তাসলিমুল হাসান সিয়াম, গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
আমাদের ছোটো নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গোরু, পার হয় গাড়ি, দুই ধার উঁচু তার, ঢালু তার পাড়ি । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমাদের ছোট নদী” কবিতার এই চরণটি প্রায় সকলের জানা। বাংলা পঞ্জিকায় এখন বৈশাখ মাস । গ্রীষ্মের খরতাপে তাই খাল বিল শুকিয়ে গেছে । নদ নদীর বুকে জেগে উঠেছে বালু চর ।আর এই চরের যাতায়াতকে সহজ করতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে ঘোড়ার গাড়ি ।
ঘোড়ার গাড়িকে বলা হয় চরাঞ্চলের জাহাজ। উত্তপ্ত বালিতে কিংবা বর্ষার পানি পেয়ে শক্ত গঠনের বালু মাটিতে দুরন্ত বেগে ছুটে চলা ঘোড়ার গাড়ি স্থলযান হিসেবে পরিচিত । কিন্তু নাব্যতা সংকটে সেই ঘোড়ার গাড়ি এখন হাঁটু পানি পার হয়ে যাত্রী পরিবহন করছে ব্রহ্মপুত্রের বুকে জেগে উঠা চরে । বর্তমানে নাব্যতা সংকট থাকায় বালাসী থেকে নৌ বন্দরটি প্রায় তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে রয়েছে। দীর্ঘ এই পথ পাড়ি দিয়ে ঘাটে পৌঁছাতে তাই যাত্রীদের উঠতে হচ্ছে ঘোড়ার গাড়িতে কিংবা ট্রাক্টরে ।
ঈদের ছুটিতে ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে আসা সবুজ সরকার জানান নৌপথে গাইবান্ধা থেকে ময়মনসিংহ ও ঢাকায় যেতে বর্তমানে বেশ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে । তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা শহর থেকে অটোরিকশায় পাঁচ কিলোমিটার পথ পার হয়ে বালাসিঘাটে গিয়েছি। এরপর ঘোড়ার বালুপথ পার হয়ে বাগুরিয়ায় আসি।
রবিবার দুপুরে গাইবান্ধা শহর থেকে বাগুরিয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, লঞ্চে উপচেপড়া ভিড়। ঢাকা থেকে আসা ঈদ করতে আবার কর্মস্থলএ ফিরে যাওয়া মানুষ তড়িঘড়ি করে লঞ্চে উঠছেন । কেউ কেউ অন্য লঞ্চের জন্য অপেক্ষা করছেন। অনেকে ঝুঁকি নিয়ে ছোট নৌকায় পারাপার হচ্ছেন। ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই এই অবস্থা চলছে

উল্লেখ্য গত বছরের ৯ এপ্রিল বালাসি-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ চলাচলের উদ্বোধন করেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এর পর থেকে তিনটি লঞ্চ অনিয়মিত চলছে। পাশাপাশি ছোট-বড় ১৫-২০টি নৌকায় করা হচ্ছে যাত্রী পারাপার। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্যতা হ্রাসের কারণে এ অবস্থা।
ফুলছড়ি উপজেলার সমিতির বাজার গ্রামের মেহেদী মিয়া বলেন, ঈদে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেশি। ট্রেনের টিকিট পাওয়া দুষ্কর। এ কারণে মানুষ লঞ্চ ও নৌকার ওপর নির্ভরশীল। ঈদের কারণে লঞ্চ ও নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে যাত্রী পার করা হচ্ছে। ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বেশি।
গাইবান্ধা বালাসি-বাহাদুরাবাদ লঞ্চ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আরিফ মিয়া বলেন, প্রতিদিন বালাসিঘাট থেকে সকাল ৯টা, বেলা ১১টা ও ২টায় লঞ্চ ছেড়ে যায়। জনপ্রতি ভাড়া ১২০ টাকা। প্রতিটি লঞ্চ ১৫০-২৫০ আসনবিশিষ্ট। যেতে সময় লাগে পৌনে দুই ঘণ্টা ও আসতে আড়াই ঘণ্টা। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে নিয়মিত লঞ্চ চালানো যাচ্ছে না। বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে ড্রেজার চাওয়া হয়েছে। ড্রেজিং ছাড়া এ রুটে লঞ্চ চালানো সম্ভব নয়।