তানভীর আহমেদ: সুনামগঞ্জ:
সুনামগঞ্জের সর্ববৃহৎ শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত তাহিরপুর উপজেলার ছোট বড় ২৩টি হাওরের বিস্তীর্ণ জমি সবুজ হয়ে উঠেছে। যতদূর চোখ যায় বাতাসের সঙ্গে দুলছে ধান গাছের সবুজ পাতা ও শীষ। কিছুদিনের মধ্যেই সোনালি রঙ ধারণ করবে। এরপরই ক্ষেত থেকে কাটা শুরু করবেন কৃষকরা। সব মিলিয়ে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বোরোর বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭ ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি। জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ধান উৎপাদনের দিক থেকে তাহিরপুর উপজেলা শীর্ষে রয়েছে।’
কৃষকরা জানান, ক’দিনের মধ্যেই সবুজ ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করবে। ঝলমল করবে ফসলের মাঠ। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে, তাহলে এবার ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। তবে কিছু কিছু জমিতে ধানে রোগ দেখা দিলেও সেটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তারপরও সতর্কতার সঙ্গে জমিতে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে উপজেলার সর্ববৃহৎ শনি, মাটিয়ান ও মহালিয়া হাওর ঘুরে দেখা গেছে, ইরি-বোরো ধান গাছের সবুজ পাতায় ভরে গেছে মাঠ। ক্ষেতে সর্বশেষ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। এ বছর নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই চাষিরা ধানের চারা রোপণ করেছেন। যথাসময়ে সার, বালাইনাশক ও সেচ দিতে পারায় ফলন ভালো হয়েছে।
শনি হাওর পাড়ের কৃষক নাজমুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও নিজস্ব কিছু জমিতে ধান চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সৃষ্টি না হয়, তাহলে সুন্দরভাবেই ফসল ঘরে তুলতে পারবো। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচ বেড়েছে এবার।’
মাটিয়ান হাওরের কৃষক তোফায়েল মিয়া বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন ভালো হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা আগাম পাহাড়ি ঢল না আসলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না। সরকারের কাছে দাবি, বোরো ফসলের ন্যায্য দাম যেন নির্ধারণ করে দেয়।’
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাসান উদ দৌলা বলেন, ‘তাহিরপুর উপজেলার সবকটি হাওরে ইরি-বোরো ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শসহ তাদের সরকারি সহায়তা (বীজ, সার) দিয়ে সহযোগিতা করে আসছি। এ পর্যন্ত বোরো চাষে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। তাই ধানের বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এ বছর ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।’