ইউরোপের দেশ পর্তুগালের কৃষি ও পর্যটন শহর বেজায়া’য় গত ২০ মার্চ আকস্মিক একটি প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভেঙে পড়লে দেয়ালের নিচে চাঁপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের মোকামবাজার এলাকাস্থ নিতেশ্বর গ্রামের শাহীন আহমেদ (৪৭)। একই ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন তার সহযোগী সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবাদ ইউনিয়নের করগাঁও উজানপাড়ার সুহেদ আহমদ (৩২)।
মর্মান্তিক এ ঘটনার পর জিএনআর পুলিশ তাদের উদ্ধার করে বেজায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করে মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছিল। এরই মধ্যে এদেশের আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে বাংলাদেশি কমিউনিটির সহযোগিতায় মৌলভীবাজারের শাহীন আহমেদের মরদেহ আসছে শনিবার (১ এপ্রিল)। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শাহীনের মরদেহ এসে পৌঁছাবে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
নিহত শাহীনের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের মোকামবাজার এলাকাস্থ নিতেশ্বর গ্রামে, এখনো শোকে মুহ্যমান পুরো এলাকা। শত শত মানুষ পরিবারটিকে শান্তনা দিতে নিহতের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।
শাহীনের বৃদ্ধা মা হালেমা খাতুন (৮০) পুত্রশোকে একেবারে ভেঙে পড়েছেন। বিছানায় শয্যাশায়ী হালেমা খাতুন নিহত ছেলের নাম ধরে বিলাপ করছেন। নিহতের দুই শিশু কন্যা শাহানা মিনন্নেছা (৮) ও সিদরাতুন মুনতাহা (২) অবুঝ শিশুরা বাড়ির সকলের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। নিহতের স্ত্রী জেবুন্নাহার জেবি ঘটনার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছেন।
নিহতের ছোট ভাই শায়েল আহমদ জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই নিহত শাহীনের পর্তুগালের রেসিডেন্স কার্ড হাতে পাবার কথা। ইতোমধ্যেই দেশে আসার প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে নিয়েছিলেন। রেসিডেন্স কার্ড পেয়েই দেশে আসার কথা ছিল তার। মৃত্যুর দিনও তিনি রেসিডেন্স কার্ড পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশে আসবেন বলে মোবাইল ফোনে কথা হয় সময় জানিয়েছিলেন। তিনি দেশে আসছেন ঠিকই তবে লাশ হয়ে।
শায়েল বলেন, ‘আমরা পাঁচ ভাই চার বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়। দীর্ঘদিন প্রবাসে জীবন ও জীবিকার তাগিদে কাতারে অবস্থান করেন। ২০২১ সালে কাতার থেকে ভিজিট ভিসা নিয়ে চলে যান পর্তুগালে গিয়ে পাড়ি জমান। সেখানে বেজায়া শহরে একটি নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তার মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর আমরা দেশ থেকে পর্তুগালে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে চলেছি। তাদের এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পর্তুগালের সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। শনিবার (১ এপ্রিল) মরদেহ দেশে এসে পৌঁছাবে।’
নিহত শাহীনের স্ত্রী’র বড় ভাই মো. আশুক আহমেদ বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শাহীনের মরদেহ এসে পৌঁছাবে। সেখান থেকে আমরা মরদেহ নিয়ে আসব মৌলভীবাজারস্থ গ্রামের বাড়িতে। পর দিন রবিবার জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।’