দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

তাসলিমুল হাসান সিয়াম , গাইবান্ধা প্রতিনিধি: তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা উত্তরের জনপদ গাইবান্ধা । এই অঞ্চলের অর্থনীতির চালিকাশক্তি কৃষি। মূলত এই কৃষি সম্পদকে পুঁজি করে অনেকেই জীবিকা নির্বাহ করে আসলেও খরা, বন্যা ও নদী ভাঙ্গনের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকা একসময়ের মধ্যবিত্তরা রয়েছে চরম সংকটে ।ফসল‌ উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি , শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধি, কৃষি উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়া, বৈরী আবহওয়া, ব্যবসায়ীদের নানা কারসাজি দিন দিন তাদের ‘গরিব’ করে দিচ্ছে । দ্রব্য মুল্যের উর্ধ্বগতির কারণে গ্রামের মধ্যবিত্তদের অবস্থা শোচনীয়। তাদের আয় কমেছে অথচ দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ব্যয় বেড়েছে। সামাজিক অবস্থান ধরে রাখতে কেউ কেউ বাধ্য হয়ে সঞ্চয় , আবাদি জমি বিক্রি করে খাচ্ছেন। কারও কারও সংসারের খরচ কমাতে কমাতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে কিন্তু বলতে পারছেন না। মধ্যবিত্ত বলে পরিচিত পরিবারের লোকজনের চেহারায় এখন বিষণ্নতার ছাপ সহসাই দেখা যায়। নিম্ন আয়ের লোকজন সরকার ও বিত্তবানদের কাছ থেকে নানা সাহায্য-সহায়তা পেলেও মধ্যবিত্তরা সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় কারও কাছে হাত পেতে সাহায্য নিতে পারেন না। তাদের সহায়তা দিতেও কেউ এগিয়ে আসে না। ফলে গাইবান্ধার মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো চরম আর্থিক দুরবস্থার মধ্যে পড়েছে। দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতির সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে চরম সংকটে পড়েছে মধ্যবিত্তরা । সামাজিক পদমর্যাদা খুন্ন হওয়ার ভয়ে অনেকেই পেশা পরিবর্তনে অনীহা দেখাচ্ছে। গাইবান্ধার বেশকিছু তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারী ও বেসরকারি খাতে চাকরি করা পেশাজীবীরা জানিয়েছেন, তাদের বেতন বাড়ে না বিগত ৮ বছর ধরে। কিন্তু প্রান্তিক শ্রেণির সব শ্রমিকের আয় বেড়েছে। যারা স্বতন্ত্র পেশাজীবী হিসেবে কাজ করেন তারা তাদের নিজেদের আয় বাড়িয়ে দিয়েছেন ইচ্ছা মত। মধ্যবিত্ত বলে পরিচিত নানা পেশায় জড়িতরা জানিয়েছেন তারা সংসার চালাতে হিমশিম খেলেও কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না। লোক-লজ্জার ভয়ে ইউনিয়ন পরিষদে রিলিফের লাইনে স্ত্রীকে দাঁড় করাতে পারছেন না। তাদের সামাজিক পরিচিতি আয় বাড়াতে সহায়ক না হলেও রিলিফ চাওয়াটা সম্ভব হচ্ছে না। তারা জানান, এক্ষেত্রে ভ্যান-রিকশা, অটোরিকশা চালক বা কৃষি মজুরের দৈনিক আয় বেড়েছে। তারা আবার রিলিফও নিচ্ছেন। তারা ১০ টাকা কেজির চাল নিচ্ছেন, ভিজিডি-ভিজিএফ পাচ্ছেন, স্বল্পমূল্যে টিসিবির পণ্য নিচ্ছেন আবার ঈদের আগে ‘গরিব’দের জন্য দেওয়া চালও নিচ্ছেন। যদিও আয়ের হিসাবে এখন সবচেয়ে ‘গরিব’ হলেন গ্রামীণ মধ্যবিত্তরা।

গ্রামীণ মধ্যবিত্ত বলে পরিচিত বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে ভিতরের অনেক চিত্র উঠে এসেছে। কয়েকজন জানান, একজন অটো রিকশা বা অটোবাইক চালকের দৈনিক আয় গড়ে এক হাজার টাকার ওপর। মানে মাসে ৩০ হাজার টাকা। আর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা একজন কর্মচারীর দৈনিক আয় গড়ে ২৫০- ৩০০ টাকা। অটোরিকশাচালক নিম্নবিত্ত বলে সমাজে পরিচিত কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা লোকটি সামজে মধ্যবিত্ত বলে পরিচিত। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা একজন নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীও মাসে পান মাত্র ২০ হাজার টাকা।

দেখা যায় দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করা পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তির সংখ্যা দুই থেকে তিন জন । আর মধ্যবিত্ত পরিবারের উপার্জনকারী ব্যক্তির সংখ্যা এক থেকে দুই জন। স্বাভাবিক ভাবেই তাই দিনমজুর শ্রেণীর মাসিক আয় মধ্যবিত্তর চেয়ে বেশি । আয় কম হলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আনুসাঙ্গিক ব্যয় বেশি । সন্তানদের ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা, জীবন যাপনের ব্যয় মেটাতে গিয়ে মাসিক আয়ের সব খরচ হয় । চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে অনেক পরিবারই পথে বসেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে চাল-আটা, মাছ-মাংস, শাকসবজি সবকিছুর দামই এখন নাগালের বাইরে।

মধ্যবিত্তের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে তাদের ইচ্ছে পূরণের জায়গাগুলো ধীরে ধীরে সংকোচিত হয়ে পড়ছে। তাদের মৌলিক চাহিদা ও স্বপ্ন প্রতিনিয়ত মাঠে মারা যাচ্ছে। তারা হয়ে পড়ছে হতাশাগ্রস্ত দিশেহারা। ছোট হয়ে যাচ্ছে তাদের মনও। কেবল অর্থনৈতিক কারণে অনেক পরিবারে ভাঙন দেখা দিয়েছে। শারীরিক নির্যাতন, হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে।

 এই তালিকায় সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় রয়েছে শুধুমাত্র চাষাবাদের সাথে জড়িত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কৃষকরা কৃষি উৎপাদনের ব্যয় বৃদ্ধি ও ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে তারা । তাই পরবর্তী প্রজন্ম‌ অর্থাৎ তাদের সন্তানদের কৃষি খাতে আনতে অনীহা প্রকাশ করছেন অধিকাংশ কৃষক পরিবারের‌ কর্তারা । সংকটে শুধু কৃষক নয় এই তালিকায় আছে বিভিন্ন এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান , এনজিওসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের‌ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা । নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গাইবান্ধার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জানান , আমার পদবি সন্মানজনক হলেও বেতন খুব নগণ্য । এই বেতনে পরিবারের সদস্যদের চাহিদা পূরণ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যে চাকরি ছেড়ে অন্য কোন ছোট পদের কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না ।

গাইবান্ধা শহরের তৃতীয় শ্রেণির একজন সরকারি কর্মচারী আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা অটোরিকশায় চড়ি। আপাতদৃষ্টিতে আমি অটোরিকশা চালকের চেয়ে ধনী। আসলে তার আয় আমার দ্বিগুণ।

আজিজুর রহমান নামের এক কৃষক জানান , আমার প্রায় ৫ বিঘা আবাদি জমি আছে বছরে দুইবার ধান চাষ ও গরু পালন করে পরিবারের বিভিন্ন ব্যয় মেটাতে হয় । কিন্তু ফসলের উৎপাদন খরচ আর পশু খাদ্যর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাৎসরিক আয়ের তুলনায় ব্যায় বেড়েছে তাই ধার দেনা করে চলতে হয় । তিনি আরো জানান আমার ৮ বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে এই অনিশ্চিত খাতে আমি তাকে নিয়ে আসতে চাই না ।

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সদ্য যোগদান করা মামুনুর রশীদ জানান , শিক্ষকতা একটা সন্মানজনক পেশা কিন্তু এই খাতে তুলনা মুলক বেতন অনেক কম । বাসা ভাড়াসহ আনুসাঙ্গিক ব্যয় মেটাতে গিয়ে হাতে কোন আর টাকা থাকে না ।

গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে প্রাণীবিদ্যা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে খোকন রহমান নামের এক তরুণ উদ্যোক্তা নিজের গ্রামে প্রায় ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে একটি গরুর খামার দেয় । প্রথমদিকে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও করোনার সময়ের পশু খাদ্যর দাম বাড়ায় খামার পরিচালনার ব্যয় বেড়ে যায় বাধ্য হয়ে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেও ঋণের চাপে খামার বন্ধ করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ‌। তিনি আরও বলেন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে খামার প্রকল্প করে নিঃস্ব হয়ে গেছি । সামাজিক পদমর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ছোট কোন কাজ করতে পারছি না ।

গাইবান্ধা সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান বলেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে এখন কোটিপতির সংখ্যা বেশি। অনেকেই গত পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে কোটিপতি হয়ে গেছেন। এটা হচ্ছে অসুস্থ ও অসম পুঁজির বিকাশ। এই বিকাশের কারণে মধ্যবিত্ত ধীরে ধীরে বিত্তহীন হয়ে পড়ছে। দেশে এখন তিন কোটি দরিদ্র জনসংখ্যা রয়েছে- যা মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। যারা দরিদ্র তারা বিত্তবানদের পেছন থেকে টানে না, টানে মধ্যবিত্তকে। কারণ মধ্যবিত্তরা অনেক মানবিক ও সংবেদনশীল। মধ্যবিত্ত তার অস্তিত্ব ও ঐতিহ্য নিয়ে সমাজে টিকে থাকতে পারবে কিনা, সে এক বিরাট প্রশ্ন। এই প্রশ্নের সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে সরকারসহ দেশের সচেতন মধ্যবিত্ত শ্রেণিকেই।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওয়াল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version