দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

একাকীত্ব ঘোঁচাতে ৭০ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার হুড়কা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক হাওলাদার শওকত আলী।

শনিবার (১৮ মার্চ) দুপুরে ১০ লাখ টাকা দেনমোহরে মোংলা উপজেলার মিঠাখালী এলাকার ৩৫ বছর বয়সী শাহেদা বেগম নাজুর সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।

তাদের বিয়ের ছবি এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। গণমাধ্যমগুলোতেও এসেছে শওকত-নাজুর বিয়ের খবর। এ জুটিকে অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাচ্ছে দেশবাসী।

এরইসঙ্গে নেটিজেনদের কৌতূহল, জীবনের ৬৯টি বছর পেরিয়ে গেলেও কেন বিয়ে করেননি এই সাবেক কলেজশিক্ষক শওকত আলী? কেন এতোটা বছর সিঙ্গেল ছিলেন তিনি!

এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, পরিবারের খরচ বহনসহ ১৪ জন ভাই-বোনদের শিক্ষিত করতেই ছিল তার যত ব্যস্ততা। এরইমধ্যে কীভাবে ৬৯ বছর পেরিয়ে গেছে তার খেয়ালই হয়নি। দীর্ঘ কর্মজীবনে আপন ভাই-বোনের পাশাপাশি দুই শতাধিক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে নিজ ব্যয়ে পড়াশুনা করিয়েছেন তিনি।

সবমিলিয়ে জীবন সংগ্রামের পথে নিজেকে নিয়ে ভাবনার সময়ই পাননি সাবেক অধ্যাপক শওকত। ভাই-বোনদের দায়িত্ব, সমাজসেবা ও স্বাধীনতা হারানোর ভয়ে সময়মতো বিয়ে করা হয়নি এই গুণী মানুষের।

সেসব কথা জানিয়ে হাওলাদার শওকত আলী বলেন, স্বজনদের চাপ থাকলেও বিয়ে ভাই-বোনদের দায়িত্ব ও স্বাধীনতা হারানোর ভয়ে বিয়ে করিনি। ভাই-বোন ও এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল আমার একমাত্র লক্ষ্য। যার কারণে বিয়ে তো দূরের কথা নিজের করা জমিতে একটি ঘরও করিনি। আল্লাহও আমার আশা পূরণ করেছেন। আমার সব ভাইবোন শিক্ষিত হয়েছেন। সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
তিনি বলেন, আসলে আমি জীবনের শুরু থেকে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। ভাই-বোনদের পাশাপাশি এলাকার অনেককে পড়াশুনার খরচ দিয়েছি। তারাও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে চাকরি করছেন দেশে-বিদেশে।

হঠাৎ বিয়ের সিদ্ধান্ত কেন? শওকত আলী বললেন, হুড়কার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় আমার নিজস্ব জমি ও মৎস্য ঘের রয়েছে। সবকিছুতেই নিজেকে পূর্নাঙ্গ মানুষ মনে হতো। কিন্তু শেষ বয়সে এসে নিজেকে খুব একা মনে হতে থাকে। যার কারণে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। এতে পরিবারের সবাই খুবই খুশি হয়। পরবর্তীতে সবার সম্মতিতে বিয়ে সম্পন্ন হয়।

সত্তর বছর বয়সে এসে শওকত আলী অনুধাবন করলেন, বিয়ে করা গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জীবনের অতি আবশ্যকীয় এক অধ্যায়।
তিনি বলেন, বিয়ে না করা কোনো যৌক্তিক কাজ হতে পারে না। সবার উচিত বিয়ে করা। বিয়ে করার ধর্মীয়, সামাজিক, পারিবারিক ও শারীরিক গুরুত্ব অনেক। জীবনের ঝামেলার জন্য সময়মতো না হলেও, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে করা উচিত।
বিয়ের এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল, এখন কেমন আছেন প্রশ্নে হাওলাদার শওকত আলী বলেন, খুবই ভালো আছি। যদিও এখনও শ্বশুরবাড়ি যাইনি। তবে স্ত্রীকে নিয়ে নদীতে স্পিডবোটসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছি। শ্বশুরবাড়ি যাব একটু সময়, সুযোগ হলে। সবকিছু জেনেই নাজু আমাকে বিয়ে করেছে। আমিও নাজুকে আপন করে নিয়েছি। বাকিটা সময় একসঙ্গে কাটাতে চাই।

নববধূ শাহেদা বেগম নাজু বলেন, আমি এই বিয়েতে অনেক খুশি। সবার কাছে দোয়া চাই, বাকি জীবন যেন সুখ-শান্তিতে কাটাতে পারি।

জানা গেছে, শাহেদা বেগম নাজু বেগম নাজুর এর আগে বিয়ে হয়েছিল। সেখানে একটি মেয়ে আছে তার। এই মেয়েরও দায়িত্ব নিয়েছেন হাওলাদার শওকত আলী।

হাওলাদার শওকত আলীর আত্মীয় আব্দুল হালিম খোকন বলেন, তিনি আমাদের বড় ভাই, আমরা তার কাছে মানুষ হয়েছি। সারাটা জীবন তিনি আমাদের সুখ-দুঃখে বটবৃক্ষের মতো আগলে রেখেছেন। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি তাকে বিয়ে দেওয়ার। কিন্তু তিনি রাজি হননি। সবশেষে আমাদের অনুরোধ ও তার সম্মতিতে এই বিয়ে হয়েছে। সবাই আমাদের ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।

হাওলাদার শওকত আলীর বোন নার্গিস আক্তার ঝর্না বলেন, ভাইয়ার দেখাশুনা করার জন্য ছেলেকে নিয়ে তার বাড়িতে থাকি। ভাই-বোনরা সব সময় চাইতাম, ভাইয়ার একটা সংসার হোক, তিনি সুখে-শান্তিতে থাকুন। আমাদের জন্য তো অনেক করেছেন। শেষ বয়সে এসে ভাইয়া বিয়ে করেছেন এজন্য আমরা সবাই খুশি।

হাওলাদার শওকত আলীর জন্ম ১৯৫৪ সালে রামপাল উপজেলার জিগিরমোল্লা গ্রামে। ১৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে খুলনা বিএল কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।

পরে রামপাল ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক হিসেবে চাকরি জীবন শুরু করেন। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান শওকত আলী।

দ্যা মেইল বিডি/এইচএসএস

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version