দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

সমাজের নানাবিধ প্রতিবন্ধতকা ও দারিদ্রতার কষাঘাতের মধ্যেও জীবন সংগ্রামে উদ্যমী অনেক নারী বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে সমাজ ও দেশে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যারা কঠিন সংগ্রামে ও যোগ্যতা অর্জনের মধ্যে দিয়ে চাকুরী ও স্ব-কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে নিজেরা হয়েছেন স্বাবলম্বী। এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছেন অন্যদেরও। কিন্তু জীবন সংগ্রামে বিজয়ী এদের প্রতিষ্ঠা লাভের দুর্বিসহ গল্প অজানা অনেকেই। মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ২০২২ সালের জয়িতা অন্বেষণে অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও চাকুরী, সংসার ও নারী নির্যাতনের বিভীষিকা গ্লানি মূছে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর এমন চার সফল নারীকে খোঁজে এনে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে সম্মাননা দিয়েছে বড়লেখা উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর। এরা হলেন হাসি রাণী দত্ত, ছালেহা বেগম, সালমা বেগম ও শাহানাজ আক্তার। শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী হাসি রাণী দত্ত গোলাপগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার সামান্য রোজগারে চলতো সংসার। ৫ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। হঠাৎ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারের সমস্ত দায়িত্বভার পড়ে হাসি রাণী দত্তের ওপর। আর্থিক টানাপোড়ান স্বত্তেও তিনি নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় লেখাপড়া চালিয়ে যান। গ্রামের একমাত্র মেয়ে হিসেবে তিনি ১৯৬৩ সালে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও আর লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেননি। সংসারের চাকা সচল ও ভাইবোনদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়াসহ সমস্থ কিছুর হাল ধরেন তিনি। এ সময় তিনি সরকারী প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে যান। এরমধ্যে তার বাবাও মারা যান। তখন তিনি নিজেই সবকিছু সামাল নেন। ৪ ভাইবোনকে লেখাপড়া করিয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই আজ সু-প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৬ সালে তিনি বিবাহসূত্রে বড়লেখায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং উপজেলার বিভিন্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুনামের সাথে চাকুরি করেন। তিনি ২ ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। বড়ছেলে স্বনামধন্য ডাক্তার। ছোট মেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হতে পোস্ট গ্রাজুয়েট সম্পন্ন করেছেন। তিনি মা হিসাবে যেমন সফল তেমনি শিক্ষক হিসাবেও সফল ও সার্থক। হাসি রাণী দত্তের জীবন সংগ্রাম, তার পথচলা, শিক্ষা ক্ষেত্রে তার অবদান নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের অনুকরনীয় এবং অনুসরনীয় দৃষ্টান্ত। সফল জননী ছালেহা বেগমের স্বামী ছিলেন বড়লেখা উপজেলা জামে মসজিদের ইমাম। ২০০৯ সালে হার্টএটাকে তিনি মারা গেলে চোখেমুখে অন্ধকার দেখেন। কিভাবে তিনি তার (ছয়) সন্তানকে মানুষ করবেন? অভাব অনটনের কারণে বাধ্য হয়ে বড় মেয়ের পড়াশুনা বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে দেন। ছেলেমেয়েদের সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য তিনি যখন যে কাজ পেতেন তাই করতেন। তিনি হাস-মুরগী, গরু-ছাগল পালন করে সংসারের ব্যয় মিটিয়েছেন। তিনি সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে নিজের কানের সোনার দুল পর্যন্ত বিক্রি করেছেন। কষ্ট হলেও তার ছেলেমেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তার বড় ছেলে বি,বি,এ (ম্যানেজমেন্ট) অধ্যায়নরত অবস্থায় হাওর প্রকল্প এর তথ্য সংগ্রহকারী হিসাবে চাকরিরত আছেন। মেজো মেয়ে মৎস্য অধিদপ্তরে উপ-সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) হিসাবে কর্মরত। সেজো মেয়ে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর পরিচালিত আইজিএ প্রজক্টের ফ্যাশন ডিজাইনার ট্রেডের প্রশিক্ষক। ছোট ছেলে সিলেট এমসি কলেজ হতে সম্প্রতি জিওলজি বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ছোট মেয়ে ডিগ্রী ৩য় বর্ষের ছাত্রী। কঠিন দারিদ্র্যতার কষাঘাতের মাঝেও ছালেহা বেগম তার সন্তানদের মানুষ করতে যে লড়াই করেছেন তা সত্যই প্রশংসনীয়। নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করা নারী সালমা বেগম কেউ যদি দূরদর্শী হয়, আকাঙ্খা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়, সমাধান আছে- এমন ধারণা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায়, তাহলে সাফল্য আসবেই। এমনই এক সাহসী নারীর প্রতীক সালমা বেগম। দারিদ্র তার চলার পথকে করেছে কন্টকময়।

সালমা বেগম নিজের চেষ্টাতে ৯ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেন। ভিটে-মাটি বিক্রি করে সন্তানের সুখের আশায় মা বাবা সালমা বেগমকে বিয়ে দেন। তাদের একটি মেয়ে সন্তান হয়। তার স্বামী প্রায়ই যৌতুকের জন্য সালমা বেগমকে নির্যাতন করে। মাদকাসক্ত স্বামী একসময় তাকে বাড়ী থেকে বের করে দেয়। এতে থেমে যায়নি তার পথচলা। তিনি সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং প্রশিক্ষণ লব্ধ জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সারাদিন সেলাই কাজ করে গ্রামের মানুষের কাপড় জামা তৈরী করে দেন। সেলাই করে যে আয় রোজগার হয় তা দিয়ে সংসার চালান। এরমাঝে অনেক আশা নিয়ে তিনি ২য় বিবাহ করেন। ২য় বিবাহ বেশিদিন টিকেনি। স্বামীর সাথে বিচ্ছেদের পরও ভেঙ্গে পড়েননি। সেলাই কাজকে পেশা হিসাবে বেছে নেন। প্রচুর পরিশ্রম করে অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। গ্রামের অনেক দরিদ্র মেয়ে তার কাছ থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন তারা স্বাবলম্বী। সংসার খরচের পর উদ্বৃত্ত টাকা ব্যাংকে জমা রাখেন। সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। সন্তানকে উচ্চশিক্ষিত করতে চান। নির্যাতনের বিভীষিকাময় মূহুর্ত মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করে জীবন যুদ্ধে জয়ী সালমা বেগম। সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখা শ্রেষ্ঠ জয়িতা শাহানাজ আক্তার জীবন সংগ্রামে লড়াই করা এক নারী শাহানাজ আক্তার। একজন সমাজ সেবক হিসাবে তিনি এলাকার যে কোন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, যৌতুক বিরোধী আন্দোলন, নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিষয়গুলিতে তিনি সোচ্চার ভূমিকা রাখেন। মানুষের প্রতি তার দরদ এবং ভালোবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ এলাকার জনগণ তাকে ২০২১ সালের ইউপি নির্বাচনে দক্ষিণভাগ দক্ষিণ ইউপির সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য হিসাবে নির্বাচিত করেন। মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার পর সমাজসেবার মত বিষয়টি তার কাছে আরো সহজ হয়ে যায়। তিনি এলাকার রাস্তা-ঘাট, পুল-কার্লভাট ইত্যাদি নির্মাণ ও উন্নয়নে জোরালো ভূমিকা রেখেছেন। আর এই ভাবেই তিনি সমাজসেবায় অসামান্য অবদান রেখে চলেছেন এখনও উদ্যেমি চিন্তে।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version