দ্যা মেইল বিডি / খবর সবসময়

; ;

দ্যা মেইল বিডি ডট কম

তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন পত্রিকা, নিবন্ধন নং- ১১

ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে নজিরবিহীন নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে রাশিয়া। এতে করে দেশটির জনজীবনে পড়েছে বড় প্রভাব। গত কয়েক সপ্তাহে বিদেশি কোম্পানিগুলো রাশিয়া ছেড়ে গেছে এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির মুদ্রার মান কমে গেছে। কিন্তু এ যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক প্রভাব শুধু রাশিয়াকে একাই সামলাতে হচ্ছে না, বরঞ্চ সমগ্র বিশ্বেই এর কম বেশি প্রভাব পড়েছে। বিজনেস রেকর্ডারের এক রিপোর্টে সেসব তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত এক মাসে সবথেকে বেশি উত্তাল অবস্থা ছিল বৈশ্বিক জ্বালানীর বাজারে। রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারক দেশ। তাই যুদ্ধ শুরুর পর দেশটির তেল সরবরাহ বাধাগ্রস্থ হবে এই আশঙ্কা থেকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানী তেলের দাম বাড়তে শুরু করে।
যা এক পর্যায়ে ১৩৯.১৩ ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। এটি ১৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষদের জীবন কঠিন হয়ে গেছে। নাগরিকদের কিছুটা স্বস্তি দিতে অনেক দেশই বিভিন্ন ছাড়ের ব্যবস্থা করেছে। এরমধ্যে সুইডেন ভ্যাট কমিয়ে দিয়েছে, হাঙ্গেরি ভর্তুকি দিচ্ছে এবং ফ্রান্স ডিস্কাউন্ট দিয়ে তেল বিক্রি করছে। তেলের পাশাপাশি গ্যাসের দামও আকাশ ছুঁয়েছে। গত ৭ই মার্চ সব রেকর্ড ভেঙ্গে গ্যাসের দাম পৌছায় ৩৪৫ ইউরোতে।

রাশিয়ার অর্থনীতি তেল ও গ্যাস রপ্তানির উপরে অনেক বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় পশ্চিমাদের এত এত নিষেধাজ্ঞা সত্বেও যুদ্ধ পরিচালনা করে যেতে পারছে দেশটি। তাই রাশিয়াকে পরাস্ত করতে বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এরইমধ্যে দেশটির তেলের উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যদিও ইইউভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার জ্বালানীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রদানে আগ্রহী নয়। জার্মানিসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশই রাশিয়ার জ্বালানীর উপরে বড় মাত্রায় নির্ভরশীল। এছাড়া নিকেল ও অ্যালুমিনিয়ামসহ রাশিয়ায় উৎপাদন হয় এমন আরও অনেক কিছুর দামও বেড়েছে।
এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এই যুদ্ধ ইউক্রেন ও রাশিয়ার বাইরেও কম্পন সৃষ্টি করবে। তিনি বিশ্বজুড়ে আসন্ন ক্ষুধা ও বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ পদ্ধতি ভেঙ্গে পড়ার বিষয়ে সাবধান করেন। রাশিয়া ও ইউক্রেনকে বলা হয় বিশ্বের রুটির ঝুড়ি। বিশ্বে যত গম উৎপন্ন হয় তার ৩০ শতাংশই আসে এই দুই দেশ থেকে। এছাড়া অন্যান্য শষ্য এবং রান্নার তেলের দামও বেড়েছে এই যুদ্ধের কারণে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা বলছে, আগামি বছর বিশ্বজুড়ে অপুষ্টিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা বাড়তে পারে ১ কোটি ৩০ লাখ পর্যন্ত। রাশিয়ার আক্রমণে ইউক্রেন থেকে খাদ্যবাহী জাহাজ ছাড়া বন্ধ হয়ে গেছে। এমন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সামনের বীজ বপনের মৌসুমে দেশটির কৃষকরা চাষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। যদিও যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও ইউরোপ এই গমের চাহিদা পূরণ করতে পারবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু সানফ্লাওয়ার তেল ও ভুট্টার ক্ষেত্রে বিষয়টি প্রায় অসম্ভব। এই দুই ক্ষেত্রেই ইউক্রেন বিশ্বের প্রথম সাড়ির রপ্তানিকারক দেশ।

যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে অর্থনীতির অন্যান্য দিকগুলোতেও। স্টক মার্কেটগুলো ২০২২ সাল শুরু করেছিল দারুণভাবে। কোভিড-১৯ মহামারির পর অর্থনীতি গত দুই বছরের ক্ষতি সামলে উঠে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতির এই সামলে ওঠার প্রক্রিয়া ধীর করে দিচ্ছে। গত তিন সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে মস্কো স্টক এক্সচেঞ্জ। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পক্ষাগাতগ্রস্থ হয়ে পড়েছে রাশিয়ার ব্যাংকিং খাত এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। দাম কমেছে রুশ মুদ্রা রুবলেরও।

এদিকে যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো রাশিয়া ছেড়ে গেছে। শত শত কোম্পানি তাদের দোকান ও অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকে স্বেচ্ছায় করেছে, অনেকে অর্থনৈতিক কারণে করেছে আবার অনেকে করেছে পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের চাপের কারণে। রাশিয়ায় এখন কোকা-কোলা ও ম্যাকডোনাল্ডসের কোনো কার্যক্রম চালু নেই। এমন অবস্থায় বিদেশি কোম্পানিগুলোকে জাতীয়করণের হুমকি দিয়েছেন পুতিন। এতে কিছু কোম্পানি এখনো রাশিয়ায় রয়ে গেছে। তারা অবশ্য বলছে, স্থানীয় কর্মী ও মানুষের কথা চিন্তা করে তারা ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে।
আইএমএফ জানিয়েছে, যুদ্ধের কারণে ২০২২ সালে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ৪.৪ শতাংশ কম হবে। আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক এবং ইউরোপীয় ব্যাংক এক যৌধ বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই যুদ্ধের প্রভাব পড়বে সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতেই। প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যাবে, বাণিজ্য বাধাগ্রস্থ হবে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়বে। সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দরিদ্র ও অধিক ঝুকিপূর্ণরা। ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন এন্ড ডেভেলপমেন্ট বা ইবিআরডি’র প্রধান অর্থনীতিবিদ এ নিয়ে বলেন, যুদ্ধ যদি আজকে থেমে যায়, তারপরেও আগামি কয়েক মাস পর্যন্ত এর প্রভাব রয়ে যাবে। আর দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির মধ্য দিয়েই সে প্রভাব অনুভব করবে বিশ্ব।

Share.
Leave A Reply

মোঃ আব্দুল আওাল হিমেল
প্রকাশক ও সম্পাদক 
দ্যা মেইল বিডি ডট কম
মোবাইল: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
ইমেইল: themailbdnews@gmail.com
ঠিকানা: ১০২/ক, রোড নং-০৪, পিসি কালচার হাউজিং সোসাইটি, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭

নিউজরুম: +৮৮০ ১৩১৪-৫২৪৭৪৯
জরুরী প্রয়োজন অথবা টেকনিক্যাল সমস্যা: +৮৮০ ১৮৩৩-৩৭৫১৩৩

© 2024 Themailbd.com. Designed and developed by Saizul Amin.
Exit mobile version