ডিমলা(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডিমলায় ভূমি সুরক্ষা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে মাটি/বালু ব্যবসায়ী ভূমিদস্যুরা। একনাগাড়ে চলছে অবৈধভাবে ফসলি জমি নষ্ট করে মাটি/বালু কেটে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রির মহোৎসব। কৃষি জমি কেটে বানানো হচ্ছে গভীর পুকুর। এদিকে একের পর এক কৃষি জমি থেকে এভাবে মাটি কেটে নেওয়ায় জমি হারাচ্ছে উর্বরতা, আবার অন্যদিকে কমে যাচ্ছে কৃষি জমির পরিমাণও। জমির মালিকেরা মোটা অঙ্কের টাকার লোভে আবাদি জমির মাটি কেটে জমি নষ্টে সহায়তা করছেন এসব ভূমিদস্যুদের।
সোমবার (৩০ শে জানুয়ারি) সরেজমিনে উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের নিজপাড়া গ্রামে ভাঙ্গারপুল এলাকায় দেখা গেছে, আবাদি জমির মাটি এস্কেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে কেটে পুকুর তৈরি ও জমির মাটি/বালু টাকার বিনিময়ে একাধিক ব্যক্তির নিকট বিক্রির দৃশ্য। ওই গ্রামের আইনুদ্দিন ডিলারের বাড়ির নিকটে ফসলি জমিতে গত ৫/৬ দিন যাবত চলছে মাটিকাটা ও বিক্রির এই কাজ।
ঘটনাস্থলে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জমির মালিক একই গ্রামের ফজলার রহমানের ছেলে রাকিবুল ইসলাম (২৫) সহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ব্যক্তি পুকুর খননের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট অর্থের বিনিময় মাটি/বালু বিক্রি করে আসছে। যার কারণে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা জানান, অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করাই নষ্ট হচ্ছে আবাদি জমি। পুকুর খননের নামে মাটি কেটে বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্থাপনায় বিক্রি করার জন্য মাটি বহনের কাজে ব্যবহারিত গাড়িগুলোর চলাচলে নষ্ট হচ্ছে অন্যন্য আবাদি জমি। বিক্রেতা ও ক্রেতারা প্রভাবশালী হওয়ায় আমরা কোনোভাবেই মাটিকাটা বন্ধ করতে পারছি না। তাই আমরা সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে মাটি বিক্রি ও আবাদি জমিতে পুকুর খননের কাজ বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি।
তারা আরো বলেন, মাছ চাষের কথা বলে আবাদি জমিতে পুকুর খনন করে বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে মাটি বিক্রি করছে একটি সিন্ডিকেট। অন্যদিকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি আনা-নেওয়ার ফলে খননকৃত পুকুরের আশেপাশের অধিকাংশ ফসলি জমি ও গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। ভঙ্গুর সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে বিভিন্ন দুর্ঘটনা আর ক্ষতি হচ্ছে জানমালের।
এ ব্যাপারে আবাদি জমিতে পুকুর খননকারী রাকিবুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরকারি অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমির মালিক নিজের জমিতে পুকুর কাটবে। এখানে সরকারি কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। আমি নিজের জমিতে পুকুর কাটছি, এখন অতিরিক্ত মাটি বিক্রি করবো।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, এভাবে মাটি কাটার বিষয়গুলো একের পর এক স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে এসব মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। যার কারণে বন্ধ হচ্ছে না কৃষি জমি নষ্ট করে মাটিকাটা।
এ বিষয়ে গাছবাড়ি গ্রামের অটোরিকশা (সিএনজি) চালক মুসলিম উদ্দিন ও ভ্যানচালক ইব্রাহিম মিয়া গাছবাড়ি বাজারের একটি চা স্টলে আলাপকালে বলেন, রাস্তাঘাট যতই ঠিক করা হোক না কেন লাভ নেই, কারণ মাটি বিক্রি বন্ধ না হলে ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ হবে না। ট্রাক্টরের কারণে পাকা সড়কের পিচ উঠে যায় ও গর্ত সৃষ্টি হয়। কাঁচা সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়, যা দেখার ও বলার কেউ নেই।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডিমলা উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২২৯৮৮ হেক্টর। যার মধ্যে এক ফসলি জমি ৪১২০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ১৫৪৫০ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ২৯৯৯ হেক্টর। এ ছাড়া তিনের অধিক ফসলি জমিও রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন কে একাধিকবার ফোন ও মেসেজ দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।