দেশের বায়ুমান খুবই উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার গবেষণায় বাংলাদেশের বায়ুমান নিয়ে যেসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দুঃখজনক হলো, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরের বায়ুমানের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হচ্ছে না। বায়ুদূষণ ও বায়ু পরিশোধন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা সুইস সংস্থা আইকিউএয়ার ২০২১ সালের তথ্য নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে বাংলাদেশের নামও এসেছে।
নানামুখী দূষণের কবলে পড়ে রাজধানী ঢাকা যে বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে, তা বহুদিন ধরেই আলোচিত হচ্ছে। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো এদিকে কতটা নজর দিচ্ছে, এটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে, মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়।
আইকিউএয়ারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সবচেয়ে কম শ্বাস-প্রশ্বাসের উপযোগী বাতাস ছিল ঢাকায়। এ মহানগরী বায়ুমানের ক্ষেত্রে বিশ্বের দ্বিতীয় খারাপ শহরের তালিকায় রয়েছে। প্রতিবেদনটি ১১৭টি দেশ, ৬ হাজার ৪৭৫টি অঞ্চল এবং স্থলভিত্তিক বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে বায়ুদূষণ ডেটার ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ৪৪ শতাংশ সরকারি সংস্থাগুলো দ্বারা পরিচালিত হয়েছে।
অন্যগুলো বিজ্ঞানী ও অলাভজনক সংস্থা দ্বারা পরিচালিত। সুইস এই সংস্থার মতে, বাংলাদেশের বায়ুতে প্রাণঘাতী পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম-২.৫-এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ছিল ৭৬.৯ শতাংশ, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি। এর আগে ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০ সালে বাংলাদেশে পিএম-২.৫-এর উপস্থিতি প্রতি ঘনমিটারে ছিল যথাক্রমে ৯৭.১, ৮৩.৩ ও ৭৭.১ মাইক্রোগ্রাম। এ অবস্থায় বাতাসে যাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী কোনো উপাদান না থাকে, তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি।
বায়ুদূষণে বিপর্যস্ত জনজীবনের ছবি প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও এই দুর্ভোগের অবসান কবে হবে, এ প্রশ্নের উত্তর জানা যায় না। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের নজির দৃশ্যমান নয়। এ অবস্থায় বায়ুদূষণ ও অন্যান্য দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে দেশের মানুষ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হবে, যা বলাই বাহুল্য।
যেসব কারণে বাংলাদেশে বায়ু দূষণ এতো বেশি?
বায়ু দূষণ নিয়ে গবেষণা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম। তিনি বলছেন, গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলের দেশ হওয়ায় শীতের সময়ে হিমালয়ের পরের সব দূষণ এদিকে চলে আসে।
‘কিন্তু তার সঙ্গে যোগ হয় আমাদের নিজেদের অনেক দূষণ।’ দূষণ রোধে কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপের অভাবে বায়ু দূষণের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আসছে না বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শিল্পকারখানা গড়ে ওঠা, ঢাকার মতো বড় শহরের চারপাশে ইটভাটা, শহরের মধ্যে নানা কারখানা স্থাপন তো বায়ু দূষণের একটি কারণ।
‘সেই সঙ্গে শহরের প্রচুর ধুলা এবং নির্মাণ কাজের বায়ু দূষণ হচ্ছে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে গাড়িগুলো রাস্তায় অতিরিক্ত সময় ধরে চলছে, সেগুলো অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ করছে, এসবও বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলছেন, বায়ু দূষণের কারণে পরিবেশ অতিরিক্ত গরম হয়ে যাচ্ছে, সেই গরম ঠাণ্ডা করার জন্য মানুষ অতিরিক্ত এসি ব্যবহার করছে, আবার তাতে বায়ু দূষণ আরো বাড়ছে।