কুষ্টিয়া প্রতিনিধি- কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খাঁ’র বিরুদ্ধে সরকারী ভিজিএফ এর ৩৭৪ কেজি চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকালে পরিষদের মেম্বর, ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন। এছাড়াও চাল আত্মসাতের তথ্য সংগ্রহ করার কারনে স্থানীয় সাংবাদিক মিজানুর রহমানের উপর হামলা ও তাঁর ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে লুটাপাট চালায় চেয়ারম্যানের দুই ছেলে ও তাঁর বাহিনী। বুধবার (১১ মে) রাত ১০ টার দিকে সাদিপুর বাজার এলাকায় এঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন আহত সাংবাদিক মিজানুর রহমান। মিজানুর দৈনিক স্বতঃকন্ঠ ও দৈনিক আজকের আলো পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি। মিজানুর লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, মিজান ব্যবসায়ীর পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে চরসাদিপুর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভিজিএফ চাল আত্মসাতের অভিযোগে তথ্য সংগ্রহ করেন তিনি। বিষয়টি টের পেয়ে বুধবার রাত ১০ টার দিকে সাদিপুর বাজার এলাকায় চেয়ারম্যানেরর দুই ছেলে উকিল ওরফে ফিরোজ (৩৪) ও নাজমুল হোসেন (৩০) এবং তাঁর সঙ্গীরা হাসুয়া, রড, কাঠের ও বাঁশের লাঠিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে মিজান নিলা ফোলা জখম হয়। এছাড়াও তাঁর বিকাশ দোকানের ড্রয়ারে থাকা নগদ ৭৫ হাজার টাকা, তথ্য সম্বলিত ১৫ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টফোন ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সিম নিয়ে যায়। আরো জানা গেছে, হামলায় সাংবাদিক মিজান আহত হলেও হাসপাতালে যেতে বাঁধা প্রদান করে চেয়ারম্যান বাহিনী। পরে গভীর রাতে পাশ্ববর্তি পাবনা জেলার পুলিশের সহযোগীতায় পাবনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন তিনি। স্থানীয় ও চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুত্রে জানা গেছে, গেল ঈদে ইউনিয়নের ৭৪৮ জনকে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাল বরাদ্দ আসে। কিন্তু অসৎ ও আত্মসাতের উদ্যেশ্যে চেয়ারম্যান প্রতিকার্ডে চাল কম প্রদান করে। এতে প্রায় ৩৭৪ কেজি অবশিষ্ট থাকে। যা সম্পূর্ণ অনিয়ম। এবিষয়ে চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং সদস্য (মেম্বর) আবু বক্কর বলেন, চেয়ারম্যান অসৎ উদ্দেশ্যে চাল ওজনে কম দিয়ে অবশিষ্ট রেখেছে। আর সেই তথ্য সংগ্রহ করার অপরাধে বুধবার রাতে সাংবাদিক মিজানের উপরের চেয়ারম্যানের দুই ছেলেসহ সন্ত্রাসী বাহিনী হামলা চালায়। ঘটনাটি চোখের সামনেই ঘটেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব আত্মসাতের উদ্দেশ্যে চাল কম দিছে জনগণকে। এর বিচার হওয়া উচিৎ। সচিব ও ট্যাগ অফিসার মিলেই একাজ করেছে। চরসাদিপুর ইউনিয়নে ভিজিএফ চাল প্রদানের ট্যাগ অফিসার ও ইউপি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন মুঠোফোনে বলেন, ঈদের আগে চাল বিতরণ করা হয়েছে। ৮ থেকে ১০ টি কার্ডের চাল বিতরণ বন্ধ ছিল। তবে চালের পরিমান কত ছিল তা সঠিক মনে নেই। চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সোহেল রানা বলেন, যাতায়াত সমস্যার কারনে নিয়মিত পরিষদে যাওয়া হয়না। চালের বিষয়টি সঠিক জানা নেই। অফিস সহকারি ভাল বলতে পারবেন। চরসাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেছের আলী খাঁ বলেন, প্রায় ৭৫০ টি কার্ড আমার। প্রতি কার্ডে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ। কিন্তু আমি ৯ থেকে সাড়ে ৯ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। সেজন্য কিছু চাল অবশিষ্ট থাকতে পারে। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলার বিষয়টি জানিনা। আহত সাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, পরিষদের গুদামে ভিজিএফ চাল অবশিষ্ট আছে এমন অভিযোগ পেয়ে তথ্য সংগ্রহ করি। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চেয়ারম্যানের দুই ছেলে সহ তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী রাতে হামলা চালায় আমার উপর। আমার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লুটপাট করেছে। তথ্য সম্বলিত ফোনটিও নিয়ে গেছে। থানায় অভিযোগ দিয়েছি। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, সাংবাদিকের উপর হামলা ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিতান কুমার মন্ডল বলেন, চাল আত্মসাত ও হামলার অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।