দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওরে পানির হাহাকার চলছে। কৃষকরা তিন থেকে চার গুণ টাকা খরচ করেও বোরো জমিতে পানি দিতে পারছেন না। যার ফলে বৃহত্তম এই হাওরে ফসল উৎপাদন কমেছে। বেড়েছে ব্যয়। চাহিদা মতো পানি না পাওয়ায় চাষাবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকরা।
হাওর তীরবর্তী বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাওর ও কৃষকদের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরি কোনো উদ্যোগ নেই। যার ফলে ক্রমান্বয়ে হাওরে বোরো উৎপাদন কমে আসছে।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, জুড়ি ও বড়লেখা এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে হাকালুকি হাওর এর অবস্থান। হাওরের আয়তন ১৮১.১৫ হেক্টর। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম এ হাওরে প্রায় ২৩৮টি বিল ও ১০টি নদী রয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রের বরাতে জানা যায়, জেলায় এ বছর বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৮ হাজার ৪’শ ৫০ হেক্টর। চাষাবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে হাওরে চাষাবাদ হয়েছে ২৭ হাজার হেক্টর।
কয়েক লাখ কৃষক ও জেলে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে হাকালুকি থেকে জীবিকা নির্বাহ করেন। হাওর অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক ও বর্গা চাষীদের জীবন জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল হাওরে উৎপাদিত এক ফসলি বোরো ধান। ওই ফসলের আয় দিয়েই তাদের পুরো বছরের সাংসারিক খরচ এবং ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ সকল ব্যয় চলে। কৃষকরা ধার দেনাও মিটান ধান বিক্রি’র টাকা থেকে।
সরেজমিন হাকালুকি হাওরে গেলে দেখা যায়, বোরো ফসলের শীষ বের হওয়ার সময় এসেছে। কিন্তু নদী, নালা কিংবা বিল কোথাও পানি নেই। পানির জন্য হাহাকার করছেন কৃষকরা। বৃষ্টির অপেক্ষায় আছেন তারা। বোরো জমিতে সেচ দেয়ার মতো সুবিধা না থাকায় কৃষকরা ফিতা পাইপ দিয়ে ৩/৪ হাজার ফুট দূর থেকে জমিতে পানি দিচ্ছেন। প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ৪’শ/৫’শ টাকা।
আবার অনেক কৃষক টাকা খরচ করেও পানি পাচ্ছেন না। পানির অভাবে বোরো জমি ফেঁটে চৌচির। পানির অভাবে বোরো ফসল মরে যাচ্ছে। ইজারাদাররা বিল শুকিয়ে মাছ নিধন করছে। যার কারণে বিলেও পানি পাওয়া যায়নি। পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা না থাকায় এক দিকে কৃষকদের ব্যয় বাড়ছে এবং অন্য দিকে ফসল উৎপাদন কমে আসছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফানাই নদীতে পশ্চিম দিকের ভাটেরা ইউনিয়ন থেকে আন ফানাই এবং পূর্বদিক হতে বান্না নদী এসে মিলিত হয়েছে। ওই ৩ নদীর মিলনস্থলের একটু নিচে চালিয়া এলাকায় স্লুইচ গেইট স্থাপন করলে ৩টি নদীতে পর্যাপ্ত পানি থাকবে এবং কৃষকরাও চাহিদা মতো বোরো জমিতে সেচ দিতে পারবে।
হাকালুকি হাওরে কথা হয় কৃষক ফয়েজ আলী, জিতু মিয়া, ফাকুল মিয়া, মধু মিয়া ও হাজী লিয়াকত আলী’র সাথে। তারা বলেন, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে টাকা খরচ করেও জমিতে পানি দিতে পারছিনা। কোথাও পানি নেই। স্বাভাবিক খরচের চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি টাকা খরচ করে পানি দিতে হচ্ছে। তাও আবার সব জায়গায় পানি পাওয়া যায়না।
তারা বলেন, পানি না থাকায় উৎপাদন ভালো হচ্ছে না। আয় কমেছে, ব্যয় বেড়েছে। তাদের দাবি বৃহত্তর স্বার্থে হাওরে একটি স্লুইচ গেইট স্থাপন করা একান্ত প্রয়োজন। বোরো চাষের পানির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
হাওর তীরের বাসিন্দা মো. এলাইছ মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাওরের বিল ও নদী খনন না হওয়ায় ভরাট হয়ে গেছে। পানি ব্যবস্থাপনার জন্য বিল ও নদী খননের পাশাপাশি হাওরে একটি স্লুইচ গেইট স্থাপন করা সময়ের দাবি।
কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ময়নুল ইসলাম সোহাগ জানান, ফাল্গুন ও চৈত্র মাসে টাকা দিয়েও হাওরে পানি পাওয়া যায়না। উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষকদের ব্যয় কমাতে হাকালুকি হাওরে একটি স্লুইচ গেইট স্থাপন করা জরুরি।
কৃষক নেতা রাজন আহমদ জানান, বিল ইজারাদাররা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে পানি শুকিয়ে মাছ ধরে। যার কারণে কৃষকরা পানি পাচ্ছেন না। ধানের শীষ বের হওয়ার সময় টাকা দিয়েও পানি পাওয়া যায়নি। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকরী কোনো ভূমিকা নেই বললেই চলে।
মৌলভীবাজার কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ জানান, হাকালুকি হাওরে স্লুইচ গেইট স্থাপনের বিষয়ে জেলা সমন্বয় সভায় আলোচনা করব এবং কিভাবে কৃষকদের বোরো উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল জানান, বিষয়টি নিয়ে যৌথভাবে কাজ করতে হবে এবং বড় একটি প্রকল্প হাতে নেয়া যায়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে হাকালুকি হাওরে স্লুইচ গেইট স্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version