১-০ গোলের এই জয় সিটিকে শুধু প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের ট্রফিই এনে দিল না, ইউরোপের ইতিহাসে দশম দল হিসেবে ট্রেবলও জিতে গেল সিটি। ইংলিশ ক্লাবগুলোর মধ্যে এ কীর্তি এর আগে ছিল শুধু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের।

ফাইনালের আগেই সিটিকে যতটা এগিয়ে রাখা হয়েছিল, ম্যাচের শুরু থেকে সেটা মোটেও মনে হয়নি। বরং ইন্টার মিলানই চমকে দিয়েছে কিছুটা দাপুটে ফুটবল খেলে। সিটির পায়ে বেশিক্ষণ বল থাকতে দেননি সিমোন ইনজাগির শিষ্যরা। সিটিকে টানা কয়েকটার বেশি পাস খেলতে দেয়নি ইন্টার। বিশেষ করে মাঝমাঠে তো শুরু থেকেই দারুণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ইন্টার মিলান। ফলে স্বভাবসুলভ বল দখলে রেখে আক্রমণ গুছানোর কাজটাই করতে পারেনি সিটি। ওদিকে ইন্টারের লেফট উইঙ্গার ফেদেরিকো দিমার্কো শুরু থেকেই ভোগাতে থাকেন আকাঞ্জিকে। দারুণ কয়েকটা ক্রস করেছেন। আর ইন্টার মিডফিল্ডার নিকোলো বারেল্লা তো যেন খেলছিলেন পুরো মাঠজুড়ে।

প্রথমার্ধে টুকটাক দুই দলেরই সুযোগ এসেছে। শুরু থেকেই প্রায় অদৃশ্য থাকলেও হলান্ড ২৭ মিনিটের দিকে একটা দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন কেভিন ডি ব্রুইনার পাস থেকে। তবে জায়গা বের করতে না পেরে তিনি শট নেন ইন্টার মিলান গোলরক্ষক আকন্দ্রে ওনানার গায়ে। এর ঠিক আগের মিনিটে সিটি গোলরক্ষক এদেরসনের ভুলে সুযোগ পেয়ে বারেল্লা শট নিয়েছেন অনেক বাইরে। তারপরেও প্রথমার্ধে ইন্টার খেলেছে পরিকল্পিত ফুটবল, অন্যদিকে মাঠে প্রায় অচেনা ছিল সিটি। এর মধ্যে সিটির জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে কেভিন ডি ব্রুইনার চোট। ৩৬ মিনিটেই মাঠ ছেড়ে যেতে হয় তাঁকে। বদলি নামেন ফিল ফোডেন।

আরও একবার ফাইনালে গার্দিওলার পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আরও একবার ফাইনালে ডি ব্রুইনার চোট, ইস্তাম্বুলে ততক্ষণ পর্যন্ত সিটির জন্য সবই অশুভ সংকেত। সিটি সমর্থকদের বুকের ধড়ফড়ানি আরও বেড়ে যায় ম্যাচের ৫৯ মিনিটে। একটা ব্যাক পাস নিজে না ধরে গোলরক্ষক এদেরসনের জন্য ছেড়ে দেন সিটি ডিফেন্ডার ম্যানুয়াল আকাঞ্জি। কিন্তু মাঝপথেই সেই বল পেয়ে যান ইন্টার মিলানের আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার লাওতারো মার্তিনেজ। তাঁর সামনে তখন এদেরসন একা। মার্তিনেজের সেই শট ঠেকিয়ে সিটিকে সেই যাত্রায় বাঁচিয়ে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক এদেরসন। পেপ গার্দিওলা তো ওই মুহূর্তে দুশ্চিন্তায় হাঁটু গেড়ে বসেই পড়েছিলেন মাঠে। এদেরসনের সেভের পর উঠে দাঁড়িয়েছেন।

ইস্তাম্বুলের দর্শকেরা ততক্ষণে গোলের জন্য হা-হুতাশ শুরু করে দিয়েছেন। সেই গোল অবশেষে এলো ম্যাচের ৬৮ মিনিটে। ম্যানুয়েল আকাঞ্জি পাস বাড়ান ডানদিকে ফাঁকায় থাকা বের্নার্দো সিলভার পায়ে। সিলভার ক্রস ইন্টারের এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে যায় ম্যান সিটির মিডফিল্ডার রদ্রির পায়ে। দৌড়ে এগিয়ে আসা রদ্রি দুর্দান্ত এক শটে বল পাঠান ইন্টারের জালে। সেই রদ্রি চেলসির বিপক্ষে ২০২১-এর ফাইনালে যাকে বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন গার্দিওলা!

তবে সেই গোল পর মুহূর্তেই শোধ করে দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিল ইন্টার। ডেঞ্জেল ডামফ্রাইসের হেড যায় সিটির বক্সে, সেটায় দুর্দান্ত এক হেড করেন দিমার্কো। তবে বল ফিরে আসে সিটির গোলবারে লেগে। ফিরতি বলে আবার হেড দিমার্কোর। কিন্তু এবার বলের সামনে পড়ে গেলেন দিমার্কোরই সতীর্থ বলদি নামা রোমেলু লুকাকু! ভাগ্যদেবীই যেন বাঁচিয়ে দিলেন সিটিকে।

শুধু দিমার্কোর হেডের সামনে বাঁধে হয়ে দাঁড়ানোই নয়, এরপর লুকাকু নিজেও এমন একটা সুযোগ নষ্ট করেছেন, যার জন্য তাঁকে অনেকদিন আক্ষেপে পুড়তে হবে। ৮৯ মিনিটে রবিন গোসেন্স দারুণ এক কাটব্যাক করে বল দিয়েছিলেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকারের সামনে। লুকাকুর সামনে তখন শুধু এদেরসন। দুই পাশে ফাঁকা জায়গা। কিন্তু ইন্টার স্ট্রাইকার হেড নিলেন একেবারে এদেরসনের বরাবর। বলটা নিয়ন্ত্রনে নিতে পারেননি এদেরসন, তবে ফেরত আসা বল বাইরে পাঠিয়ে কর্নারের বিনিময়ে সিটিকে বাঁচিয়ে দেন রুবেন দিয়াজ। ইন্টারের আশাও শেষ হয়ে যায় লুকাকুর ওই মিসেই।

সিটির তখন রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা শেষ বাঁশির। মিনিট পাঁচেক যোগ হওয়া সময়ের পর সেই বাঁশিটা যখন বাজল, ইস্তাম্বুলের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের মাঠ যেন হয়ে গেল নীল সমুদ্র!

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version