলে সামগ্রিক ভাবে দেশের মানুষের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে। উৎপাদন ব্যবস্থায় যার প্রভাব অনিবার্য।
অতিমারি পর্বের পর চীনে জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেড়ে গিয়েছে। পাশাপাশি, তরুণ প্রজন্ম উপলব্ধি করেছে কেরিয়ারে উন্নতির সুযোগ, নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের হাতছানি অন্য দেশে অনেক বেশি। অনেকেই তাই দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বিবাহবিচ্ছেদেও হ্রাস টেনেছে চীন সরকার। বিচ্ছেদে ইচ্ছুক দম্পতিদের বাধ্যতামূলক ভাবে এক মাসের জন্য একসঙ্গে থাকতে বলা হয়েছে। তবে সরকারের যাবতীয় প্রচেষ্টা সত্ত্বেও চীনের জনসংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। যা চিন্তায় রেখেছে জিনপিংকে।