ভারতের ‘দুর্ঘটনাজনিত’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রতিশোধ নিতে পাকিস্তানও প্রস্তুতি নিয়েছিল। জবাবে তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়লে পারমাণবিক অস্ত্রধর এই দুই দেশের মধ্যে বড় রকমের যুদ্ধ শুরু হওয়ার এক বড় আশঙ্কা ছিল। ৯ই মার্চ ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার একদিন পর ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং পার্লামেন্টে ব্যাখ্যা করেন কিভাবে দুর্ঘটনাক্রমে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল এবং তা পাকিস্তানে আঘাত করেছে। ঠিক সেইদিনই ব্লুমবার্গ রিপোর্ট করেছে, একই রকম ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে পাল্টা হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু তারা ট্রিগার থেকে হাত সরিয়ে নেয়। কারণ প্রাথমিক বিশ্লেষণে তারা দেখতে পায় কিছু একটা ভুল হয়েছে। অজ্ঞাত সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে ব্লুমবার্গ। তাদের রিপোর্টে বলা হয়েছে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লি থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে হরিয়ানা রাজ্যের আম্বালা থেকে মধ্যম পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্রহ্ম উৎক্ষেপণ করে ভারতীয় বিমান বাহিনী।
এই ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানে গিয়ে পড়ে আবাসিক এলাকায়। এতে সেখানে আবাসিক সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে কেউ হতাহত হয়নি। ব্লুমবার্গ বলেছে, দুই দেশের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারদের মধ্যে যে শত্রুতামূলক মনোভাব থাকে, এক্ষেত্রে ভারত সরাসরি সেই মনোভাব দেখায়নি। তারা পাকিস্তানকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেছে। একই সঙ্গে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন, যাতে আর কোনো ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া না হয়। ব্লুমবার্গের এই রিপোর্টের বিষয়ে এনডিটিভির কাছে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত সপ্তাহে পাকিস্তান বিমান বাহিনী বলেছে, হরিয়ানার সিরসা থেকে ওই ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট পথ তারা সনাক্ত করেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মিয়া চান্নু শহরে পতিত হয়। গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য দিয়েছেন সেনা মুখপাত্র মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার। ভারত সরকারের দাবি, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ওই ক্ষেপণাস্ত্রটি ভুল পথে গিয়েছে। ঘটনার পর পার্লামেন্টে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, ক্ষেপণাস্ত্র অপারেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং ইন্সপেকশনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর পর্যালোচনা করছে সরকার। তিনি আরও বলেন, নিজেদের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থায় নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারত। একই সঙ্গে তদন্তে যেসব ঘাটতির বিষয় প্রকাশিত হবে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ওদিকে পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি মঙ্গলবার বলেছেন, যদি পাকিস্তানের বিমানবাহিনী এ বিষয়টি ভারতের দিক থেকে না দেখতো, যদি তারা এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে না দেখতো, তাহলে এর পরিণাম হতে পারতো অত্যন্ত গুরুত্বর। তবু তিনি এ বিষয়টিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তুলেছেন। সেখানে চিঠি লিখে এ বিষয়ে ভারতকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে ভারত এই ‘দুর্ঘটনা’ দুই দেশের সমন্বয়ে যৌথভাবে তদন্ত করে। বিষয়টি ‘দুর্ঘটনার’ পর্যায়ে থাকলেও ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। ভারত যে ব্যাখ্যা দাঁড় করেছে তাতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। ভারত বলেছে, তারা আভ্যন্তরীণভাবে কোর্ট অব ইনকোয়ারির মাধ্যমে এর তদন্ত করছে। কিন্তু বিষয়টি যেহেতু দুই দেশের বিষয়, তাই ভারতের এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। তারা যৌথ তদন্তের দাবি তুলেছে।
এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, এটি ভারতের জন্য একটি দুর্ঘটনা ছাড়া অন্য কিছু ছিল, এমন ইঙ্গিত তারা পাননি। উল্লেখ্য, ২০১৯ সাল থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ঐতিহাসিক নি¤œ পর্যায়ে রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় তখন বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য নিহত হন। এর জবাবে পাকিস্তানের বালাকোটে আকাশপথে হামলা চালায় ভারত।