টানা মাস ব্যাপী খরতাপ, দাবদাহ ও আশঙ্কার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাতের দেখা মিললো। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত দু’দিনের বৃষ্টিতে চা শিল্পের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে বলেছেন চা সংশ্লিষ্টরা। চায়ের কুঁড়ি আর সতেজ পাতায় চা বাগান গুলিতে যেন লেগেছে যৌবনের ছোঁয়া। এদিকে চা শিল্পাঞ্চল সংশ্লিষ্টদের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা।

গত এক মাসের খরার প্রচন্ড দাবদাহে চা উৎপাদনে পড়েছিল ভাটা। নতুন কুঁড়ি আসায় ছিল মন্থর গতি। তাই কাঁচা পাতা উত্তোলনেও ছিল ধীর গতি। ক্ষতি হয়েছে নতুন প্লান্টেশনের। তবে প্রায় ১ মাসের প্রচন্ড খরতাপের কারণে চা শিল্পাঞ্চলে মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে রক্ষা করেছে গত এপ্রিলে মাসের বৃষ্টিপাত (২০৪ মিলি মিটার)।
অব্যাহত দাবদাহের ব্যাপক বিরূপ প্রভাবে চা বাগান সংশ্লিষ্টদের মাঝে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েও ছিল সংশয়। তার ওপর লোডশেডিংয়ের কারণে গত বছরও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি চা শিল্প। দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯২টি।
আর মৌসুমের শুরুতেই চা শিল্প দাবদাহের কারণে উৎপাদন কমে যাওয়ায় সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিশাল আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল। গত দু’দিনের বৃষ্টিপাত সেই আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে সবার মনে সঞ্চার হয়েছে আশার আলোর।
ফিনলে টি কোম্পানির চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার মো. তাহসিন আহমেদ চৌধূরী বলেন, এই বৃষ্টিপাত আমাদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ। বিগত ২০ থেকে ২২ দিন কোন বৃষ্টিই হয়নি। খরতাপের কারণে সেকেন্ড ফ্লাসের শুরুটা ভালো হয় নি। ভাল চা উৎপাদন না হওয়ায় আমরা আর্থিক ভাবেও বঞ্চিত হয়েছি। আর ভাল চা না থাকলে ক্রেতারও দাম দেয় না। প্রচন্ড খরতাপের কারণে যেমন উৎপাদনে ভাটা পড়ে, তেমনি চা গাছগুলিও দূর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে পরবর্তী উৎপাদন আসতেও সময় লাগবে। সর্বোপরি আমাদেরকে বৃষ্টির উপবই নির্ভরশীল থাকতে হয়।
লাল মাকড়শার উপদ্রব তো ছিলই। প্রচন্ড খরতাপ এবং বৃষ্টিহীনতার কারণে লাল মাকড়শার উপদ্রব দেখা দেয়। আশা করছি কাঙ্খিত এই বৃষ্টিপাতের ফলে আমরা কাঙ্খিত উৎপাদনে চলে যাব।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. ইসমাইল হোসেন জানান, এই বৃষ্টিপাত চা শিল্পের জন্য বিশাল রহমত। এটা আমাদের মানতেই হবে, গত এপ্রিল মাসের শুরুতে বৃষ্টিপাত চা শিল্পের জন্য আশির্বাদ হয়ে এসেছিল। তবে যথা নিয়মে মে মাসের শুরু থেকে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমাদের চা উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হয়েছে। এদিকে বাঞ্জির কারণে উৎপাদন কিছুটা ব্যহত হলেও চা গাছে রুট রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই যে বৃষ্টিপাত হচ্ছে, এর ফলে আমরা ফলনও বেশি পাবো। জুন, জুলাই, আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর এই চার মাস চায়ের ভরা মৌসুৃম। মূলত এই চারে মাসে চায়ের প্রায় ৭০ ভাগ উৎপাদন আাসে। ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ফ্লাস, আগষ্ট পর্যন্ত ২য় ফ্লাস এবং অক্টোবর ও নভেম্বর অটাম ফ্লাস। বৃষ্টির পাশাপাশি সান সাইন যত বেশি থাকবে চায়ের মান তত ভালো হবে। এজন্য স্প্রিং সিজনের চা’কে সর্বোৎকৃষ্ট চা বলা হয়। সানি’ডের চা’তে ক্যাফেইন ও কাপ কোয়ালিটি বেশি থাকে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যানের গতিশীল নেতৃত্বে এবং সঠিক দিক নির্দেশনায় আমরা যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সর্বাত্বক চেষ্টায় লেগে থাকি। চা উৎপাদনের ভরা মৌসুম সন্নিকটে। আমরা আশাবাদী সকল প্রতিকূলতা কাটিয়ে এবারের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১০২ মিলিয়ন কেজি অতিক্রম করবো, ইনশাআল্লাহ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আশরাফুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে চা শিল্পের উপর বিরাট প্রভাব পরেছিল। আল্লাহ তায়ালার রহমতের বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এই প্রভাবটা কেটে গেছে।
খরার প্রভাবটা চায়ের উপর বেশি পড়ে এবং কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়ায় পাতা কুঁড়িও কিছুটা শুষ্ক হয়ে যায়। অনেকে এটাকে বাঞ্জিও বলে থাকে।
এক্ষেত্রে যারা ভালো ইরিগেশন বা নিজ উদ্যোগে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন তাদের উৎপাদন এবং চায়ের মান ভালো হয়েছে। সবার সাথে আমাদের যোগাযোগ যেমন ছিল, তেমনি আমার ডিপার্টমেন্টের মনিটরিং ও পরামর্শ অব্যাহত ছিল।
আমরা আশাবাদী চায়ের জন্য কাঙ্খিত এই বৃষ্টিপাত চলমান থাকবে। সঠিক সময়ে সঠিক মান নিয়েই আমরা কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবো, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version