নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা ২ নং বালাপাড়া ইউনিয়নে দুস্থদের জন্য সহায়তা ভিজিডি কার্ডের তালিকায় চরম দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। দুস্থ নারীদের পরিবর্তে তালিকায় অধিকাংশ সচ্ছল পরিবার স্থান পেয়েছে।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,  দুস্থ ও অসহায় নারীদের ২৪ মাসের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভিজিডি কর্মসূচির আওতায় উপজেলার দশটি ইউনিয়নে ৩৬৯৩ টি ভিজিডি কার্ড বরাদ্দ হয়েছে। প্রতিটি কার্ড এর বিপরীতে মাসিক ৩০ কেজি হারে দুস্থ রা এই চাল পাবেন।
এরমধ্যে ২ নং বালাপাড়া ইউনিয়নে নয়টি ওয়ার্ডে ৩৬৮ টি ভিজিডি কার্ডের বরাদ্দ হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ,২ নং বালাপাড়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ভিজিডি কার্ডের নামের তালিকা অন্তর্ভুক্তির নিয়ম অনুসরণ না করে দুস্থ ও অসহায় এর পরিবর্তে তালিকায় নাম তুলেছে জমির মালিক, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী, পাকা ঘরের মালিকসহ বিত্তশালীদের নাম। বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়নটির জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য দুলাল হোসেন তার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নাম সহ অপর ৩ ভাইর স্ত্রীদের নামে ভিজিডি কার্ড করে দেয়। তাদের প্রত্যেকের জমিজায়গা সহ পাঁকাবাড়ি ও গরুর খামার রয়েছে। একই এলাকার সাধনা রানী, স্বামী ঝড়–লাল রায়, উষা রানী, স্বামী বুদ্ধদেব রায়, গোলাপী বেগম,স্বামী জাহাঙ্গীর আলম সহ তালিকায় নাম থাকা ৩৯ জনের মধ্যে অধিকাংশই নামধারীদের প্রত্যেকের জমিজায়গা সহ পাঁকাবাড়ী ও গরুর খামার রয়েছে। শুধু ঐ ওয়ার্ডে নয় বরং প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ভিজিডি কার্ড বিতরণে একই অবস্থা বিরাজমান। সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রকৃত অর্থে ভূমিহীন  অর্থাৎ খানা বা পরিবারের কোন জমি নেই অথবা নিজ মালিকানার বসত ভিটা ও চাষযোগ্য মোট জমির পরিমাণ ০.১৫ শতক অথবা কম তাদেরকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চুড়ান্ত তালিকায় নাম পরিলক্ষিত হয় বলে জানান স্থানীয়রা।
ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনর স্ত্রী রোকেয়া বেগমকে ভিজিডি কার্ডের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন,  মেম্বার মানষি (মানুষ) কি ভিজিডি কার্ড নেয়? রোকেয়া তো আমারে (আমার) নাম। আমি কোবার (বলতে) পাই (পারি) না। কার্ড হয়েছে কিনা মুই (আমি) কোবার (বলতে) পাই (পারি)  না।
ইউপি সদস্য দুলাল হোসেনের সাথে সংবাদকর্মীর এবিষয়ে সরাসরি কথা হলে তিনি জানান আমার স্ত্রী রোকেয়া বেগমের নাম দেওয়া আছে তবে আমার স্ত্রীর নামটা দেওয়াটা ভুল হয়েছে। আমার পাশের বাড়ির একজনকে উঠে (চাল উঠিয়ে) দিব বলে আমার স্ত্রীর নাম দিয়েছি। তিনি আরো জানান আমার সহোদর ভাই বেলাল হোসেন ও জালাল হোসেনের স্ত্রীর নাম দিয়েছি।
বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যেটা ফল্ট (ত্রুটি-বিচ্যুতি) পাব সেটা কাটি (কেঁটে) দিব অথবা ওটা লিখে নিয়া ওর পাশে কারা পাবার (পাওয়ার) যোগ্য তাকে দিব। তদন্ত কমিটি চুড়ান্ত যে লিস্ট (তালিকা) আমাকে দিয়েছে সেটা আমি চুড়ান্ত করেছি। কারণ মেম্বাররা দিছে (দিয়েছে) আমরা নিজেরাও একটু তদন্ত করেছি কিছু ফল্ট (ত্রুটি-বিচ্যুতি) হয়েছে। খালি শুধু এখানে হয় যে, না তার সব জায়গায় কিছু না কিছু। এখন ঐ ওয়ার্ডের মেম্বার ধরা খাক।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন দৈনিক জনবাণী কে বলেন, এখন পর্যন্ত কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পাইনি। যদি কোন উপকারভোগীর নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে উপজেলা কমিটি অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version