আমির আলী অভয়নগর যশোর: যশোরের অভয়নগর উপজেলার শিল্প বন্দর নগরী নওয়াপাড়া থেকে সারা দেশের ইটভাটা ও বিভিন্ন কোম্পানীতে ব্যবহৃত কয়লার প্রায় ৮০ ভাগ সরবরাহ হয়ে থাকে। ইন্দোনেশিয়া, সাউথ আফ্রিকা, অষ্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এই কয়লা আমদানি করে আনা হয় এই নওয়াপাড়াতে। বড় বড় মাদার ভেসেল করে সগরের মধ্য দিয়ে নিয়ে আসা হয় এই কয়লা। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন কিংবা এর চেয়েও বেশি ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন মাদার ভেসেল বিভিন্ন দেশ থেকে চিটাগংয়ের কুতুবদিয়া, মোংলার হাড়বাড়িয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আসলে সেখান থেকে বড় বড় কার্গো জাহাজে ওই কয়লা আনা হয় নওয়াপাড়ায়। এখানে নদীপথ, রেলপথ ও সড়ক পথের যোগাযোগ থাকায় এটি বৈচিত্রময় বাণিজ্যকেন্দ্র হয়ে দেখা দিয়েছে। ৮০ দশক থেকে শুরু হয় সার, সিমেন্ট ও খাদ্যশস্য এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা। যে কারণে দেশ ছেড়ে আন্তর্জাতিক মহলে পৌছে গেছে এই নওয়াপাড়ার পরিচিতি। সেই পরিচিতি সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে নতুন করে যোগ হয় এই কয়লা সরবরাহ। গত প্রায় এক দশক যাবৎ এই নওয়াপাড়া থেকে কয়লা সারাদেশে পৌছে দেয়া হচ্ছে। প্রথম শ্রেণীর আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান নোয়াপাড়া গ্রুপ, শেখ ব্রাদার্স, উত্তরা প্রা: লি:সহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দেশ বিদেশ থেকে বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ীরা নওয়াপাড়ায় এসে কয়লা আমদানি করে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি নওয়াপাড়ায় বেশ কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এই নওয়াপাড়াকে কলংকিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে। নিজের পকেট ভারী করতে কয়লার মধ্যে পানি, ছাই, বালি ও টাইলস ফ্যাক্টরীর নিন্মমানের কয়লা সাদৃশ্য ছাই মিশিয়ে শুরু করেছে প্রতারণা। আর এতে করে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইটভাটা মালিকসহ কয়লা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলি। যে কারণে দুর্নাম ছড়াতে শুরু করেছে এই বানিজ্য নগরীর। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। এখনই এই ব্যবসায়ী মোকামকে ওই সকল অসাধু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলে হুমকিতে পড়বে এই মোকাম।
খোজ নিয়ে জানা যায়, নওয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা কয়লার ড্যাম্পিংয়ে ভেজাল মিশ্রিত কয়লা বিক্রয়ের নামে ইট ভাটা মালিকদের সাথে চলছে অভিনব প্রতারণা। কোন ভাবেই থামছেনা ছাই, বালু মিশানো করাবার।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা কয়লা ব্যবসার আড়ালে করে চলেছে নানা ধরনের অবৈধ কারবার। নওয়াপাড়ায় প্রায় ২০-৩০টি প্রতিষ্ঠান কয়লা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়লা ড্যাম্পিং করে রাখে। দেশের বিভিন্ন ইট ভাটা মালিকেরা তাদের ইট পোঁড়ানোর কাজে ব্যবহৃত কয়লা কিনতে শিল্পশহর নওয়াপাড়ার উপর নির্ভরশীল। এই সুযোগটি কাজে লাগাতে ওই অসাধু ব্যবসায়ী কয়লা বিক্রির নামে ইট ভাটা মালিকদের সাথে করছে অভিনব প্রতারণা।
সরেজমিনে দেখা যায়, রাজঘাট, চেংগুটিয়া, আলিপুর, মহাকাল, শংকরপাশা, দেয়াপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কয়লা ড্যাম্পিং এর আড়ালে কয়লার সাথে অটো রাইস মিলের ছাই, নদীর বালু, টাইলস মিলের পোঁড়া কয়লা মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে ঠকছে ক্রেতারা। একশ্রেণীর ব্যবসায়ীরা এই অবৈধ ব্যবসা করে আংগুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। এ সকল ব্যক্তিদের রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব। যে কারনে স্থানীয় জনসাধারণ ওই সব অবৈধ কারবার দেখলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেনা। এ সকল অবৈধ কারবারী সিন্ডিকেট প্রশাসনকেও ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, গত বেশ কিছুদিন পূর্বে উপজেলার, বেতার, সরদার মিল, আলীপুর, চেঙ্গুটিয়াসহ কয়েকটি স্থানে প্রধান সড়কের পাশে কয়লার ড্যাম্পে বালু ছাই মেশানোর খবর অহরহ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন অগ্রাহ্য করে কোন অভিযান পরিচালনাও করেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ইট ভাটা মালিকদের সাথে নওয়াপাড়া কয়লা ব্যবসায়ীরা যা শুরু করেছে তাতে করে অচিরেই এ অঞ্চল থেকে হারিয়ে যাবে কয়লার ব্যবসা। একদিকে অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে কয়লার সাথে ছাই মিশিয়ে লাভবান হচ্ছে, অন্যদিকে কয়লা ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অনতিবিলম্বে ওই সব অবৈধ কারবারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে মোকাম, অচিরেই শিল্প শহর নওয়াপাড়া থেকে হারিয়ে যেতে পারে এই সকল ব্যবসা।
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জানান, কয়লার সাথে এধরনের বস্তু মিশিয়ে বিক্রি করে বিষয়টি আমার জানা নেই, এ ধরনের অপরাধের খবর পেলে সাথে সাথে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।