দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

মামুন হোসাইন, চরফ্যাশন (ভোলা): কবি নজরুল বলেছেন- “নতুন খেজুর রস এনেছি মেটে কলস ভরে, ও আমার রস-পিয়াসি রসিক জনের তরে।” হারিয়ে যাচ্ছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও সুস্বাদু খেজুরের রস- গুড়। একসময় প্রতিদিন গাছিরা খেজুর রস সংরক্ষণ করার জন্য ঘুরে বেড়াতেন গ্রামের মেঠোপথগুলোতে রস সংরক্ষণ কাজে।রস আহরণে গাছিরা কোমরে দড়ির সঙ্গে ঝুড়ি বেঁধে ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে গাছ চাঁচাছোলা ও নলি বসানোর সেই কাজ এখন আর দেখা যায় না। চোখে পড়ে না গ্রাম বাংলার সেই চিরচেনা দৃশ্য, তেমনি দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে খেজুরের রসও। অথচ খেজুর গাছ হারিয়ে গেলে এক সময় হারিয়ে যাবে খেজুর রস ও খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য।

একসময় গ্রামের ছোট ছোট বাজারগুলোতে সারি সারি করে খেজুরের রস নিয়ে বসে থাকতেন গাছিরা। সেই রসের ঘ্রাণ মাছির বনবন শব্দ এখন আর পাওয়া যায় না।

শীত মৌসুমের শুরুতেই গ্রামাঞ্চলে খেজুর রসের ক্ষির, পায়েস ও পিঠে খাওয়ার ধুম আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন আর আগের মত খেজুরের রসও নেই, নেই সে পিঠে পায়েসও।সেসময় সকাল বেলা অনেকের ঘুম ভাঙতো খেজুরের রসের মিষ্টি পিঠার সুগন্ধি ঘ্রাণে। পরিবারের সকল সদস্য মিলে আড্ডা মিলিয়ে সকাল বেলা নাস্তা করতেন খেজুর রসের তৈয়ারি অনেক সুস্বাদু পায়েস ও বিভিন্ন ধরনের পিঠা দিয়ে। এখন মানুষের কাছে খেজুরের রস ও খেজুরের গুড় দিয়ে তৈয়ারি খাবার গুলো স্বপ্নের মত মনে হয়।

চরফ্যাশন উপজেলার শশীভুষন, দক্ষিণ আইচা,দুলার হাটসহ বিভিন্ন চরঞ্চলে সুস্বাদু এই খেজুরের রস আগুনে জ্বাল দিয়ে বানানো হতো বিভিন্ন রকমের গুড়ের পাটালি ও নালি গুড়। খেতেও যেমন সুস্বাদু, চাহিদাও ছিল ব্যাপক। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।

শখের বসত প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছিদের মতে, আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় এখন আর সেই রমরমা অবস্থা নেই। ফলে শীতকাল আসলেই অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা গ্রামীণ জনপদের খেজুর গাছের কদর বেড়ে যেত। বর্তমানে এসব অঞ্চলে প্রতি হাড়ি খেজুর রস-গুড় আড়াইশো থেকে ৩শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তাও চাহিদার তুলনায় খুবই কম। গাছিরা বলেন, খেজুর গাছ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে খেজুর গাছ আর শীতের মৌসুমে খেজুর গাছের রস শুধু আরব্য উপনাস্যের গল্পে পরিনত হতে চলেছে।

উপজেলার ওমরপুর ইউনিয়নের প্রবীণ গাছি মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, আমি দীর্ঘ সতেরো বছর ধরে খেজুর রস ও গুড় বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন খেজুর গাছ কমে যাওয়াতে খেজুর রস তেমন পাওয়া যায় না। পাঁচ সাত বছর আগে এক কলস রসের হাঁড়ি বিক্রি করতাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এখন ঐ খেজুর রসের হাঁড়ি বিক্রি করি ৫০০ টাকা। এরপরও আমার সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।

চর-কলমী ইউনিয়নের গাছি ওলী মিয়া বলেন, আগে আমাদের দারুণ কদর ছিল, মৌসুম শুরুর আগ হতেই কথাবার্তা পাকা হতো কার কয়টি খেজুর গাছ কাটতে হবে। কিন্তু, আগের মতো তেমন খেজুর গাছও নেই। আর গ্রামের লোকেরাও এখন আর কেউ ডাকে না। গ্রামে অল্প কিছু গাছ আছে সেগুলো কেটে নিজেদের চাহিদা মিটাই।

আরও কয়েকজন প্রবীণ গাছীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, খেজুর গাছ যে ভাবে নিধন হচ্ছে যদি সেভাবে রোপণ না করে, তাহলে কয়েক বছর পর খেজুরের রস গ্রামেও পাওয়া যাবে না। সরকার যদি গ্রামের রাস্তা গুলোর পাশে নতুন করে খেজুর গাছ রোপণ উদ্যোগ নেয়। তাহলে মানুষ আগের মতো খেজুরের রস খেতে পারবে বলে আমরা আশাকরি।

চরফ্যাশন সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল মাওয়া বলেন, একসময় শীতের সকালে সূর্য মামা উঁকি দেয়ার আগেই গাছিরা গাছ থেকে রসের হাড়ি নামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়তো। রস নিয়ে পাড়ি জমাতো দূর-দূরান্তের হাট-বাজারে। আগের দিনে রস কিনতে অনেক লোকের সমাগম দেখা মিলতো রসের হাঁটে ও গাছিদের বাসাবাড়িতে। কুয়াশা ঘেরা সকালে গাছিদের কাঁধে করে হাঁড়ি ভরা রস নিয়ে যাওয়ার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আমার মনে হয় গ্রামীন বাংলাদেশ ছাড়া আর পৃথিবীর কোথাও হয়তো দেখাই যায় না। মনে করিয়ে দেয় সেই রং তুলিতে আঁকা শিল্পীর এক মনোরম চিত্রকর্মের কথা। কিন্তু সেসব দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না।

গৃহবধূ জহুরা বেগম বলেন, শীতের সকালে গাছ থেকে নামানো কাঁচা রসের স্বাদ যেমন বর্ণনা করা সম্ভব নয়, তেমনি জ্বাল করা রসের তৈরি বিভিন্ন খাবারের স্বাদ ও চাহিদাও অনেক। কুয়াশামাখা সকালবেলায় রসের তৈরি পায়েসের গন্ধে মৌ মৌ করে চারিদিক। সেই মিষ্টি গন্ধে মানুষের সাথে যেন পিপড়া-মাছিরও ঘুম হারাম হয়ে যেতো।

সামাজিক সেচ্ছাসেবী সংগঠন ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশ এর চরফ্যাশন উপজেলা শাখার সভাপতি মনির আসলামী বলেন, খেজুরের রস, রসের পিঠা ও পায়েস খাওয়ার কথা আজও ভুলতে পারি না। এখন তো আর রস চোখেও পড়ে না। সে সব শুধুই স্মৃতি। উপজেলার সচেতন মহল বলছেন অন্যান্য গাছের সাথে নির্বিচারে পরিবেশ বান্ধব খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে।

যে পরিমাণ গাছ কাটা হচ্ছে সে পরিমান লাগানো হচ্ছে না। এ ভাবে খেজুর গাছ হারিয়ে গেলে নতুন প্রজন্ম খেজুরের গাছ ও রসের ঐতিহ্যের কথা ভূলে যাবে। নতুন প্রজন্মের কথা চিন্তা করে তা সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতি জোড় দাবী জানান তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক জানান, মানুষ খেজুর গাছ যে ভাবে নিধন করছে সেভাবে রোপণ করে নাই। আর সে জন্য খেজুর রস সংকট দেখা দিয়েছে। সবার অবস্থান থেকে উদ্যোগ নিয়ে খেজুর গাছ রোপণ না করেলে কালের বিবর্তনে শহরের মত গ্রামেও খেজুর রস হারিয়ে যাবে। পরিবেশ বান্ধব ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে খেজুর গাছ সংরক্ষন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চারা রোপনের জন্য কৃষি বিভাগের পাশা পাশি তিনি সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2025 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version