ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে দুই পক্ষের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। রাশিয়া তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। অপরদিকে ইউক্রেনও ঝুঁকতে রাজি নয়। ইউক্রেনে হামলার পর থেকে পশ্চিমারা রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যদিও রাশিয়া ইউক্রেনে তাদের অভিযানকে যৌক্তিক হিসেবে দাবি করে আসছে।

রাজধানী রাজধানী কিয়েভের পর সবচেয়ে বেশি শোচনীয় অবস্থা মারিউপোলের। বেশ কয়েকটি শহরের দখল নিলেও রাজধানীসহ কয়েকটি শহরের দখল নেয়নি রাশিয়া। তারা কিয়েভ ও মারিউপোল ঘিরে রেখেছে। কিয়েভসহ বিভিন্ন শহরে এখনো হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ সেনারা।

ক্ষয়ক্ষতি
ইউক্রেনে আক্রমণ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রাশিয়ার ১৫ হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের দাবি, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার শুরুর পর থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ১৫ হাজার ৬০০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে। এ ছাড়া যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনী ৫১৭টি রাশিয়ান ট্যাংক, ১ হাজার ৫৭৮টি সাঁজোয়া যান, ১০১টি যুদ্ধবিমান এবং ১২৪টি হেলিকপ্টার ধ্বংস করা হয়েছে।

তবে রাশিয়া বলছে, যুদ্ধে তাদের প্রায় ৫০০ সৈন্য নিহত এবং ইউক্রেনের আড়াই হাজারের বেশি সেনা নিহত হয়েছেন।

এ দিকে চলমান এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে ইউক্রেন ছেড়েছেন প্রায় ৩৩ লাখ মানুষ। জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ অভিযানে ইউক্রেনে ৯২৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কোটি মানুষ।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার জবাব দিচ্ছে রাশিয়া
ইউক্রেনে হামলার পর একের পর এক নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া। ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো। তবে এসব নিষেধাজ্ঞায় রাশিয়া পিছু হটবে না বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, এসব নিষেধাজ্ঞায় উল্টো পশ্চিমা দেশগুলোই বিপদে পড়বে।

‘বন্ধু নয়’ এমন দেশগুলোতে নিজস্ব মুদ্রা রুবলে গ্যাস বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাশিয়া। বুধবার এ ঘোষণা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রুশ সরকারের শীর্ষ মন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত জানান পুতিন। পুতিন বলেন, ‘পরিবর্তনগুলি শুধুমাত্র অর্থপ্রদানের মুদ্রাকে প্রভাবিত করবে, যা রাশিয়ান রুবলে পরিবর্তন করা হবে।’

সিদ্ধান্তটি কার্যকর করতে রুশ সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে বলে জানান রুশ প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া অবশ্যই পূর্বের ভলিউম এবং দাম অনুসারে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ অব্যাহত রাখবে।’

যেকোনো মূল্যে পুতিনের সাক্ষাৎ চান জেলেনস্কি
ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের পরিকল্পনা প্রত্যাহার করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে যেকোনো উপায়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সম্প্রতি তিনি জানান, যুদ্ধবিরতি, রুশ সেনা প্রত্যাহার এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তার গ্যারান্টির বিনিময়ে ন্যাটো সদস্যপদ না চাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করতে তিনি প্রস্তুত।

সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি বলেন, এটি হবে সবার জন্য একটি আপস। পশ্চিমাদের জন্য- যারা ন্যাটো সম্পর্কে আমাদের সঙ্গে কী করা হবে তা জানে না। ইউক্রেনের জন্য- যারা নিরাপত্তার গ্যারান্টি চায়। রাশিয়ার জন্য- যারা ন্যাটোর আর সম্প্রসারণ চায় না। খবর আল জাজিরার

জেলেনস্কি বলেছেন, যুদ্ধবিরতি এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের পর ক্রিমিয়া এবং রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা পূর্ব ডনবাস অঞ্চলের অবস্থা নিয়েও আলোচনা করতে প্রস্তুত কিয়েভ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোচ্ছে- বলছে রাশিয়া
ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযান পূর্বে নির্ধারিত লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা অনুসারে এগিয়ে চলেছে বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তিনি।

পেসকভ বলেন, ‘এটি (বিশেষ অভিযান) পরিকল্পনা অনুযায়ী এবং আগে থেকে যে উদ্দেশ্যগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সে অনুযায়ী কঠোরভাবে চলছে। প্রথম থেকেই এটি কয়দিন লাগবে সে বিষয়টি ভাবা হয়নি।’

এই অভিযানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে পেসকভ বলেন, এর লক্ষ্য এখনো অর্জিত হয়নি। ক্রেমলিনের মুখপাত্র যোগ করেন, ‘এখনও শেষ করার সময় আসেনি, আমরা একটি বিশেষ সামরিক অভিযানের কথা বলছি যা চলছে।’

পেসকভ বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো কয়েক দশক ধরে রাশিয়ার নিরাপত্তা উদ্বেগে কান দিচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট পুতিনের উদ্দেশ্য হল বিশ্বকে আমাদের উদ্বেগের কথা শোনা এবং বুঝতে দেওয়া।

তিনি বলেন, আমরা কয়েক দশক ধরে বিশ্বকে, প্রথমে ইউরোপে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের উদ্বেগগুলো জানানোর চেষ্টা করছি, কিন্তু কেউ আমাদের কথা শোনেনি। এটি খুব দেরি হওয়ার আগে উচিত ছিল এই সামরিক অভিযান শুরু করা।

দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েনের পর গত মাসের ২৪ তারিখ হঠাৎ করে ইউক্রেনের অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন পুতিন। এরপরই দেশটিতে অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী।

বেলারুশ সীমান্তে এ নিয়ে দফায় দফায় দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা হলেও এখনও পর্যন্ত সমঝোতায় এসে পৌঁছনো যায়নি। বরং ইউক্রেনে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের কথা মেনে নিয়েছে রাশিয়া।

তবে সব মিলিয়ে পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কির সরাসরি বৈঠক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version