এ বছর দেশে সারের ভর্তুকিতে ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে সার বিষয়ক জাতীয় সমন্বয় ও পরামর্শক কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কৃষিমন্ত্রী এ তথ্য জানান।
কোভিড পরিস্থিতির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সারের মূল্য অস্বাভাবিক পরিমাণে বেড়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সারের সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে সারের ভর্তুকিতে এ বছর ব্যয় হচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা গতবছরের তুলনায় চার গুণের বেশি। বিগত ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকিতে লেগেছিল ৭ হাজার ৭১৭ কোটি টাকা।
মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। করোনা ও যুদ্ধের কারণে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেক বেড়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলেছে, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের দাম মার্চ মাসে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। সারা বিশ্বে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। কানাডার মতো উন্নত দেশ যারা খাদ্য রপ্তানি করে সেখানে মানুষ লাইনে ধরে রুটির প্যাকেট কিনছে। একজনকে দুই প্যাকেটের বেশি রুটি ও পাঁচ লিটারের বেশি ভোজ্যতেল দিচ্ছে না। পরিবারের সবাই ছেলে-মেয়ে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে রুটি-তেল কিনছে। এ অবস্থায় দেশে কৃষির উৎপাদন ও ফলন অব্যাহত রাখতে হবে। কোনক্রমেই খাদ্যের জন্য বিদেশের উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। খাদ্য নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সেলক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’
ড. রাজ্জাক আরও বলেন, এক বছরে সারে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া বিশ্বে বিরল ঘটনা। পৃথিবীর কোনো দেশে এতো ভর্তুকি দেওয়ার উদাহরণ নেই। ভর্তুকি কমাতে বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার চাপও রয়েছে। কিন্তু কৃষকদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের স্বার্থে ও খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সংস্থার আপত্তি উপেক্ষা করে ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে সারের দাম তিনগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলেও বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষক পর্যায়ে সারের মূল্য বৃদ্ধি করেনি। অব্যাহতভাবে ভর্তুকি দিয়ে সুলভমূল্যে সার সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের ধারা বজায় রেখেছে।
বর্তমানে সারের মজুদ ও চাহিদা তুলে ধরে মন্ত্রী জানান, চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে দেশে সব ধরণের সারের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সারের কোনো সংকট নেই।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপির শাসন আমলে সারসহ কৃষি উপকরণের চরম সংকট ছিল। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েও কৃষকেরা সার পায়নি। সারের জন্য কৃষকদের জীবন দিতে হয়েছিল। সারের জন্য বিএনপি সরকার ১৯৯৫ সালে ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছিল। বিপরীতে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সারের উৎপাদন ও আমদানি অব্যাহত রেখেছে। গত ১৩ বছরে সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের কোনো সংকট হয়নি।
এর আগে সভায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য মোট রাসায়নিক সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয় প্রায় ৬৭ লাখ টন। এর মধ্যে ইউরিয়া ২৬ লাখ টন, টিএসপি ৭ লাখ টন, ডিএপি ১৫ লাখ টন, এমওপি সাড়ে ৭ লাখ টন, জিপসাম সাড়ে ৫ লাখ টন, জিংক সালফেট ১ লাখ ৪১ হাজার টন এবং বাকীগুলো জিপসাম, বোরন প্রভৃতি।
এসময় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম মতিয়া চৌধুরী, জোয়াহেরুল ইসলাম এমপি, কৃষিসচিব মো: সায়েদুল ইসলাম, শিল্পসচিব জাকিয়া সুলতানা, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলাইকৃষ্ণ হাজরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দ্যা মেইল বিডি/খবর সবসময়